আলওয়ার, 2 মার্চ : জীবনে জটিলতা থাকবে ৷ মুখোমুখি হতে হবে প্রতিবন্ধকতারও ৷ হার না মেনে নিজের লক্ষ্যে টিকে থাকলে পরিশ্রমের ফল পাওয়া যাবেই ৷ তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত ঊষা চৌমার ৷ ঊষা বললেন, নরক ও স্বর্গ তিনি দুটোই দেখেছেন ৷ প্রথমে নরক, পরে স্বর্গ ৷ তবে স্বর্গ পাওয়ার পর একা তার স্বাদ উপভোগ করেননি ৷ আরও অনেকের জীবন বদলে দিয়েছেন ৷ তাও নয় নয় করে, 150 জন মহিলার ৷ একসময়ের সাফাইকর্মী ঊষার কাজে তাই খুশি হয়ে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী দিয়েছে ৷
ঊষা চৌমার আলওয়ারকে গর্বিত করেছেন এবং গোটা দেশের কাছে এই জায়গাটিকে বিখ্যাত করে দিয়েছেন ৷ ঊষা জানিয়েছেন, তিনি এই জন্মে দুই ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন ৷ সমস্ত মহিলাদের প্রতি তাই তাঁর বার্তা, সমস্যা ও কঠিন পরিস্থিতি থেকে তাঁরা যেন পালিয়ে না যান ৷ বরং, এর মুখোমুখি হোন ৷
সাফাইকর্মী থেকে পদ্মশ্রী প্রাপ্তি, কেমন ছিল ঊষার যাত্রাপথ ? 2003 সালে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল ।
তিনি মাত্র সাত বছর বয়স থেকে জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ শুরু করেন ৷ মাত্র 14 বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়ে যায় ৷ কিন্তু তার পরও তিনি তাঁর জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ চালিয়ে যান ৷ ঊষা জানান, 2003 সালে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায় ৷ তাতে শুধু তাঁর জীবনই বদলে যায়নি ৷ বরং আরও 150 মহিলার জীবনেই পরিবর্তন আসে ৷ তাঁরা মূলধারার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যান ৷
জীবনে নরকযন্ত্রণা সহ্য করেছি : ঊষা
যখন ঊষা 2003 সালের আগে তাঁর জীবনের কথা বলেন তখন তিনি জানান যে, সেই সময় অন্য জঞ্জাল সাফাইকারীর মতো তাঁর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করা হত ৷ মানুষ তাঁকে অস্পৃশ্য বলে মনে করত ৷ তাঁকে কাছে বসতেও দিত না ৷ আর যখন টাকা দেওয়ার সময় আসত তখন তা ছুড়ে দিয়ে দিত ৷ যখন তিনি তৃষ্ণার্ত হতেন তখন তাঁকে দূর থেকে আলগোছে জল খেতে হত ৷ তাঁকে মন্দিরেও ঢুকতে দেওয়া হত না ৷ সেই সময় তাঁর মনে হত, তাঁকে কি এই কাজ সারাজীবন ধরে করে যেতে হবে ? তিনি কি এই শুধু এই কাজ করার জন্মগ্রহণ করেছেন ?
তাঁর জীবনে পরিবর্তন
এখন তিনি যোগ দিয়েছেন "সুলভ আন্তর্জাতিক সমাজসেবা" নামক একটি সংস্থায় ৷ সেখানে তিনি হস্তশিল্পের কাজ করে ৷ হাতে তৈরি সেই জিনিস তিনি মানুষের মধ্যে বিতরণও করেন ৷ এভাবেই তিনি নতুন জীবন পেয়েছেন ৷ আর এখন তাঁর আয়ের উপর নির্ভর করেই তাঁর সংসার চলে ৷
মহিলাদের সাহসের সঙ্গে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া উচিত : ঊষা
ঊষা চাউমার এই সমাজের সমস্ত মহিলাদের প্রতি স্পষ্টভাষায় একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন ৷ তাঁর কথায়, এই সমাজে মহিলাদের খারাপ চোখে দেখা হয় ৷ এই ধরনের পরিস্থিতিতে একজন মহিলাকে সমাজের সঙ্গে পালটা লড়াই করতে হবে ৷ তিনি জানান, ভয় পাওয়ার পরিবর্তে মহিলাদের যে কোনও কঠিন পরিস্থিতিতে সাহসের সঙ্গে লড়াই করতে হবে ৷