সমস্যা : আমার বাবার বয়স ৫৭ । তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল । আমরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাই । সেখানে বাবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর চিকিৎসক জানালেন, ফুসফুসে রক্ত জমাট বেঁধেছে । কিন্তু কেন এমনটা হল ? এই সমস্যার সমাধানই বা কী ? এমন সমস্যা এড়াতে কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত? যদি দয়া করে বিস্তারিত বলেন ।
সমাধান : আপনার বাবার যে সমস্যা হয়েছে তাঁকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় পালমোনারি থ্রম্বএমবোলিজম বা সংক্ষেপে PE । এই রোগে ফুসফুসে সমস্যা হয় এবং রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়, কিন্তু আদতে রোগটা শুরু হয় রোগীর পায়ের শিরায় । মানুষের শরীরে রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি এমন যে, সারা শরীর থেকে দূষিত রক্ত শিরার মাধ্যমে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রে পৌঁছায় । সেই দূষিত রক্ত প্রথমে ফুসফুস থেকে অক্সিজেন নেয়, তারপর সেখান থেকে হৃদযন্ত্রে পৌঁছায় । তারপর হৃদযন্ত্র থেকে সারা শরীরে ধমনীর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বিশুদ্ধ রক্ত । আজীবন মানুষের শরীরে এই প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে । কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে পায়ের ও উরুর পেশীর শিরায় রক্ত জমাট (ক্লট) বেঁধে যায় । এর জেরে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়, শিরার দেওয়ালে চাপ বাড়ে এবং রক্ত স্বাভাবিকের তুলনায় ঘন হয়ে পড়ে । অফিসে বা অন্যত্র কাজ করার ক্ষেত্রে যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ারে বসে থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । যাঁদের পায়ের শিরায় এভাবে রক্ত জমাট বাঁধে, তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রে এই জমাট রক্তপিণ্ড শিরা বেয়ে ফুসফুসে পৌঁছায় । এর জেরে ফুসফুসের কাজ করতে সমস্যা হয় । ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় দূষিত রক্ত ফুসফুসে যাওয়ার পর পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না । আর এভাবে রক্তে যেহেতু পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব ঘটে, তাই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় । পাশাপাশি রোগী বুকে ব্যথা অনুভব করেন ।
এই ধরণের সমস্যায় রোগীর D-Dimer পরীক্ষা করা হয় । এই পরীক্ষায় চিকিৎসক নিশ্চিতভাবে জানতে পারেন রোগীর ফুসফুসে রক্ত জমাট বেঁধেছে কি না। যদি পরীক্ষায় বিষয়টি ধরা পড়ে, সেক্ষেত্রে রোগীকে স্যালাইনের মাধ্যমে হেপারিন (পোরসিন) ওষুধ দীর্ঘক্ষণ ধরে দেওয়া হয় । ওই ওষুধটি ফুসফুসে জমাট রক্ত দূর করতে সাহায্য করে । এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে হেপারিন ইঞ্জেকশনও রোগীকে দেওয়া হয় যা ২৪ ঘণ্টা কাজ করে । রোগীর প্রাথমিক বিপদ কেটে যাওয়ার পর তাঁকে হেপারিন ট্যাবলেট দেওয়া হয় । এই ওষুধ সাধারণত ছয় মাসের জন্য দেওয়া হয়। ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ফের যাতে এই সমস্যা না হয় সেদিকেও রোগীকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয় । তবে অনেক ক্ষেত্রে ওষুধে কাজ হয় না । সেক্ষেত্রে রোগীর অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি করা প্রয়োজন ।