মেদিনীপুর, 14 জুন: কুয়েতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড প্রাণ কেড়েছে বহু ভারতীয় পরিযায়ী শ্রমিকের ৷ মৃতদের মধ্যে রয়েছেন এ রাজ্যের এক ব্যক্তিও ৷ মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের নাম দ্বারিকেশ পট্টনায়েক (52)। তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলার মেদিনীপুর শহরে ৷ এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে মৃতের পরিবারে । দেহ কবে বাড়ি ফিরবে, এখন সেই অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা ।
পরিবারের দাবি, রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত দ্বারিকেশ পট্টনায়েকর মৃত্যুর খবর তাদের জানানো হয়নি । তবে যে কোম্পানির হয়ে কাজ করতে তিনি কুয়েতে গিয়েছিলেন সেই কর্তৃপক্ষের তরফে ফোন করে বাড়ির লোককে মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে । কিন্তু কবে মৃত শ্রমিকের দেহ এসে পৌঁছবে বাড়িতে, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও তথ্য নেই পরিবারের কাছে ।
জানা গিয়েছে, দ্বারিকেশের আদি বাড়ি দাঁতনের তুরকাতে ৷ তবে বছর পাঁচেক আগে তিনি মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লীতে নিজে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন । স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার ৷ মেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া ৷ বছর খানেক আগে শেষবারের মতো মেদিনীপুর এসেছিলেন দ্বারিকেশ । কুয়েতের একটি বেসরকারি সংস্থায় ইঞ্জিনিয়ার সুপারভাইজার পদে কাজ করতেন তিনি । কথা ছিল, এই বছর দুর্গা পুজো ও মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে একেবারে সেপ্টেম্বরে কুয়েত থেকে মেদিনীপুরে ফিরবেন দ্বারিকেশ পট্টনায়েক । কিন্তু আর জীবিত অবস্থায় বাড়ি ফেরা হল না তাঁর ৷ কুয়েতে ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রাণ কাড়ল মেদিনীপুরের পরিযায়ী শ্রমিকের ৷ কফিন-বন্দি দেহটা কখন মেদিনীপুরের মাটিতে ফিরবে, সেদিকেই এখন তাকিয়ে গোটা পরিবার ।
এই বিষয়ে মৃতের শ্যালক সায়ন্তন পট্টনায়েক বলেন, "জামাইবাবুর একজন বন্ধু কুয়েতে থাকতেন ৷ আগুন লাগার খবর দেখে ভোরবেলা আমরা তাঁকে ফোন করি । তিনি সেসময় কুয়েতে ছিলেন না কেরলে তাঁর বাড়িতে ফিরেছিলেন ৷ তাই এ বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারনেনি ৷ এরপর দুপুরবেলা জামাইবাবুর কোম্পানি মারফত আমাদের কাছে ফোন আসে ৷ তারা জানায়, জামাইবাবু আর নেই । তবে গোটা ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে নিছক কোনও দুর্ঘটনা । এখন কোথায় কী হয়েছে, তা বলতে পারব না । এই ঘটনায় আমরা মর্মাহত ৷ আমরা অপেক্ষা করে আছি, আমাদের প্রিয় মানুষের দেহ কবে পাব ।"
উল্লেখ্য, গত বুধবার কুয়েতের একটি বহুতলে বিধ্বংসী আগুন লাগে ৷ তাতে মৃত্যু হয়েছে এখনও পর্যন্ত 49 জনের ৷ যার মধ্যে 45 জন ভারতীয় বলে জানা গিয়েছে । মূলত ভোরের দিকে কুয়েতের রাজধানী শহরের দক্ষিণে মাঙ্গাফ এলাকার একটি বহুতল আবাসনে আগুন লাগে । ওই আবাসনে থাকতেন শ্রমিকেরা ৷ যাঁদের অধিকাংশই ভারতীয় । তবে কী কারণে আগুন লেগেছিল, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে । যদিও সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে দেহগুলি ফিরিয়ে আনতে ভারতীয় বায়ুসেনার একটি বিমান কুয়েতের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে । সেই বিমানে করেই ফিরে আসবে পশ্চিম মেদিনীপুরের পরিযায়ী শ্রমিকের দেহও ।