কলকাতা, 25 নভেম্বর : 71 বছর বয়সে মারা গেলেন রাজ্য়সভার সাংসদ তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেল ৷ কোরোনা পরবর্তী নানান শারীরিক সমস্য়ায় ভুগছিলেন তিনি ৷ বুধবার ভোর সাড়ে তিনটেয় গুরগাঁওয়ের হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর ৷
আহমেদ প্যাটেলের জন্ম 21 অগাস্ট 1949 সালে গুজরাতের ভরুচ জেলার এক কৃষক পরিবারে ৷ তিনি মহম্মদ ইশাকজি প্যাটেল এবং হাওয়াবেন মহম্মদভাইয়ের তৃতীয় সন্তান ছিলেন ৷ ইশাকজি দক্ষিণ গুজরাতের সমবায় আন্দোলনের অন্য়তম স্রষ্টা ছিলেন ৷ ভরুচের জয়েন্দ্র পুরী আর্টস অ্য়ান্ড সায়েন্স কলেজে থেকে স্নাতক হন আহমেদ প্যাটেল ৷ তিনি অল্প বয়সে একজন খেলোয়াড় ছিলেন ৷ কলেজের ক্রিকেট ও ব্য়াডমিন্টন দলের অধিনায়কত্ব করেছেন ৷ কলেজ জীবনেই বাবার সঙ্গে সমবায় আন্দোলনে অংশ নেন তিনি ৷ সমবায় মডেলে অনুপ্রাণিত হয়ে 1970 সালের শুরুতে ভরুচে দুগ্ধ সমবায় প্রতিষ্ঠা করেন ৷ 1976 সালেই মিমোনা প্যাটেলের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি ৷ মিমোনা প্যাটেল গুজরাতের এক ব্য়বসায়ী পরিবার থেকে এসে ছিলেন ৷
কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধির রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ছিলেন তিনি ৷ 2001 সাল থেকে কংগ্রেস সভাপতির রাজনৈতিক সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছিলেন ৷ আহমেদ প্যাটেল পেশাদার রাজনীতিক হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু করেছিলেন 1976 সালে ৷ গুজরাতের ভরুচ জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় তাঁর ৷ সে সময় গুজরাতে ইন্দিরা আবাস যোজনার সূচনা তিনিই করেছিলেন ৷ সেই সময় থেকেই তিনি কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব সামলে আসছেন ৷ তা রাজ্য়ে হোক বা কেন্দ্রীয় স্তরে ৷ সংসদে গুজরাতের হয়ে মোট সাতবার তিনি প্রতিনিধিত্ব করেছেন ৷ তার মধ্য়ে 1977-1989 সাল পর্যন্ত তিনবার লোকসভায় এবং 1993 সাল থেকে টানা রাজ্য়সভার সদস্য় হিসেবে কাজ করে যাচ্ছিলেন ৷ তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে আহ্বান জানিয়ে তাঁর বার্তা ছিল, ‘‘তরুণ প্রজন্মকে আমি বলব, রাজনীতিকে গুরুত্ব দিয়ে কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিতে ৷’’
2004-2014 সাল পর্যন্ত UPA সরকারের সময় থেকে কংগ্রেস ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্য়ে অন্য়তম যোগাযোগের মাধ্য়ম ছিলেন তিনি ৷ একজন রাজনৈতিক ব্য়ক্তিত্ব ছাড়াও তিনি জনহিতকর ও দানধ্য়ানকারী ব্য়ক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন ৷ 1975 সালে আহমেদ প্যাটেলের কর্মনিষ্ঠায় প্রভাবিত হয়ে রাজীব গান্ধি তাঁকে গুজরাত যুব কংগ্রেসের সহ সভাপতি নিযুক্ত করেছিলেন ৷ 1977 সালের জরুরি অবস্থার পর ভরুচ লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রথমবার কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে দাঁড়ান তিনি ৷ সেই নির্বাচনেই 153 জন বিজয়ী কংগ্রেস সাংসদদের মধ্য়ে একজন ছিলেন আহমেদ প্যাটেল ৷
প্রথম লোকসভা নির্বাচনে জেতার পর আহমেদ পটেলকে গুজরাত যুব কংগ্রেসের সভাপতি করা হয় ৷ 1981 সাল পর্যন্ত সেই পদের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি ৷ প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার প্রচারে সঞ্জয় গান্ধির পাঁচ দফা প্রস্তাবকে বাস্তবায়ন করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন ৷ আধুনিক সমাজ গঠনের জন্য় তাঁর মূল মন্ত্র ছিল, বিশ্বমানের স্বাস্থ্য় পরিষেবা এবং উন্নতমানের শিক্ষা ব্য়বস্থা ৷ 1984 সালে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কেন্দ্রীয় স্তরে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন ৷ সেই সময় থেকেই তিনি গান্ধি পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্য় হয়ে ওঠেন ৷ 1992 সালে সবচেয়ে কম বয়সি সদস্য় হিসেবে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য় হিসেবে নির্বাচিত হন ৷ 1992 সাল থেকে 2001 সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক এবং কোষাধ্য়ক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন ৷ এমনকী কংগ্রেসের হয়ে ওড়িশা, পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং দিল্লির পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব সামলেছেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক ৷