বর্ধমান, 10 জুন: একেবারে হঠাৎ বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হয়েছিল দিলীপ ঘোষের । পরদিন বেলাতেই কলকাতা থেকে বর্ধমানের জেলা বিজেপি কার্যালয়ে হাজির হন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ৷ তাঁকে ঘিরে নতুন উদ্যমে পথে নামেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা । যা দেখে দিলীপ ঘোষ প্রথম দিনেই মন্তব্য করেছিলেন, "প্রথম দিনেই ছয় মারলাম ৷"
দলীয় সূত্রে খবর, দিলীপ ঘোষ প্রথম দু'দিনেই টের পেয়েছিলেন যে জেলায় বিজেপির সংগঠন নেই । এমনকী বুথ কমিটিকে শুধু খাতায় কলমে শক্তিশালী দেখানো হয়েছিল । এর উপর বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ এসএস আলুওয়ালিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভের প্রকোপ পড়ে দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে । মেদিনীপুর লোকসভা আসনের প্রাক্তন সাংসদ দিলীপকে তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছিল ৷ এমনটাই শোনা যায় বিজেপির অন্দরে ।
এদিকে এবারের লোকসভা ভোটে দিলীপ ঘোষকে 1 লক্ষ 37 হাজার 981 ভোটে হারিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের কীর্তি আজাদ । 2019 সালে এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতাকে 2 হাজার 439 ভোটে হারিয়ে সাংসদ হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী এসএস আলুওয়ালিয়া ৷ মাত্র 15 দিনের প্রস্তুতিতে জয় পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন আলুওয়ালিয়া । বিজেপি আশা করেছিল, এই সাংসদের হাত ধরে দলীয় সংগঠন নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে । বাস্তবে দেখা গেল, দিনের পর দিন সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা দলের নেতা কর্মীরাই বিজেপি সাংসদের দেখা পায়নি ।
2021 সালে বিধানসভা নির্বাচনের পরে বিজেপি কর্মীরা যখন শাসকদলের হামলার কারণে ঘরছাড়া হয়েছিলেন, সেই সময়েও আলুওয়ালিয়ার সাহায্য মেলেনি । ফলে দলের অন্দরে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছিল ৷ যা প্রকাশ্যে আসতেই সাংসদের নির্দেশে অনেক পুরনো কর্মীকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় । বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে অন্য জেলার দায়িত্বে পাঠিয়ে এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় । ফলে লোকসভা ভোটে শাসকদলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে স্থানীয় বিজেপির নেতা-কর্মীদের দেখা যায়নি ।
পিছিয়ে পড়তেই শুনলেন গো-ব্যাক স্লোগান, দিলীপের শরীরী ভাষা অন্য বার্তা দিচ্ছে ?
বিজেপির একাংশের দাবি, প্রাক্তন সাংসদের কাজকর্মের খেসারত দিতে হল দিলীপ ঘোষকে । যদিও নাম ঘোষণার পরের দিন থেকেই বর্ধমান-দুর্গাপুরের মাটি কামড়ে পড়েছিলেন তিনি । সকাল ছ'টায় চা চক্র থেকে অনেক রাত পর্যন্ত বিভিন্নভাবে প্রচারে করেছিলেন তিনি । কিন্তু দিলীপ ঘোষের পাশে সেভাবে বিজেপি কর্মীদের দেখা যেত না ৷ তবুও মেদিনীপুরে নিজের টিমকে কাজে লাগিয়ে দিলীপ ঘোষ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন । এমনকী তৃণমূল কংগ্রেসের শিবিরে গিয়েও সেলফি তুলে, সরবত খেয়ে প্রচার চালান কু-কথার জন্য বিখ্য়াত এই বিজেপি নেতা ।
ফলে রাজনৈতিক মহলে এই বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসন নিয়ে একটা আশার আলো তৈরি হয়েছিল যে, লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হলেও দিলীপ ঘোষ কিছুটা হলেও এগিয়ে আছেন । তৃণমূল নেতারাও এই আসনে কীর্তি আজাদের জয় নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয়ে ছিলেন । তবে শেষ হাসি হাসেন কীর্তি আজাদই ।
এই বিষয়ে বিজেপি নেতা নরেশ কোনার বলেন, "দল যদি সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে লড়ত তাহলে এই ফল হত না ।" রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের বক্তব্য, "ধর্মের নামে সুড়সুড়ি দিয়ে বিজেপি নির্বাচনে জেতার চেষ্টা করেছিল । তারা মানুষের জন্য কোনও কাজ করেনি । সেই উত্তর মানুষ দিয়েছে ভোটবাক্সে ।"