হায়দরাবাদ, 10 এপ্রিল: অন্ধ্রপ্রদেশের নেলোরে আটকে পড়া ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে লকডাউনের মধ্যেই স্কুটিতে 1400 কিমি পথ পাড়ি দিলেন তেলাঙ্গানার এক মহিলা । তাঁর নাম রাজিয়া বেগম (48) । স্থানীয় থানার অনুমতি নিয়ে চলতি সপ্তাহের সোমবার সকালে তিনি যাত্রা শুরু করেন । একাই বেরিয়ে পড়েন নিজের স্কুটি নিয়ে । বুধবার বিকেলে নেলোর থেকে ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসেন তিনি । তবে স্কুটিতে 1400 কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার কাজটা মোটেও সহজ ছিল না ।
রাজিয়া বেগম জানিয়েছেন, "হ্যাঁ, একজন মহিলার পক্ষে এইরকমভাবে স্কুটি চালিয়ে এতটা পথ অতিক্রম করা সত্যিই কঠিন । কিন্তু সবার আগে ছেলেকে ফিরিয়ে আনতেই হবে । এই চিন্তা থেকেই আমার সব ভয় কেটে গিয়েছিল । আমি পথে খাওয়ার জন্য রুটি প্যাক করে নিয়েছিলাম । রাতে জনশূন্য ও ট্রাফিকবিহীন পথে ভয় যে একেবারেই লাগেনি তা বলব না ।"
হায়দরাবাদ থেকে 200 কিলোমিটার দূরে নিজ়ামাবাদের একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাজিয়া । 15 বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন । দুই ছেলের সঙ্গে থাকেন । 19 বছর বয়সি তাঁর ছোটো ছেলে নিজ়ামউদ্দিন ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক । ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর । বর্তমানে তিনি ইন্টারমিডিয়েট সম্পূর্ণ করেছেন । MBBS-এর প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য কোচিংয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন । গত 12 মার্চ বন্ধুকে পৌঁছতে নেলোরের রহমাতাবাদে যান নিজ়ামউদ্দিন এবং সেখানে কিছু দিন থাকার সিদ্ধান্ত নেন । এর কিছুদিনের মধ্যেই দেশে লকডাউন জারি হয়ে যাওয়ায় কারণে কোনওভাবেই সেখান থেকে ফিরতে পারছিলেন না তিনি । এরপরেই ছেলেকে নিজেই স্কুটিতে করে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন রাজিয়া ।
লকডাউনের কারণে এই সময় পুলিশ রাস্তায় বেরোনো নিয়ে ধরপাকড় করছে । তাই নিজ়ামউদ্দিনকে ফিরিয়ে আনতে বড় ছেলেকে পাঠাননি রাজিয়া। কোনওভাবে তিনিও ফেঁসে যেতে পারেন । অথবা অকারণে রাস্তায় বেরিয়েছেন এই সন্দেহে পুলিশ তাঁকে আটক করতে পারে । এই আশঙ্কা থেকেই তাঁকে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি । প্রথমে একটি গাড়ি নিয়ে ছেলেকে ফিরিয়ে আনার কথাও মাথায় আসে তাঁর । পরে স্কুটিতে করেই ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন । 6 এপ্রিল যাত্রা শুরু করেন রাজিয়া । পরের দিন অর্থাৎ 7 এপ্রিল দুপুরে নেলোরে পৌঁছান । ওই দিন সেখান থেকে তাঁর ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন । 8 এপ্রিল বিকেলে বোধানে ফিরে আসেন । রাজিয়া জানিয়েছেন, "শুধু কয়েকবার কয়েকটি পেট্রল পাম্পে থামতে হয়েছিল। এছাড়া কয়েকবার তেষ্টা মেটাতে দু'এক জায়গায় থেমেছিলাম ।"