সাঁকরাইল, 17 মে: তাঁরাও সমাজেরই অংশ ৷ ঘর-পরিবার তাঁদেরও আছে ৷ কিন্তু সমাজের চোখে আজও তাঁরা 'নীচুতলার মানুষ' ৷ একের পর এক ভোট চলে গেলেও হাওড়ার বারবণিতারা যে তিমিরে ছিলেন আজও রয়ে গিয়েছেন সেখানেই ৷ ভোটের কার্ডে নাম রয়েছে ৷ তবে সুযোগ-সুবিধার তালিকা বেশ ছোট ৷ 20 মে হাওড়ায় ভোট ৷ তার আগে কেমন আছেন সেখানকার গণিকারা? ঘুরে দেখলাম আমরা ৷
এক যৌনকর্মী অভিযোগ করে বলেন, "দীর্ঘ 35 বছর এই পেশায় রয়েছি। সরকারের থেকে কোনও কিছুই পাইনি। আমার মেয়ের অনেক ছোটবেলাতেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে আগেই প্রয়াত। আমি একাই থাকি। বয়সের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাইনি। বয়স্ক ভাতা এবং স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আবেদন করেও পাইনি। আমাদের সংগঠন রয়েছে, তাতেও যুক্ত আছি । গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করলেও সরকারের থেকে সুযোগ পাচ্ছি না ৷"
আর এক যৌনকর্মী অভিযোগ করে বলেন, "আমরা ভোট দিই। তবে সরকারি বিশেষ সুযোগ সুবিধা পাই না। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসাথী আবেদন করলেও পাইনি। শুধু রেশনের চাল-আটা পাই। সরকার আমাদের জন্য সুযোগ সুবিধা দিলে ভালো হয়।" অন্য এক যৌনকর্মী জানান, তিনি রেশনের চাল, স্বাস্থ্যসাথী এবং লক্ষীর ভাণ্ডার পেয়েছেন। এছাড়া আর কোনও সরকারি সুবিধা পাননি। নিজেদের সংগঠনের অফিস ঘর থাকলেও সেখানে এক হাঁটু পর্যন্ত জল জমে থাকায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাঁরা দুর্বার মহিলা সমিতির সঙ্গে যুক্ত। তবে সাধারণ যে সুযোগ সুবিধা পাওয়া দরকার তার থেকে তারা বঞ্চিত ৷ জানা গিয়েছে, রাজ্যে প্রায় 65 হাজার যৌনকর্মী রয়েছেন দুর্বার সংগঠনে ৷ পরিবার-সহ ধরলে সেই সংখ্যা অন্তত দু’-আড়াই লাখ ভোটার ৷ যদিও এই ভোটাররা রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছেন ৷ সেটাই সমস্যা ৷
1948 সালে প্রকাশিত মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের 1 নম্বর ধারায় বলা আছে, সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাঁদের বিবেক এবং বুদ্ধি আছে, সুতরাং সকলেরই একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে আচরণ করা উচিত। যদিও বাস্তবের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সমাজে এখনও গণিকাদের প্রতি যে ব্যবহার, বৈষম্য রয়েছে, তা নিয়েই লোকসভা ভোটের আগে মুখ খুললেন হাওড়ার সাঁকরাইলের যৌনকর্মীরা। তাঁদের দাবিগুলি অবশ্য বহু পুরোনো ৷ দীর্ঘদিন লড়াই করেও জয় আসেনি ৷ শুধু এসে গিয়েছে আরও একটা ভোট।
আরও পড়ুন