কলকাতা, 7 নভেম্বর: তিনি মুখ খুললেই খবর হয়। এমন কথা জানে সবাই। এবার ফের খবরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিনে শ্রীরামপুরের সাংসদের সদর্প ঘোষণা, "রাজনীতিতে বয়স কোনও ফ্যাক্টর নয়"। আপাত নিরীহ এই বক্তব্য ঘিরেই এখন তুঙ্গে তরজা। অভিষেক মনে করেন রাজনীতিতে অবসরের বয়স থাকা উচিত।
বয়স 60 বছরের বেশি হলে আর পদ ধরে রাখা উচিত নয়। বিরোধী দলগুলি তো বটেই তৃণমূলেরও অনেকেই মনে করেন দল ও সরকারের মাথায় যাঁরা রয়েছেন তাঁদের উদ্দেশ্য করেই এমন মন্তব্য করে থাকেন অভিষেক। তা নিয়ে দলের অন্দরেই চর্চা হয়েছে বহুবার । অভিষেক অবশ্য এও বলেছেন, তিনি সংগঠনেই থাকতে চান । প্রশাসনে আসার বাসনা তাঁর এখনই নেই। নিজের বয়স 60 হওয়ার আগেই রাজনীতি ছেড়ে দেবেন।
তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একেবারে শুরু থেকে তৃণমূলে আছেন এমন নেতারা ঘনিষ্ঠ মহলে এই বক্তব্যের বিরোধিতায় সরব হন। সেই দলে কল্যাণও আছেন। অতীতে কল্যাণকে এও বলতে শোনা গিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁর একমাত্র নেত্রী, অন্য কেউ নয়। এবার ফের অভিষেকের জন্মদিনেই তাঁর রাজনীতিতে বয়স-তত্ব খারিজ করলেন কল্যাণ। একদিন আগেই তৃণমূলে অভিষেক ঘণিষ্ঠ বলে পরিচিত কুণাল ঘোষ জানিয়ে দিয়েছিলেন ঠিক কবে অভিষেকে রাজ্যের দায়িত্বে আসবেন। সেই মন্তব্যের পর 24 ঘণ্টাও অতিক্রান্ত হল না। এবার দলের কারও নাম না পাল্টা মন্তব্য করলেন কল্যাণ।
অভিষেক কী মনে করেন?
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারবার বলতে শোনা গিয়েছে, রাজনীতিতে বয়সের একটা ঊর্ধ্বসীমা থাকা উচিত। তাঁর যুক্তি, বয়স বাড়লে মানুষের পরিশ্রম ক্ষমতা কমে যায়। তাই প্রবীণদের অভিজ্ঞতা দলের প্রয়োজন হলেও একটা নির্দিষ্ট সীমায় এসে তাঁদের অবশ্যই থেমে যাওয়া উচিত। অতীতে তিনি এও জানিয়ে দিয়েছিলেন, 60 বছর বয়স হওয়ার আগেই রাজনীতি থেকে সরে যাবেন। যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল দলের ভেতরে ৷
কল্যাণ-কথা
এদিন কল্যাণের কথায় ফের প্রকাশ্যে সেই বিতর্ক । শুধু তাই নয়, অভিষেকের জন্মদিনেই ‘পুরনো কাসুন্দি’ ঘাঁটলেন দলের প্রবীণ নেতা ৷ এদিন কলকাতা প্রেস ক্লাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছিলেন কল্যাণ। সেখানেই ট্রাম্পের জয় নিয়ে দু’টি ‘ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ’ তুলে ধরেন তিনি। কল্যাণ বলেন, ‘‘আমেরিকার মানুষের জনমতের উপর ভিত্তি করে ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতেছেন। মানুষের রায়কে সম্মান করতেই হবে । ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে, রাজনীতিতে বয়স একটা সংখ্যা মাত্র । 78 বছর বয়সে যদি কর্মক্ষমতা থাকে, যদি জনপ্রিয়তা থাকে, মানুষের গ্রহণযোগ্যতা থাকে তাহলে যে কেউ জিতে আসতে পারেন। দেশের প্রতিনিধি হতে পারেন। এক্ষেত্রে বয়স কোনও ফ্যাক্টর নয় ।’’
যদিও কোথাও তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করেননি । বরং তাঁকে প্রশ্ন করা হলে বলেছেন, ‘‘আমার যা বক্তব্য আমি বলেছি ৷ এরপর কীভাবে তা ব্যাখ্যা করা হবে সেটা আমি জানি না ।’’ কিন্তু এখান থেকেই রাজনৈতিক মহলের একাংশের প্রশ্ন, তাহলে কি এই বক্তব্যের মাধ্যমে ঘুরিয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককেই বার্তা দিলেন কল্যাণ ?