অবসরের পরিকল্পনা বা প্রস্তুতির নিরিখে বিচার করা হলে ভারত সবসময়ই ব্যতিক্রমী ভূমিকা পালন করেছে। যেখানে বেশিরভাগ ভারতীয়ই চান তাড়াতাড়ি কাজ থেকে অবসর নিয়ে জীবনের সেইসব লক্ষ্যপূরণ করতে, যা তাঁদের মনের খুব কাছের অথবা চান মানবহিতৈষী কাজকর্মে যুক্ত থাকতে। অবসরের পর সেইসব লক্ষ্যপূরণের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সমসয়ই সমস্যা দেখা দেয়, ফাঁক তৈরি হয় ।
আর মহিলাদের ক্ষেত্রে তো এই প্রবণতা আরও বেশি, বিশেষ করে কর্মরত মহিলাদের ক্ষেত্রে । বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হয়েছে, অবসরগ্রহণের ক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষদের তুলনায় অনেকটাই কম আর্থিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে এবং অবসরের পর কী কী প্রয়োজন, তা নির্ধারণে মহিলারা একেবারেই পূর্বপ্রস্তুত নন । কেন মহিলাদের অবসর গ্রহণ সংক্রান্ত জীবনের লক্ষ্যপূরণের জন্য আরও বেশি পরিকল্পন করা উচিত, তা নিয়ে আমার মতামত জানাচ্ছি ।
অর্থনৈতিক ব্যবধান
দু'টি বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তির মধ্যে বেতন বৈষম্য বাস্তব সমস্যা আর এর অর্থ এই যে মহিলারা পুরুষদের তুলনায় কম অর্থ সরিয়ে রাখতে পারে অর্থাৎ সঞ্চয় করতে পারে ।
লিঙ্গভেদে বেতনের ফারাক ছাড়াও মহিলাদের এই প্রবণতা থাকে যে তাঁরা কাজ থেকে বিরতি নিয়ে, সময় বের করে তা নিজেদের বয়োঃজেষ্ঠ আত্মীয়স্বজন কিংবা সন্তানের যত্নে ব্যয় করে। যদিও এখন পুরুষদের মধ্যেও এই ভূমিকা পালন করার প্রবণতা বাড়ছে, তবু আমাদের দেশে প্রাথমিকভাবে এই কাজে মহিলাদেরই প্রাধান্য বেশি ।
কর্মজীবন থেকে এই ধরনের বিরতি গ্রহণ মহিলাদের অবসরগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষত তখন, যখন 35 থেকে 45 বছর বয়সের মধ্যে, কর্মজীবনের একেবারে শুরুর দিকে মহিলারা বিরতি নেন। কারণ এই সময়েই অধিকাংশ কর্মরতা মহিলাদের পারিবারিক জীবনের সূচনা হয় এবং এর ফলে তাঁদের সর্বোচ্চ বার্ষিক উপার্জনও বড় রকম ধাক্কা খায়।
পরে যখন এই মহিলারাই আবার কাজে ফেরেন, তখন সমূহ ক্ষতির মুখে পড়েন। অনেক বছর কাজের মধ্যে না থাকায় বেতনগত লাভ, পদোন্নতি এবং আরও নানা রকম সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। ধীরে ধীরে যদিও পুরুষ এবং মহিলা কর্মচারীদের বেতনের বৈষম্য কমে আসছে, তবুও এখনও অনেকটাই পথ চলা বাকি ।
কর্মজীবনের গোড়ার দিকে যদি আরও বেশি অর্থ বাজারচলতি নানা ধরনের প্রকল্প যেমন ইউনিট লিঙ্কড ইনস্যুরেন্স প্ল্যানস (ULIP)-এ সরিয়ে রাখতে পারেন, তাহলে তা তখন কাজে দেবে, যখন আপনি কাজের মধ্যে থাকছেন না । জীবনের লক্ষ্যপূরণের জন্য যদি আগে থেকে পরিকল্পনা করেন এবং সেইমতো সঞ্চয় করেন, তাহলে কষ্টার্জিত সম্পদ অনেকটাই বাঁচাতে পারবেন। আর মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা বেশিমাত্রায় প্রযোজ্য ।
স্বাস্থ্য এবং আয়ু
জৈবিকভাবে বিচার করলে এই সত্য অনস্বীকার্য যে পুরুষ এবং মহিলা, গঠনগতভাবে দু’টি পৃথক সৃষ্টি। যার অর্থ এই যে, তাঁদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এবং চিকিৎসাগত প্রয়োজনের মধ্যেও বিস্তর ফারাক রয়েছে।
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ক্যানসারের একাধিক ধরনের প্রতি মহিলাদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি এবং পুরুষদের তুলনায় আর্থারাইটিস এবং ওস্টিওপোরেসিসের মতো সমস্যা তাঁদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়।