হায়দরাবাদ, 29 এপ্রিল : কঙ্কালের বয়স 160 বছর অর্থাৎ 1857 সালের ৷ হ্যাঁ, 2014-য় পঞ্জাবের অজনালার একটি কুয়ো থেকে অনেক কঙ্কাল খুঁজে পাওয়া যায় ৷ শহরের সেলুলার ও মলিকিউলার বায়োলজি কেন্দ্র এবং অন্য সংস্থাগুলি কঙ্কালগুলির জেনেটিক গবেষণা করেছে ৷ তারা জানিয়েছে, ওই কঙ্কালগুলি সিপাই বিদ্রোহের সময়ে 26 নম্বর নেটিভ বেঙ্গল ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটেলিয়নের ৷ যাঁরা ব্রিটিশ সেনার গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন (160 Year Old Skeletons DNA and Isotope analysis says of 1857 Revolt) ৷
অন্যদিক থেকে ইতিহাস নির্ভর তথ্য বলছে, ওই কঙ্কালগুলি ভারতীয় সেনাদের ৷ কিন্তু সেনাদের পরিচয় এবং ভৌগোলিক উৎস সম্পর্কিত বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ মেলেনি ৷ এ নিয়ে বিস্তর সন্দেহ রয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে সিসিএমবি (Centre for Cellular and Molecular Biology, CCMB) ৷ পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানথ্রোপোলজিস্ট জে এস সেহরাওয়াত, সিসিএমবি, লখনউয়ের বীরবল সাহানি ইনস্টিটিউট এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে এই শহিদরা মূলত কোথাকার, তা নিশ্চিত করতে ডিএনএ এবং আইসোটোপ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে ৷ গবেষণায় ইতিমধ্যে জানা গিয়েছে, কঙ্কালগুলি গাঙ্গেয় উপত্যকায় (Gangetic plain region) বসবাসকারীদের ৷ গবেষণাটি 'ফ্রন্টিয়ার্স ইন জেনেটিক্স' (Frontiers in Genetics) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে ৷
আরও পড়ুন : Independence Special : ব্রিটিশদের কঠিন লড়াইয়ে মুখে ফেলেছিলেন আথারগড়ের রাজা এবং জমিদাররা
প্রধান বিজ্ঞানী কে ঠংগরাজ (K Thangaraj) বলেন, "মানুষের পূর্বপুরুষ কে, তা জানতে সাহায্য করে ডিএনএ বিশ্লেষণ ৷ আর আইসোটোপ বিশ্লেষণে খাদ্যাভ্যাস জানা যায় ৷ দু'ধরনের গবেষণা পদ্ধতিই কুয়ো থেকে পাওয়া কঙ্কালগুলির মানুষেরা পঞ্জাব বা পাকিস্তানের বাসিন্দা নন ৷ বরং উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী মানুষের ডিএনএ-র সঙ্গে মিলছে এঁদের ডিএনএ ৷" তিনি সিসিএমবির প্রধান বিজ্ঞানী এবং হায়দরাবাদের ডিএনএ গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর এবং এই দলের এক সদস্য ৷ 50টি নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা এবং 85টির আইসোটোপ বিশ্লেষণ করা হয়েছে ৷
সেহরাওয়াত আরও বলেন, "গবেষণার ফলাফল ঐতিহাসিক প্রমাণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ৷ 26 নম্বর নেটিভ বেঙ্গল ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটেলিয়নের সদস্যরা পূর্ব দিকের বাংলা, ওড়িষা, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা ৷" ইতিহাস বলছে, এই ব্যাটেলিয়নের সৈন্যদের পাকিস্তানের মিয়াঁ-মীরে (Mian-Meer, Pakistan) পাঠানো হয়েছিল ৷ ব্রিটিশ সেনাবাহিনী তাঁদের পঞ্জাবের অজনালার কাছে ধরে ফেলে এবং হত্যা করে ৷
এই ডিএনএ গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জ্ঞানেশ্বর চৌবে (Prof Gyaneshwer Chaubey) ৷ এছাড়া দলের প্রধান গবেষক নীরজ রাই একজন প্রাচীন ডিএনএ বিশেষজ্ঞ ৷ তিনি জানান, বৈজ্ঞানিক গবেষণাটির মাধ্যমে প্রমাণ-নির্ভর উপায়ে ইতিহাস আরেকবার সামনে এসেছে ৷ সিসিএমবি-র ডিরেক্টর বিনয় নাডিকুরি (CCMB Director Vinay Nandicoori) জানালেন, সিসিএমবি আরও বড় আকারে প্রাচীন ডিএনএ গবেষণার পরিকল্পনা নিয়েছে ৷ এতে বহু ঐতিহাসিক এবং প্রাক-ঐতিহাসিক যুগের তথ্য উঠে আসবে ৷