মথুরাপুর, 20 অগস্ট : কোভিশিল্ড নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে ভারত সরকারের পুরস্কার পাচ্ছেন বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে শুভাশিস নাটুয়া । আগামী 10 ও 11 সেপ্টেম্বর কোয়েম্বাটোরে আয়োজিত হবে 'ইন্টারন্যাশনাল সায়েনটিস্ট অ্যাওয়ার্ডস অন ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিন' (International Scientist Awards on Engineering Science and Medicine) স্বীকৃতি প্রদান অনুষ্ঠান । সেখানে তাঁকে পুরস্কৃত করা হবে ।
শুভাশিসের শৈশব
মথুরাপুরের দরিদ্র পরিবারে জন্ম শুভাশিস নাটুয়ার । বাবা ব্রজেন্দ্রনাথ নাটুয়া কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত । মা-ও সাধারণ গৃহবধূ । ব্রজেনবাবুর দুই ছেলে দেবাশিস ও শুভাশিস । ছোট থেকে অভাবের সংসারে বড় হয়েছেন শুভাশিস । এমনকি সংসার চালাতে একসময় তাঁকে সবজি বিক্রি করতে হয়েছে । বরাবরই পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন মথুরাপুরের এই যুবক । স্বপ্ন দেখতেন বিজ্ঞানী হওয়ার । কিন্তু সংসারের আর্থিক অনটন অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ।সেই সময় কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের প্রধানশিক্ষক চন্দন মাইতি ও সহ-শিক্ষকরা সবরকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন স্কুলের এই দুঃস্থ মেধাবী ছাত্রের দিকে । স্কুলের তরফ থেকে বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয় । আর সেইমতো, 2012-য় উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে 'ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার'-এ (Indian Institutes of Science Education and Research Centre, IISER) ভর্তি হন শুভাশিস । এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে ।
কোভিশিল্ড নিয়ে গবেষণা করার ডাক পেয়েছিলেন শুভাশিস নাটুয়া, এবার পুরস্কারের পালা তাঁর গবেষণা
একের পর এক গবেষণা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি । ক্যানসারের কোষ নিয়ে গবেষণা করছেন শুভাশিস । করোনা অতিমারিতে যখন গোটা বিশ্ব জেরবার, তখন ভ্যাকসিন তৈরিতে এগিয়ে আসেন বাংলার ছেলে শুভাশিস নাটুয়া । করোনা ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড তৈরির গবেষণায় ডাকা হয় শুভাশিসকে । সেখানেই 'কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন ডায়াগনস্টিক ডেভেলপমেন্ট'-এর (Covishield Vaccine Diagnostic Development) কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বাংলার এই গবেষক । করোনার প্রথম ঢেউয়ে যখন ভারত তথা গোটা বিশ্ব জেরবার, সেই সময় ভোপালের আইআইএসইআর গবেষণা কেন্দ্র (Indian Institutes of Science Education and Research Centre, IISER) থেকে একটি 15 জনের বিজ্ঞানী দল গঠন করা হয় । একজন আরএনএ (RNA) বিশেষজ্ঞ হিসেবে ওই দলে কাজের সুযোগ পান শুভাশিস । করোনা ভাইরাসের বিভিন্ন স্ট্রেনের জেনেরিক গঠন ও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণের হারের পার্থক্য নিয়ে গবেষণা করেন তিনি । সেই কাজের জন্য এবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে স্বীকৃতি পাচ্ছেন মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্র শুভাশিস নাটুয়া ।
আরও পড়ুন : WHO on fake Covishield : ভারত ও আফ্রিকায় ভুয়ো কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন ! সতর্কবার্তা হু-র
বিদেশ থেকে গবেষক শুভাশিস বললেন, "বাংলার অভিভাবকরা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শুধুমাত্র মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দিকে বাধ্যতামূলক ভাবে ঠেলে না দিয়ে, তাদের গবেষণার দিকে উদ্বুদ্ধ করুন । যাঁদের প্রকৃতপক্ষে মেধা আছে, তাঁরা বেসিক সায়েন্সে আসুন, রিসার্চ করুন । কারণ রিসার্চ ছাড়া ডাক্তারদের হাতে কোনও রিসোর্স থাকবে না । ফলে এ ধরনের অজানা ভাইরাসকে মোকাবিলা করা, দুষ্কর হয়ে পড়বে ।"
ভারত সরকারের থেকে এই স্বীকৃতি পাওয়ায় তাঁর পরিবারের পাশাপাশি খুশি, গর্বিত শুভাশিসের স্কুলও । শুভাশিস একাধিকবার বিদেশে গিয়েছেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও গবেষণা করেছেন । বর্তমানে তিনি আমেরিকায় রয়েছেন । ঘরের ছেলের এই স্বীকৃতিতে আনন্দিত মথুরাপুরবাসী । কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বললেন, "আমাদের সুন্দরবনের পিছিয়ে পড়া এলাকা থেকে উঠে আসা দরিদ্র বাড়ির এই মেধাবী ছাত্রটির জন্য আমরা আজ গর্বিত । আমাদের স্কুলে পড়ার সময় অত্যন্ত পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান ছাত্র হিসেবেই আমরা শুভাশিসকে দেখেছি । নানাভাবে স্কুলের তরফ থেকে তাঁর পাশে থাকার চেষ্টা করা হয়েছে । করোনার মতো মারণব্যাধিতে তাঁর এই ভূমিকায় উপকৃত হবেন দেশ তথা বিশ্বের বহু মানুষ । মানুষের সেবায় নিজের শিক্ষাকে কাজে লাগাক । ও আরও উন্নতি করুক, এগিয়ে যাক সেই আশা করব ।"