কলকাতা, 26 মার্চ: বছরখানেক আগে কলকাতা জুড়ে ইঁদুরের উৎপাত নিয়ে ঘোরতর আশঙ্কাপ্রকাশ করেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম । পুরকর্মীদের নিদান দিয়েছিলেন অবাধ্য দোকানদারদের নোটিশ দিয়ে সতর্ক করতে। তারপরেও বেলাগাম মনোভাবের পরিচয় মিললে প্রয়োজনে পুরকোর্টে মামলাও করতে বলেছিলেন মেয়র। সেই নির্দেশের বছর ঘুরেছে, কিন্তু কেউ রাস্তায় নামেননি। কোনও অবাধ্য দোকানদার সচেতন হননি। আর এখন সেই ইঁদুরের তাণ্ডবেই তটস্থ খোদ এসএন ব্যানার্জি রোডে কলকাতা পৌরনিগমের কেন্দ্রীয় পৌরভবনের বিভিন্ন বিভাগ । সেই ইঁদুর খেতে সম্প্রতি জুটেছে লম্বা 6 ফুটের দাঁড়াশ সাপ । আবার পাওয়া গিয়েছে ভামও।
ইঁদুরের জ্বালায় টিকতে পারছেন না বহু বিভাগের কর্মীরা । মাঝে মধ্যেই তার কেটে পরিষেবা বিপর্যস্ত করছে ইঁদুরের দল । দিবারাত্রি এদিক ওদিক লাফিয়ে বেড়াচ্ছে । ঘুরে বেড়াচ্ছে বিরাট বিরাট আকারের ইঁদুর । আর তার ভয়ে তটস্থ হয়ে অফিস টাইম কাটাতে হচ্ছে কর্মী আধিকারিকদের। ইঁদুরের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় কলকাতা কর্পোরেশন । কিন্তু ইঁদুর তো মারা চলবে না, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে । তাই তাদের তাড়িয়ে কীভাবে নির্ঝঞ্ঝাটে কাজের সময়টুকু কাটানো যায়, সেই পরিকল্পনায় করছে পৌর কর্তৃপক্ষ । এর জন্য চারটি জায়গায় বসেছে আধুনিক যন্ত্র ৷ যা কম্পনের মাধ্যমে ইঁদুরকে সেই চত্বরে আসতে দেয় না । কিন্তু এই বিরাট ভবনের সেই চারটি যন্ত্র নেহাতই তুচ্ছ বিষয় । কিন্তু কেন এই বাড়বাড়ন্ত ?
জানা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ভবনের বিভিন্ন বিভাগ-সহ লনে, বিভিন্ন তলায় চলার পথে ধারে পড়ে আছে বহু পুরনো নথিপত্র । আবার বিভিন্ন তলে আছে কলকাতা পৌরসভার ক্যান্টিনের স্টল, এছাড়াও আছে একাধিক বেসরকারি খাবারের দোকান। সেখানে থরে থরে পড়ে থাকা কাগজ কেটে কেটে খাচ্ছে ইঁদুর । লোকের খাবার খাওয়ার পর ফেলে দেওয়ার প্লেটের তরকারি অথবা অন্য খাবারের উচ্ছিষ্ট ডাস্টবিন বা প্লেট থেকেই দেদার খেয়ে পেট ভরাচ্ছে এই সমস্ত ইঁদুর । আর তার জেরেই তাদের রমরমা ভবনজুড়ে।
বেশ কয়েকবছর আগে মেয়র বলেছিলেন, ফুটপাতে যে সমস্ত খাবারের দোকান বা মিষ্টির দোকান আছে অথবা হোটেল আছে তাদের লিফলেট দিয়ে সচেতন করতে হবে । যাতে তারা রাস্তায়, খোলা ডাস্টবিনে অথবা নর্দমার পাশে ড্রেনে যথেচ্ছভাবে সবজির খোসা থেকে শুরু করে খাবারের উচ্ছিষ্ট না ফেলে । সেই নোটিশ পাওয়ার পরেও যদি একই ঘটনা ঘটে প্রয়োজনে অবাধ্য দোকানদারদের নোটিশ দিয়ে মামলা করতে হবে তাদের বিরুদ্ধে । ইঁদুর দৌড় ঠেকানো না গেলে ভবিষ্যতে বড়সড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে কলকাতাকে । এমনকি প্লেগের মতো রোগও ফের মহামারির আকার নিতে পারে আজ না হোক দশ বছর পর।
মেয়রের এই বক্তব্যের পর এক বছর কেটে গিয়েছে । কিন্তু দেওয়া হয়নি কোনও সচেতনতার লিফলেট ৷ কাউকেই নোটিশ দিয়ে সতর্ক করা হয়নি। মামলা তো দূরের কথা । এর ফলে কলকাতার কেন্দ্রীয় ভবনের আশপাশজুড়ে যে সমস্ত খাবার বা মিষ্টির দোকান অথবা কেন্দ্রীয় ভবনের ভিতরে যে সমস্ত খাবারের দোকান আছে সেই সমস্ত দোকানের উচ্ছিষ্ট খেয়েই দিনের পর দিন তাণ্ডব চালাচ্ছে বড় বড় ইঁদুর। পৌরকর্মীরা আতঙ্কে থাকলেও তাদের কাছে করার কিছুই নেই । তবে আধুনিক কম্পন যন্ত্র ইঁদুর তাড়াতে কতটা কাজে দেয় সেটাই এখন দেখার ৷
আরও পড়ুন :