পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

ফাঁসি দেওয়া পেশা, জল্লাদ বললে খারাপ লাগে না পবনের

পবন জল্লাদ । প্রকৃত নাম সিন্ধি রাম । চার প্রজন্ম ধরে ফাঁসি দেওয়ার কাজ করে আসছে তাঁর পরিবার । সব ঠিক থাকলে এবার তিনি নির্ভয়া কাণ্ডের দোষীদের ফাঁসিকাঠে ঝোলাতে চলেছেন।

pawan jallad
ছবি

By

Published : Jan 7, 2020, 11:23 PM IST

Updated : Jan 8, 2020, 4:54 PM IST

দিল্লি, 7 জানুয়ারি : ঘণ্টাখানেক আগেও তাঁকে নিয়ে তেমন কোনও চর্চা হয়নি । বিকেলের একটা রায়ই যেন বদলে দিল সবকিছু । সচরাচর যে শব্দটা শুনলে মানুষ ভয় পায় । ঘৃণা করে । কটু কথা হিসেবে যে শব্দের চল । সেই শব্দটি আজ সবার মুখে মুখে । জল্লাদ । আর জল্লাদ শব্দটার সঙ্গে যে নামটি উঠে আসছে তিনি পবন । পবন জল্লাদ ।

কে এই পবন জল্লাদ ?
প্রকৃত নাম সিন্ধি রাম । মীরাঠের বাসিন্দা তিনি । পেশায় ফাঁসুড়ে ৷ পারিবারিক পেশা বলাই চলে ৷ চার প্রজন্ম ধরেই এই কাজ করে আসছে পবনের পরিবার । প্রপিতামহ লক্ষ্মণরামের হাত ধরে শুরু । পবনের দাবি, লাহোর জেলে ভগত সিংকে ফাঁসি দিয়েছিলেন প্রপিতামহ । পিতামহ কাল্লু জল্লাদ রঙ্গা-বিল্লার ফাঁসি দিয়েছিলেন । ইন্দিরা গান্ধির হত্যাকারীদেরও ফাঁসি দিয়েছিলেন তিনি । শোনা যায়, সেই সময় ওই তল্লাটে কাল্লুর মতো আর কেউ ফাঁসির দড়ি পারতেন না । বাবা মাম্মু জল্লাদও দু'জনকে ফাঁসি দিয়েছিলেন । কিশোর অবস্থা থেকে বাপ-দাদুদের সঙ্গে ফাঁসির দড়ি তৈরিতে হাত লাগাতেন । এখন বংশ পরম্পরায় ফাঁসি দেওয়ার কাজ তাঁর কাঁধে ।

পবনের পরিবারে 9 জন সদস্য । সাত ছেলে-মেয়ে । এদের মধ্যে পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলে । মীরাটের ভুমিয়াপুলের কাছে ভগবানপুরে পবনের দাদুর একটি দোকান ছিল । পরে দোকানটি ভেঙে পড়ে । এতে পরিবারের সদস্যরাও জখম হন । এরপর ভগবানপুর থেকে কাশীরামে গিয়ে থাকতে শুরু করেন পবনের পরিবার । 22 বছর বয়স । তখন থেকেই ফাঁসুড়ে হওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল পবনের । পবনের কথায় সেদিন তিনি বাবাকে বলেছিলেন, বাবা তোমার পরে আমি আপনার কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই ।

কিন্তু এই ফাঁসি দেওয়ার কাজের জন্য খুব একটা টাকা পান না পবন । মাসের শেষে মাত্র তিন হাজার হাতে আসত ৷ গত বছরই মাস মাইনের বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলেন । দাবি করেছিলেন কম করে 20 হাজার করার ৷ কিন্তু সরকারের তরফে মাত্র দু'হাজার টাকা বাড়ানো হয় । এখন তার বেতন মোট পাঁচ হাজার টাকা ।

এই ক'টা টাকায় সংসার চলে কীভাবে?

চলে না । পেট চালাতে ভরসা ফেরি ৷ মীরাটের অলিতে-গলিতে কাপড়-সবজি-ফল ফেরি করেন । সকাল হলেই সাইকেল নিয়ে রুজি-রুটির লড়াই শুরু হয়ে যায় ৷ মীরাটের গলিতে মেয়ে-বউরা যখন কাপড়ের দর-দাম করেন, তখন কেউ বুঝতে পারেন না যে, সাইকেলে ঘুরে বেড়ানো কাঁচা-পাকা চুলের মানুষটাই হয়তো নির্ভয়ার চার দোষীকে ফাঁসি দিতে চলেছেন ।

অতি সাধারণ জীবনধারণ । 'জল্লাদ'-এর বাড়ির চারদিকের দেওয়ালে সাজানো ঠাকুরের ছবি । ভালো লাগে যখন কেউ জল্লাদ বলে ডাকে? পবনের কথায়, এটি তাঁর পেশা । এটাই তাঁর পরিচয় । কেউ জল্লাদ বললে তাই খারাপ লাগে না । পেশা নিয়ে কোনও খারাপ লাগা না থাকলেও ছেলেকে এই পেশায় দেখতে চান না ৷ ছেলেও বাবা-দাদুর পেশার প্রতি উৎসাহী নয় ৷ পবন জানান, ছেলে সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ।

আফজল গুরুর সময় সুযোগ পাননি, কিন্তু এবার ডাকলে অবশ্যই যাবেন । নির্ভয়া মামলায় ফাঁসি, কেমন লাগবে কাউকে ফাঁসিতে ঝোলাতে? এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পবন বলেন, "আমি তৈরি । 130 কোটি মানুষ শান্তি পাবে । ওরা মেয়েটার সঙ্গে যা করেছে তা অত্যন্ত নির্মম । অবশ্যই ফাঁসি হওয়া উচিত ।

যদি ফাঁসির লিভার তিনি টানেন, সেক্ষেত্রে একটি রেকর্ডও গড়ে ফেলবেন ৷ এই প্রথমবার একসঙ্গে চারজনকে ফাঁসি দেওয়া হবে । পবনের কথায়, দাদুর রেকর্ড ভাঙতে চান তিনি ।

Last Updated : Jan 8, 2020, 4:54 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details