মালদা, 25 ফেব্রুয়ারি: সরকারিভাবে চেষ্টা চলছে ৷ চলছে নিয়মিত সচেতনতার প্রচার ৷ 18 বছর বয়সের আগে মেয়েদের বিয়ে দিলে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে, অভিভাবকদের সেসব জানাতে প্রত্যন্ত গ্রামেও ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা ৷ কিন্তু তারপরেও মানুষ যে সচেতন হচ্ছে না তার প্রমাণ মিলেছে ৷
গত শুক্রবার মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে একসঙ্গে চারটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন এক প্রসূতি ৷ হাসপাতালের নথিতে লেখা, তাঁর বয়স 18 বছর ৷ কিন্তু আধার কার্ড জানাচ্ছে, তার বয়স এখনও 18 বছর পূর্ণ হয়নি ৷ তার জন্য আরও দু’মাস অপেক্ষা করতে হবে ৷ এক নাবালিকার একসঙ্গে চারটি সন্তানের জন্ম হওয়ার ঘটনা মালদা মেডিক্যালের ইতিহাসে প্রথম ৷ তবে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আরও একবার নাবালিকা গর্ভবতীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর ৷

কিছু প্রসব সমস্যা নিয়ে শুক্রবার সকালে গাজোল ব্লকের এক গৃহবধূকে মালদা মেডিক্যালে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন ৷ সেই রাতেই স্বাভাবিক প্রসবে একসঙ্গে চার কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি ৷ প্রায় 45 মিনিট ধরে চলে প্রসবপর্ব ৷ স্বাভাবিক কারণেই সদ্যোজাতদের ওজন ছিল অনেকটা কম ৷ তিনটি বাচ্চার ওজন ছিল এক কিলো তিনশো গ্রামের সামান্য বেশি৷ আরেকটি সন্তানের ওজন এক কিলো 50 গ্রাম ৷ মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনটি বাচ্চা সুস্থ থাকলেও সবচেয়ে কম ওজনের বাচ্চাটি কিছুটা অসুস্থ ৷ সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটে তার চিকিৎসা চলছে ৷
সদ্য মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া ওই কিশোরীর মা বলেন, “আমাদের বাড়ি মানিকচক ব্লকে ৷ এলাকারই স্কুলে পড়ত মেয়ে ৷ বছর দুয়েক আগে সে হঠাৎ বিয়ের কথা বলতে শুরু করে ৷ ওর সঙ্গে কোনও ছেলের সম্পর্ক রয়েছে কি না, জানার চেষ্টা করি ৷ কিন্তু মেয়ের সঙ্গে কোনও ছেলের সম্পর্ক ছিল না ৷ কিন্তু আমরা ওর কথায় ভয় পেয়ে যাই ৷ বিয়ে না দিলে যদি বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় !’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘নিজেরাই পাত্র খুঁজে বছর দুয়েক আগে মেয়ের বিয়ে দিই ৷ পাত্র গাজোলের ৷ ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করে ৷ বিয়ের পর মেয়ের সংসার ভালোই চলছিল ৷ এরই মধ্যে মেয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ে ৷ চিকিৎসা চলাকালীনই আমরা জানতে পারি, ওর পেটে তিনটে বাচ্চা রয়েছে ৷ শুক্রবার ওকে হাসপাতালে ভর্তি করি ৷ সেদিন রাতে মেয়ে চারটি বাচ্চার জন্ম দিয়েছে ৷ সব মেয়ে ৷ আমরা খুশি ৷ মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনও খুশি ৷ তিনটি বাচ্চা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে ৷ তবে একটি বাচ্চা কিছুটা অসুস্থ ৷”
মালদা মেডিক্যালের সহকারী অধ্যক্ষ তথা হাসপাতাল সুপার প্রসেনজিৎ বর বলেন, “খবর পেয়েছি মেডিক্যালের মাতৃমা বিভাগে এক প্রসূতিকে ভর্তি করা হয়েছিল ৷ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই তাঁর সন্তান প্রসব হয়েছে ৷ তিনি চারটি কন্যাসন্তান প্রসব করেছেন ৷ গাজোলের কোনও গ্রামে তাঁর বাড়ি ৷ যতদূর খবর পেয়েছি, তিনটি বাচ্চা এখন ভালোই রয়েছে ৷ তবে চতুর্থ বাচ্চাটিকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে ৷ গত 21 ফেব্রুয়ারি তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল ৷ সেদিনই তাঁর সন্তান প্রসব হয় ৷”
বিষয়টি নিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত ভাদুড়ির বক্তব্য, “শেষবারের সার্ভে অনুযায়ী মালদা জেলায় নাবালিকা গর্ভবতীর হার ছিল প্রায় 21 শতাংশ ৷ গত বছর সেই হার প্রায় 19 শতাংশে নেমে এসেছিল ৷ বর্তমানে এখানে নাবালিকা গর্ভবতীর হার প্রায় 16 শতাংশ ৷ বাল্যবিবাহ রুখতে আমরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি ৷ এই কাজ করতে গিয়ে কখনও কখনও স্বাস্থ্যকর্মীদের সামাজিক সমস্যার মুখেও পড়তে হয় ৷ তবুও আমরা কেউ হাল ছাড়িনি ৷ তার জন্যই বাল্যবিবাহের হার এই জেলায় ক্রমশ নিম্নমুখী ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনও কোনও সময় নাবালিকাদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমরা খবর পাই ৷ সেক্ষেত্রে আমাদের চেষ্টা থাকে, যাতে 18 বছর বয়সের আগে কোনও নাবালিকা গর্ভবতী না হয়ে পড়ে ৷ আমরা আশা করছি, এই জেলায় নাবালিকা গর্ভবতীর হার আরও কমিয়ে আনতে পারব ৷”