দিল্লি, 27 জুন : সাতটি দেশকে নিয়ে তৈরি গোষ্ঠী বা গ্রুপ G7 নামে পরিচিত৷ এই দলের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক দেশগুলির সমাবেশ ঘটেছে ৷ এখানে রয়েছে কানাডা, ফ্রান্স, অ্যামেরিকা, ইতালি, জাপান ও জার্মানি ৷ 1975 সালে এই গ্রুপটি তৈরি হয় ৷ পরে রাশিয়াকে এই দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ৷ তখন এর নাম হয় G-8 ৷ কিন্তু ইউক্রেন, ক্রিমিয়া দখল করে নেওয়ার জন্য রাশিয়াকে এই গ্রুপ থেকে পরে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় ৷ এখন G7 গোষ্ঠী বিশ্বের 11 শতাংশ জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করে ৷ এই গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলিতে বিশ্বের মোট সম্পদ (317 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার)-এর 58 শতাংশ রয়েছে ৷ আর সারা বিশ্বের GDP-এর 46 শতাংশের বেশি রয়েছে এই দেশগুলিতে ৷ G7 গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি গোটা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী ৷ সারা বিশ্বে যত রপ্তানি হয়, তার মধ্যে G7 গোষ্ঠীভুক্ত একটি দেশ থেকেই যায় এক তৃতীয়াংশ ৷ সারা বিশ্বে যত আমদানি হয়, তার 35 শতাংশ করে G7 গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি ৷ এ বছর G7 সম্মেলন জুন মাসে হওয়ার কথা ছিল ৷ কিন্তু তা পিছিয়ে সেপ্টেম্বরে করা হয়েছে ৷ অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে রাশিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াকে এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানাবেন ৷ ভারতকে আমন্ত্রণ করার কারণ, ভারত এখন G20 গোষ্ঠীর সদস্য ৷ যা খুব শক্তিশালী গোষ্ঠী ৷ এই গোষ্ঠীই এখন বিশ্ব পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ৷ অর্থনৈতিক মন্দার পশ্চিম বিশ্বের দেশগুলি বুঝতে পারে যে চিন, ভারত, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য দেশগুলিকে ছাড়া বিশ্ব পরিচালনা সম্ভব নয় ৷ সেই কারণেই G7 কে বাড়িয়ে G-20 তৈরি করা হয় ৷ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে G7 G20-এর ছায়ায় ঢাকা পড়ে গিয়েছে ৷ অ্যামেরিকার নতুন সংগঠন তৈরির বর্তমান পদক্ষেপ আসলে চিনকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া এবং আর্থিক শাসনের 90 শতাংশের জন্য দায়ী G-20 কে ভেঙে দেওয়া ৷
প্রস্তাবিত G7 সম্মেলনের মূল আলোচনার বিষয় হবে ভবিষ্যতে চিনের সঙ্গে কীভাবে লড়াই চালাতে হবে ৷ G7-এর আমন্ত্রিতদের সঙ্গে এটাই আলোচনা হবে ৷অ্যামেরিকার তরফে সম্প্রতি একটি নতুন ভিশন ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়েছে ৷ যাতে চিনকে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়েছে ৷ চিনের বিরুদ্ধে বিশ্বের নিয়মগুলিকে লঙ্ঘন করার এবং চিনের কমিউনিস্ট পার্টির (CCP) আদর্শ অনুযায়ী নিজেদের সুবিধা মতো আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে নতুন আকার দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে ৷ হোয়াইট হাউজের তরফে একটি রিপোর্টও প্রকাশ করা হয়েছে ৷ যার নাম, ‘United States Strategic Approach to the People’s Republic of China’ ৷ সেখানে ঘোষণা করা হয়েছে যে দু’টি শক্তিধর দেশ যেখানে ‘কৌশলগত প্রতিযোগিতা ও সুরক্ষা’ এবং ‘যথাযথ ভাবে স্বার্থ' রয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে CCP-র সরাসরি চ্যালেঞ্জকে স্বীকার করে তার প্রতিক্রিয়া দেওয়া হল ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ট্যারিফ যুদ্ধের ক্ষেত্রে যা ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে ‘একটা নতুন ঠান্ডা যুদ্ধ’ আন্তর্জাতিক রাজনীতির উপর বড় প্রভাব ফেলতে চলেছে ৷ অন্য যে সমস্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং তাদের সহযোগীদের উপরও তারা চাপ বৃদ্ধি করে চিনকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করতে পারে ৷ এটা ভবিষ্যতেও চলতে পারে ৷ কিন্তু বিভিন্ন দেশগুলি কী মনে করছে এবং এই গোষ্ঠীকে বৃদ্ধি করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী ভাবছে, তা নিয়ে অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে ৷
ভারতকে উন্নত দেশগুলির মধ্যে জায়গা দেওয়া হচ্ছে এবং সুবিধাপ্রাপ্ত এলিট ক্লাবে ভারত যোগ দিতে চলেছে ৷ এসব ভেবে ভারতের প্রভাবিত হওয়া উচিত নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ৷ কারণ এটা পশ্চিমের তরফে ভারতের প্রতি কোনও সৌজন্যের বার্তা নয় ৷ ভারতকে এই গোষ্ঠীতে নেওয়া এখন তাদের বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে গিয়েছে ৷ ভারত যে শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং ভারত ও অ্যামেরিকার মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে, এটা তারই একটা প্রমাণ ৷ ভারতকে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে ৷ ভারতের এই নতুন গোষ্ঠীতে যোগদানের বিষয়ে কোনও আপত্তি করা উচিত নয় ৷ কিন্তু চিন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেন কোনও সমস্যা তৈরি না হয় ৷ G7 গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির প্রতিটির সঙ্গে ভারতের দৃঢ় অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে ৷ আর অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ Covid19 প্যানডেমিকের পর এবং চিনের উপর অতিরিক্ত অর্থনৈতিক ভরসা থেকে শিক্ষা নিয়ে অর্থনীতিকে নতুন করে চাঙ্গা করতে ভারতের এই মঞ্চ ব্যবহারের সুযোগ নেওয়া উচিত ৷ তাই ভারতের উচিত অপেক্ষায় থাকা এবং দেখা যে এই দফা শেষ হওয়ার পর ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরতে পারে কি না ৷ যদি হোয়াইট হাউজে নতুন প্রেসিডেন্ট আসেন, তাহলে কাজের ধারা অন্য হবে ৷
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে G7 গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির অর্থনীতি নিচের দিকে নামছে এবং তাদের কৌশলগত বিস্তার কমে যাচ্ছে ৷ বিষয়টি লক্ষ্য করে প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত অনিল ত্রিগুনিয়াত বলেন, ‘‘G7 গোষ্ঠীভুক্ত দেশ এবং ট্রান্স-আটলান্টিক অংশীদারিত্বের মধ্যে ট্রাম্প সবচেয়ে চাপের মুখে রয়েছে ৷ অন্তত পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত চিনকেই অ্যামেরিকা বারবার কাঠগড়ায় তুলবে ৷ আর ট্রাম্প চাইবেন G7-এর সঙ্গে আরও চারটি দেশকে সংযুক্ত করতে ৷’’ একই সঙ্গে কৌশলগত গুরুত্ব এবং ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্রজেক্টের শর্তগুলোকে মান্যতা দিয়ে পরবর্তী সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে তিনি অস্ট্রেলিয়া, ভারত, রাশিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ৷ তাঁর ভবিষ্যৎবাণীর উপর নির্ভর করে আরও কতগুলি বিষয় সংযোজিত হতে পারে ৷ রাশিয়া নিয়ে ট্রাম্প অনুভব করেছেন যে কৌশলগত প্রভাব তৈরি করতে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া সত্ত্বেও দুই দেশ বিশ্বের বেশ কয়েকটি হটস্পট নিয়ে কাজ করেছে ৷ তাঁর মতে, ‘‘আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা যেভাবে বাড়ছে, এটা তারই স্বীকৃতি ৷ তাদের কী সদস্য করে নেওয়া হবে, সেটা জানার জন্য তো অপেক্ষা করতেই হবে ৷ কিন্তু এই মুহূর্তে বলা যায় যে এটা ট্রাম্পের মস্তিষ্কপ্রসূত এবং G7-এর সীমাবদ্ধতার স্বীকৃতি ৷ অন্যদিকে তিনি জুনের সম্মেলন পিছিয়ে দিয়ে বিষয়টিতে অন্য মোড় এনে দিয়েছেন ৷ কারণ, Covid19-এর পরিস্থিতিতে নেতারা খুবই সতর্ক থাকবেন ৷ পাশাপাশি সম্প্রতি G20-তে Covid নিয়ে আলোচনা হয়েছে ৷ সঠিক এবং বাস্তবিক ফলাফলের জন্য এখনও সবাই অপেক্ষায় রয়েছেন ৷