দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে পিএইচডি'তে সফল অন্ধ্রের সাকে ভারতী অনন্তপুর (অন্ধ্রপ্রদেশ), 22 জুলাই: কথায় আছে পরিশ্রমের কোনও বিকল্প হয় না ৷ লক্ষ্য স্থির থাকলে চলার পথের যাবতীয় কঠিন বাধা-বিঘ্ন সরিয়ে ইচ্ছেপূরণও সম্ভব হয় ৷ বাস্তব হয়ে ধরা দেয় স্বপ্ন ৷ কঠিন, পাথুরে পথ ডিঙিয়েই মেলে সাফল্যের সোপান ৷ সবাই হয়তো কঠিন পরিস্থিতি সামলে এই সাফল্যের জয়গাথা লিখতে পারেন না ৷ কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে, প্রতিকূলতার চোখে চোখ রেখে যাঁরা লড়াই চালিয়ে যান জয়ী হন তাঁরাই ৷ আর উদাহরণ স্বরূপ তাঁরাই স্বীকৃতি পান সমাজের এক অনুপ্রেরণা রূপে ৷ এরকমই এক ব্যক্তিত্ব হলেন সাকে ভারতী ৷
অন্ধ্রপ্রদেশের নাগুলাগুডামের সিঙ্গানামালা মণ্ডলের বাসিন্দা সাকে ঘুঁটে বানান পেট চালাতে ৷ আর দিন মজুরের সেই কাজ করতে করতেই যাবতীয় সামাজিক ও আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে তাঁর পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন এই মহিলা ৷ এখন তাঁর সামনে অধ্যাপক হওয়ার সুযোগ, সঙ্গে তৃপ্তি স্বপ্ন পূরণের ৷ সাকে ভারতী জানিয়েছেন, তিনি বরাবরই চাইতেন উচ্চশিক্ষা অর্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে, নিজের মতো করে সকলকে দিশা দেখাতে ৷ তবে তাঁর এই স্বপ্নপূরণের সাকেকে সামলাতে হয়েছে পর্বত সমান একের পর এক প্রতিকূলতা ৷ দারিদ্রতা, সংসারের চাপ ও একজন দিন আনি দিন খাই শ্রমিক হিসেবে কঠিন পরিশ্রম ৷ এই তিন পরিস্থিতিকে সামলেই এগিয়েছেন এই মহিলা ৷ শ্রী কৃষ্ণদেবারায়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেছেন রসায়নে পিএইডি ৷ বাইনারি লিক্যুইড মিক্সচার-এই বিষয়ে গবেষণা করে ডক্টরেট সম্মান পেয়েছেন তিনি ৷
আরও পড়ুন: উনিতো বাবার মতো, বৃদ্ধকে নতুন জুতো কিনে পরালেন কনস্টেবল; ভাইরাল ভিডিয়ো
তাঁর সাফল্য ও লড়াইয়ের এই দীর্ঘ যাত্রাপথ বর্ণনা করতে গিয়ে সাকে ভারতী বলেন, "নাগুলাগুডামের গ্রামে এক গরিব পরিবারে বিয়ে হয় আমার ৷ সংসার সামলে দিনমজুর হিসেবে কাজের পাশাপাশি আমি পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছি ৷ আমার ইচ্ছে ছিল পিআইচডি করে একজন অধ্যাপিকা হওয়ার ৷ আমার স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় আমি পিএইচডি শেষ করতে পেরেছি ৷ রাজ্যপালের কাছ থেকে আমি পিএইচডি ডিগ্রি ও ডক্টরেট উপাধি পেয়েছি ৷"
আরও পড়ুন: ভবন তৈরি করুন ও শিক্ষক পাঠান, 100 কিলোমিটার হেঁটে কালেক্টরের কাছে পড়ুয়ারা
তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে সংসার ও বাইরের যাবতীয় দায়িত্ব সামলে দিনরাত এক করে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়ছেন সাকে ভারতী ৷ তিনি জানিয়েছেন, তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনিই বড় সবার থেকে ৷ ফলে ছোটবেলা থেকেই মায়ের সঙ্গে কাজে যোগ দিতে হত তাঁকে ৷ তার মাঝেই চলে পড়াশোনা ৷ দশম শ্রেণিতে তিনি স্কুলের কৃতীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম ৷ এরপর তাঁর বিয়ে হয়ে যায় ৷ তবে আর্থিক অবস্থা ভালো না-হওয়ায় দিনমজুর হিসেবে বিয়ের পরেও তাঁকে কাজ করতে হয় ৷ তবে পড়া ছাড়েননি সাকে ভারতী ৷
এইভাবেই ক্রমে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন অনন্তপুরের এসএসবিএন কলেজ থেকে ৷ একদিন কাজ পরেরদিন কলেজ, এইভাবেই চলতে থাকে তাঁর যাত্রাপথ ৷ কলেজ কর্তৃপক্ষই তাঁকে একসময় পিএইচডি করার প্রস্তাব দেয়, কিন্তু আর্থিক কারণে তখন তা সম্ভব হয়নি ৷ পরে গোবরের তলায় চাপা পড়ে থাকা এক খবরের কাগজে পিএইডি গবেষণার একটি বিজ্ঞাপন তাঁকে ফের স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যায় ৷ আর সেই সূত্রেই তিনি আজ ডক্টরেট সাকে ভারতী ৷ যিনি অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁর অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্নপূরণের ৷