নেতড়া (দক্ষিণ 24 পরগনা), 28 নভেম্বর: সরকারি পাঠাগার নাকি ভূতুড়ে বাড়ি, তা দেখে বুঝে উঠতে পারবেন না । ভাঙা দরজা-জানালা ৷ খসে পড়ছে দেওয়াল ও ছাদের চাঙড় । বইয়ের র্যাকগুলিও ভেঙে পড়ে রয়েছে যততত্র । ফাটল ধরেছে ছাদে ৷ সেখান থেকে বৃষ্টি হলেই জল পড়ে ৷ সেই জলে ভিজে নষ্ট হয়েছে বহু মূল্যবান বই ।
বেহাল অবস্থায় চলছে দক্ষিণ 24 পরগনার মগরাহাটের নেতড়া গ্রামের পাঠাগার ৷ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ভয়ে ভয়ে পাঠাগারে বসেই কাজ সামলাচ্ছেন গ্রন্থাগারিক । নতুন বিল্ডিং করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি ।
গ্রন্থাগারিক রূপমঞ্জরি দাস জানান, 2016 সাল থেকে গ্রন্থাগারিক নিয়োগ না-হওয়ায় পুরোপুরি বন্ধ ছিল নেতড়া গ্রাম্য পাঠাগারটি । গত এক মাস আগে তিনি এখানে গ্রন্থাগারিক হিসাবে যোগদান করেন । প্রথমে পাঠাগারে এসে অবাক হন তিনি ৷ এটা গ্রন্থাগার নাকি ভূতুড়ে বাড়ি বুঝে উঠতে পারেননি রূপমঞ্জরি দাস । তাই প্রথম প্রথম গ্রামের স্কুলেই বসতেন তিনি ।
পাঠাগারের বেহাল দশা
গ্রন্থাগারিক বলেন, "পরে পাঠাগারে একটি ঘরে চেয়ার টেবিল নিয়ে বসা শুরু করা আমি । দরজা-জানালা ভাঙা । কোনও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই । ফাটা ছাদ দিয়ে জল পড়ে নষ্ট হয়েছে মূল্যবান বই । পাঠাগারের ভেতর ভাঙা র্যাকে ধুলোমাখা বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল । এখন গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় একটু গুছিয়ে নিয়েছি । তবে বৃষ্টি হলে থাকা যায় না ।"
এলাকার মানুষজন বইপ্রেমী ৷ তাই অনেকেই আসেন পাঠাগার থেকে বই নিতে । তবে পাঠাগারের এমন বেহাল দশাতে কমেছে পাঠকের সংখ্যা । পাঠাগার মেরামতের অর্থ বরাদ্দ হলেও আগে গ্রন্থাগারিক না থাকায় সেই টাকা ফেরত চলে যায় । বর্তমানে নেতড়া গ্রাম্য পাঠাগার বসার উপযোগী নয় । তাই দ্রুত নতুন বিল্ডিং করার আবেদন করা হয়েছে প্রশাসনের কাছে ।
নতুন ভবনের দাবি
গ্রন্থাগারের পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সুবীর বসু জানান, 1942 সালে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে চালু হয় নেতড়া গ্রাম্য পাঠাগার ৷ পরে 1982 সালে সরকারিভাবে অনুমোদিত হয় । সেসময় এক জন গ্রন্থাগারিক ও একজন সাইকেল পিওন নিযুক্ত ছিলেন । পাঠকের সংখ্যা ছিল অনেক ৷ এলাকার মানুষজন এই পাঠাগার থেকে বই নিয়ে পড়তেন ।
তিনি বলেন, "গত 8 বছর কোনও গ্রন্থাগারিক না থাকায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় পাঠাগারটি । ফলে পাঠাগারের বিল্ডিং নির্মাণের অর্থ পেলেও কমিটি না থাকার কারণে অ্যাকাউন্ট বন্ধ ছিল ৷ তাই সেই টাকা ফেরত চলে যায় । বর্তমানে একজন গ্রন্থাগারিক এসেছেন ৷ প্রশাসন যদি পাঠাগারটিকে দ্রুত নতুন করে তৈরি করে দেন তাহলে পাঠকের সংখ্যা বাড়বে । ডিজিটাল যুগে মানুষ যেখানে বই পড়তে ভুলে গিয়েছে, সেখানে আজও এলাকার মানুষ আগ্রহী পাঠাগার থেকে বই নিয়ে পড়তে । তবে বেহাল দশা পাঠাগারের ।"
কবে মিটবে সমস্যা ?
ডায়মন্ড হারবার-1 ব্লকের বিডিও শেখ দিন মহম্মদের কথায়, "সম্প্রতি ওই পাঠাগারে একজন গ্রন্থাগারিক নিয়োগ হয়েছে ৷ এরপরই জেলা ও ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছি । নতুন বিল্ডিং করার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে । নতুন কমিটি গঠন হলেই খুব দ্রুত নতুন বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করা হবে ।" তবে কবে তেকে শুরু হবে কাজ, সে নিয়ে নির্দিষ্ট তারিখ কিছু জানাননি বিডিও ।