মেদিনীপুর, 3 জুন: জঙ্গলমহল অধ্যুষিত পশ্চিম মেদিনীপুরে এবারের নির্বাচনী লড়াই দ্বিমুখী । মূলত লোকসভা কেন্দ্রের উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং গ্রামের মানুষের আশা পূরণের লক্ষ্যে এবারের নির্বাচনী ময়দানে লড়াই করেন তৃণমূল-বিজেপি-সিপিএমের প্রার্থীরা ৷ কিন্তু এবারের মেদিনীপুর লোকসভা দখল করবেন কে? ফল ঘোষণার একদিন আগে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ঘুরছে রাজ্য রাজনৈতিক মহলে ৷ দিলীপ ঘোষের জেতা আসন কী অগ্নিমিত্রা দখলে রাখতে পারবেন ? নাকি ওই আসনে এবারে সাংসদ হবেন জুন মালিয়া ? সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে মেদিনীপুরের সাতটি বিধানসভার মানুষ ।
মেদিনীপুরের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত খড়গপুর গ্রামীণ, অবাঙালি অধ্যুষিত খড়পুরপুর টাউন, কেশিয়াড়ি, দাঁতন, নারায়ণগড় এবং পূর্ব মেদিনীপুরের শেষ প্রান্ত এগরা নিয়ে তৈরি মেদিনীপুর লোকসভা আসনটি ৷ এবারের নির্বাচনে এই লোকসভায় মূল লড়াই তৃণমূলের মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া বনাম আসানসোলের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলের মধ্যে ।
1952 সাল থেকে 1977 সাল পর্যন্ত মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রটি কংগ্রেসের দখলে ছিল । এরপর 1996 সাল থেকে 2009 সাল পর্যন্ত বামেদের দখলে ছিল । 2014 সালে এই লোকসভা দখল করে তৃণমূল ৷ 2019 সালে তৃণমূলকে হারিয়ে এই লোকসভা আসনটি দখল করে বিজেপি । এই আসনে এবারের লড়াই মূলত গ্রামের উন্নয়ন, রাস্তা নির্মাণ, বেকারদের কাজের যোগান এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মানুষদের সুবিধা অসুবিধার কথা সামনে রেখে ৷ একই সঙ্গে রেলের কাজ এবং বিভিন্ন ছোট ছোট শিল্পের উন্নতিকরণও রয়েছে এই তালিকায় ।
এবারের নির্বাচনে এই আসনে যথেষ্ট কড়াকড়ি ছিল কমিশনের । তথ্য অনুযায়ী, এবারে মেদিনীপুর লোকসভার মোট ভোটার সংখ্যা ছিল 18 লক্ষ 11 হাজার 243 জন । যার মধ্যে পুরুষ ভোটার 9 লক্ষ 8 হাজার 303 জন এবং মহিলা 9 লক্ষ 2 হাজার 911 জন। এবারে এই লোকসভায় তৃনমূল কংগ্রেস, বিজেপি, বামেরা মিলিয়ে মোট 9 জন প্রার্থী লড়েছেন ৷ মোট পোলিং স্টেশনের সংখ্যা 1945টি । সেন্ট্রাল বাহিনী রাখা হয়েছিল গোটা জেলার জন্য 218 কোম্পানি ৷ সেইসঙ্গে রাজ্য পুলিশ ছিল 6901 জন । জেলায় স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা ছিল 313 টি । জেলায় মহিলা বুথের সংখ্যা 19 টি। মডেল বুথ 19 টি ৷
নির্বিঘ্নে ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ওয়েব কাস্টিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল কমিশনের তরফে ৷ সম্পূর্ণ লোকসভা কেন্দ্র জুড়ে ওয়েব ক্যাস্টিং ছিল 15600 টি । এবারের ভোটারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য 85 বছরের বেশি বয়সী ভোটার সংখ্যা ছিল 11 হাজার 670 জন ৷ একশোর বেশি বয়সের ভোটারের সংখ্যা 160 জন ৷ প্রতিবন্ধী ভোটারের সংখ্যা 7 হাজার 845 জন । যদিও সবচেয়ে বেশি ক্যাম্পেনিং এর সংখ্যা ছিল এই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৷ প্রায় 13 হাজার 20টি ভোট প্রচারের জন্য আবেদন করেছিল রাজনৈতিক প্রার্থীরা ৷ যার মধ্যে 9696 টি আবেদন মঞ্জুর করে কমিশন ।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এবারে ভোট নিয়ে রাজনৈতিক অভিযোগের সংখ্যা 37 হাজার 360 টি ৷ যার মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়েছে 33 হাজার 316টি ৷ ড্রপ করা হয়েছে 3992 টি এবং পেন্ডিং রয়েছে 52 টি । মেদিনীপুর লোকসভার খড়গপুর, দাঁতন, কেশিয়াড়ি-সহ বিভিন্ন জায়গায় ভোটারদের ভোট না দিতে দেওয়া, বুথে বুথে কলকাতা পুলিশের উপস্থিতি এবং বিভিন্ন জায়গায় শাসক দলের সন্ত্রাস নিয়ে সরব হয়েছেন এখানকার বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল। অন্যদিকে, বেশ কিছু বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং পোলিং এজেন্টের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন শাসকদলের প্রার্থী জুন মালিয়া । সব মিলিয়ে এই লোকসভায় বিক্ষিপ্ত গণ্ডগোলের মধ্যেও ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণ ।
মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে গণনার জন্য সেন্টার করা হয়েছে খড়গপুর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে। মেদিনীপুর লোকসভায় ভোট পড়েছে 81.56 শতাংশ। সূত্র অনুযায়ী, মেদিনীপুর লোকসভায় মোট 98 টি টেবিল নিয়ে মোট 22 রাউন্ড গণনা হবে ৷ আর এই গণনা শুরু হবে মঙ্গলবার সকাল 8টা থেকে । নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে তৃণমূল এবং বিজেপি দু'জনই আশাবাদী । লড়াইটা যে টক্করে টক্করে হয়েছে, সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে না কোন দলই ।