রায়গঞ্জ, 2 অক্টোবর: সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট ৷ আর সেই পোস্টেই দৌলতেই বুধবার সকাল থেকে বঙ্গ রাজনীতির অন্দরে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন রায়গঞ্জের বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের কৃষ্ণ কল্যাণী ৷ যদিও পরে তিনি পোস্টটি ডিলিট করে দেন ৷ তবুও রাজনীতির অন্দরমহলে এই নিয়ে চর্চা চলছেই ৷
ওই পোস্টে কী এমন লিখেছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী, যা নিয়ে এত হইচই পড়ে গেল চারিদিকে ! বুধবার সকালে সোশাল মিডিয়ায় এই পোস্টটি করেন রায়গঞ্জের বিধায়ক ৷ লেখেন, ‘‘সিএম (মুখ্যমন্ত্রী) থেকে ডিএম (জেলাশাসক) ৷ কে সিএম নির্বাচন করেন ? শুধুমাত্র বিধায়ক ৷ যদি... ৷’’
এখানেই তাঁর লেখা শেষ হয়নি ৷ এর পর তিনি লেখেন, ‘‘আমি কৃষ্ণ কল্যাণী ৷ আমি একজন জনপ্রতিনিধি ৷ ডিএম (জেলাশাসক) একজন পাবলিক সারভেন্ট (সরকারি কর্মচারী) ৷ যদি পরিস্থিতির পরিবর্তন না হয়, তাহলে রাজনীতি ছেড়ে দেব ৷ জনগণের সেবার জন্য আমি আমার নিজের ক্ষমতাতেই অত্যন্ত স্বচ্ছন্দ বোধ করি ৷’’
কৃষ্ণ কল্যাণীর রাজনীতিতে প্রবেশ 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ৷ গেরুয়া শিবিরেই তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি ৷ বিজেপির টিকিটেই তিনি প্রথমবার ভোটে জিতে জনপ্রতিনিধি হন ৷ পরে অবশ্য তৃণমূলে যোগদেন ৷ তারপর থেকে প্রায় আড়াই বছর বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন ।
তারপর চলতি বছরের গোড়ায় বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হন । লোকসভায় হারের পর রায়গঞ্জ বিধানসভা উপ-নির্বাচনে ফের শাসক দলের প্রার্থী হয়ে পুনরায় বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন কৃষ্ণ কল্যাণী । ফলে তাঁর এই পোস্ট কোন বিদ্রোহের ইঙ্গিত সেই নিয়েই সকাল থেকে জল্পনা চলতে থাকে বিভিন্ন মহলে ৷
এর আগে একাধিকবার দলের বিরুদ্ধে গিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে তোপ দেগে মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে ইসলামপুরের বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরীকে । এবারে কি তবে দলে বা প্রশাসনিক মহলে গুরুত্বহীন হয়ে পড়লেন শাসক বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী ? আর সেই গুরুত্ব পেতেই কি করিমের পথই অনুসরণ করছেন কৃষ্ণ ? রাজনীতির অন্দরে সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে ৷
এই নিয়ে উত্তর দিনাজপুরে বিজেপির সভাপতি বাসুদেব সরকার বলেন, ‘‘ওঁর এই পোস্ট নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন নই ৷ রাজনীতি সমাজসেবার একটি মাধ্যম ৷ সমাজসেবা লাভ-ক্ষতির হিসেব দিয়েই হয় না ৷ উনি স্বনামধন্য ব্যবসায়ী, তাই লাভ-ক্ষতির হিসেব ভালো বোঝেন ৷ অস্থিরমতি কাউকে দিয়ে সমাজসেবা হয় না ৷’’
নানা জল্পনা যখন চলছে, সেই সময় দেখা যায় সোশাল মিডিয়া থেকে পোস্ট ডিলিট করে দিয়েছেন কৃষ্ণ কল্যাণী ৷ এই নিয়ে পরে ব্যাখ্যাও দেন রায়গঞ্জের বিধায়ক ৷ তিনি বলেন, ‘‘যে কারণে পোস্ট করেছিলাম, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, সেটা ঠিক হয়ে গিয়েছে, সেই জন্য পোস্ট ডিলিট করে দিয়েছি ৷ এখানে বিদ্রোহের কোনও অবকাশ নেই ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী ছিলাম, আছি, থাকব ৷’’
তাঁর কি তাহলে প্রশাসনের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, সেই নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি কৃষ্ণ কল্যাণী ৷ এমনকী, কী নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি, কীভাবে সমস্যার সমাধান হল, সেই নিয়ে মুখে কুলুপ আঁটেন রায়গঞ্জের বিধায়ক ৷ ফলে আদৌ সমস্যা মিটল নাকি আপাতত তিনি ‘ইতি’ টানলেন, সেই বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা থেকে গেল ৷ ভবিষ্যতে আবার এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটে কি না, সেটাই দেখার ৷