বর্ধমান, 11 জুলাই: ইতিহাসে পিএইচডি করার জন্য পরীক্ষা দিয়ে প্রথম হয়েছেন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম। কিন্তু এখনও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি। তাঁর কারণেই ইতিহাস বিভাগের ভর্তি প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে বলেও স্বীকার করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারপরেই হুগলি জেলে দু'দিনের প্রতীকী অনশনে বসেছেন অর্ণব।
অর্ণব দামের পিএইচডি সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও কারামন্ত্রীর কথা হয়েছে বলে জানান তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ ৷ বৃহস্পতিবার এক্স হ্যান্ডেলে কুণাল লেখেন, "মাওবাদী অভিযোগে বন্দি অর্ণব দামকে পিএইচডি করতে দিতে হবে। ও যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। শিক্ষামন্ত্রী ও কারামন্ত্রীর কথা হয়েছে। ওঁরা সহযোগিতা করবেন। অর্ণবকে হুগলি থেকে বর্ধমান জেলে সরানো হবে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ আন্তরিক। তবে উপাচার্য অকারণ জট তৈরি করে বাধা দিচ্ছেন।"
মাওবাদী অভিযোগে বন্দি অর্ণব দামকে পিএইচডি করতে দিতে হবে। ও যোগ্যতা প্রমাণ করেছে।
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) July 11, 2024
শিক্ষামন্ত্রী ও কারামন্ত্রীর কথা হয়েছে। ওঁরা সহযোগিতা করবেন। অর্ণবকে হুগলি থেকে বর্ধমান জেলে সরানো হবে।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ আন্তরিক । তবে উপাচার্য অকারণ জট তৈরি করে বাধা দিচ্ছেন।
অনশনে বসার বিষয়টি তিনি জানিয়েছেন জেল কর্তৃপক্ষকে। বুধবার রাত থেকে দু'দিন অনশন করবেন বলেও জানা গিয়েছে। অন্যদিকে, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলি জেলা সংশোধানাগার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে এক জেলবন্দি পিএইডডি করতে চাইছে বলে উল্লেখ করা হয়। সেই মতো তাঁকে অনুমতিও দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, জেলে থেকে পিএইডডি করা যেতেই পারে। কিন্তু অর্ণব যেহেতু মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলেন সেটা সংশোধনাগার সূত্রে জানানো হয়নি। ফলে অতীতে যেভাবে মাওবাদী হিংসাত্মক কার্যকলাপে অর্ণব যুক্ত ছিলেন সেই রকম বন্দিকে ক্লাস করতে দিলে কড়া নিরাপত্তার প্রয়োজন হবে। তাঁদের আশঙ্কা, যদি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অর্ণব কোনও ঘটনা ঘটায় সেক্ষেত্রে কী হবে !
এই প্রসঙ্গে, এপিডিআর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলেন, "একজন মাওবাদী সমাজের মূলস্রোতে ফেরার চেষ্টা করছেন। তাঁকে সহযোগিতা করছে কারা কর্তৃপক্ষ, সরকার সকলেই। এটা ভালো উদ্যোগ। তাদের সহযোগিতা না-পেলে অর্ণব পরীক্ষায় বসতে পারতেন না । এরপরেই অর্ণব নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে প্রথম হন । অথচ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাত দেখিয়ে তাঁকে ভর্তি নিচ্ছে না । এটা তো অন্যায় কাজ। যেখানে সরকার, বিচারবিভাগ, কারাবিভাগ অনুমতি দিয়েছে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আপত্তি কেন ? ফলে প্রতিবাদ জানিয়ে জেলে অর্ণব অনশনে বসেছেন । সেখানে যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তার দায় কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরেই বর্তাবে ।’’
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্র বলেন, ‘‘অর্ণব কীভাবে রেগুলার ক্লাস করবেন সেটা হুগলি জেল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। যেহেতু এটা এমএ কিংবা এমএসসি'র ক্লাস নয়, তাই কয়েকদিন দেরি হলে তো অসুবিধা হবে না ।’’ চিঠির উত্তর পেলে সেই মতো তারা সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানিয়েছেন উপাচার্য।
হুগলি জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল রাতে অর্ণব দাম জেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, তিনি দু’দিনের জন্য অনশন করছেন । ফলে জেলের কোনও খাবার তিনি খাবেন না । বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি’র পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পরেও কেন তাঁকে ভরতি নেওয়া হচ্ছে না, সেই প্রতিবাদেই তাঁর এই অনশন বলে জানিয়েছেন জেল কর্তৃপক্ষকে । বিষয়টি ইতিমধ্যেই হুগলি জেল কর্তৃপক্ষ উপর মহলে জানিয়েছে বলে জানা গিয়েছে ।