কলকাতা, 29 জুন : উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে ফি মকুবের দাবিতে চলছে বিক্ষোভ, ব্যতিক্রম হল না আজও। কোথাও টিউশন ফি ছাড়া অন্য অব্যবহৃত পরিষেবার ফি মকুবের, আবার কোথাও বার্ষিক ফি ও টিউশন ফি 30 শতাংশ কমানোর বিক্ষোভের দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকরা। লাগাতার বিক্ষোভে দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুল কিছুটা ফি মকুবে রাজি হলেও বাকি স্কুলগুলির দরজা বন্ধই থাকল অভিভাবকদের জন্য।
আজ সকাল থেকে বাঁশদ্রোণীর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস রোডের একটি বেসরকারি স্কুলের সামনে জমায়েত করেন অভিভাবকরা । এর আগেও তাঁরা স্কুলের সামনে ও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। সেদিন স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনও সদুত্তর না মিললেও আজ খালি হাতে ফিরতে হয়নি অভিভাবকদের। ওই স্কুলের অভিভাবকদের দাবি ছিল, বার্ষিক ফি তথা রি-অ্যাডমিশন ফি ও টিউশন ফি-সহ অন্য খাতের ফি মিলিয়ে মাসিক যে পরিমাণ অর্থ নেওয়া হয় তার 50 শতাংশ মকুব করতে হবে। পুরো দাবি না মেনে নিলেও আজ অভিভাবকদের দাবি কিছুটা মেনে নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব মেনে নিয়ে এই বছরের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন ওই স্কুলের অভিভাবকরা।
বিক্ষোভে সামিল বাঁশদ্রোণীর ওই বেসরকারি স্কুলের অভিভাবক অংশুমান রায় বলেন, "আন্দোলনের চাপে আজ স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে । আমরা 50 শতাংশ বার্ষিক ফি মকুবের দাবি জানিয়েছিলাম। প্রথমে স্কুল কর্তৃপক্ষ 15 শতাংশ মকুব করেছিল । আমরা তা মেনে নিইনি। আজ আন্দোলনের চাপে 35 শতাংশ মকুব করেছেন। আমরা তাতে সহমত হয়েছি । এই ছাড়া, মাসিক ফি 600 টাকা কম করেছেন । পাশাপাশি, এপ্রিল ও মে মাসের মাসিক ফি এবং বার্ষিক ফি ছয়টি ইন্সটলমেন্টে দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।"
অন্যদিকে, টানা তিনদিন ধরে বেনিয়াপুকুরের দরগা রোডের একটি নামী বেসরকারি স্কুলের সামনে অভিভাবকরা বিক্ষোভ দেখান । তাঁদের দাবি, টিউশন ফি ছাড়া অন্য যে সকল পরিষেবা বর্তমানে পড়ুয়ারা ব্যবহার করছে না, সেইসব খাতের ফি মকুব করা হোক। কিন্তু, আজও স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনায় বসতে রাজি হয়নি বলে অভিযোগ অভিভাবকদের । ওই স্কুলের এক অভিভাবক বিবেক সিংঘি বলেন, "আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই স্কুলের সামনে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম, যাতে স্কুলের প্রিন্সিপাল আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু আজও প্রিন্সিপাল কোনও কথা বলেননি। আমরা বিগত তিনদিন ধরে স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছি । এতদিন স্কুলের তরফ থেকে ফি বাবদ যা চাওয়া হয়েছে, তাই দিয়েছি । এখন আমাদের অসুবিধা হচ্ছে । সেই দিকটি বিবেচনা করে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার মতো টাকা আমাদের থেকে নিন । কিন্তু, যে পরিষেবা ব্যবহার করা হচ্ছে না, যেমন বাস, কম্পিউটার, ল্যাব, ক্যারাটের মতো 12-13 রকম খাতে যে টাকা নেওয়া হয়, তার পরিষেবা বর্তমানে পড়ুয়ারা ব্যবহারই করছে না। আমরা স্কুলকে এই বিষয়ে বহুবার মেল করেছি। একটা মেলের জবাবও দেওয়া হয়নি স্কুলের তরফ থেকে । সবথেকে বড় কথা, বিভিন্ন খাতে যে টাকা নেওয়া হয়, তার হিসেব দেখাক কর্তৃপক্ষ, কিন্তু সেটাও দিচ্ছে না স্কুল ।" যতদিন তাদের দাবি মানা হবে না, ততদিন এভাবেই স্কুলের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাবেন বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
এদিন সকাল ন'টা থেকে আড়িয়াদহের একটি নামী বেসরকারি স্কুলের প্রায় 40 জন অভিভাবক স্কুলের সামনে জমায়েত করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিক্ষোভ দেখান । দাবি নিয়ে এক অভিভাবক প্রদীপ রাজবংশী বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যেকেই কোনও না কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত । অথচ স্কুল থেকে আমাদের বারবার ফোন করে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে টাকা কবে দেবেন ? একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য, সেখানে যারা যারা ফি দেয়নি তাদের তালিকা দেওয়া হত । আমরা স্কুলের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম, অন্তত এই সময়ে ফি যাতে 50 শতাংশ মুকুব করা হয়। আমাদের টিউশন ফি-র নামে সব ধরনের ফি নেওয়া হয় । মাসিক 1700 টাকা খরচের কোনও ভাগ করে নেওয়া হয় না । আমরা বলেছিলাম 50 শতাংশ ফি আমরা দেব যাতে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা ও কর্মচারীরা কোনও সমস্যায় না পড়েন। আজকে আমরা স্কুলের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখাই। স্কুল কর্তৃপক্ষকে বারবার আবেদন জানিয়েছি, আমাদের দাবির যাতে মান্যতা দেন। আমরা স্কুলের ভিতরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, স্কুল ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। নিরাপত্তারক্ষীরা আমাদের বলেন, স্কুলে কেউ নেই। ভিতরে গিয়ে কার সঙ্গে কথা বলবেন?"