কাঁকসা, 1 অক্টোবর: বাংলার দুর্গোৎসব হেরিটেজ তকমা পেয়েছে। এখন বিশ্ববন্দিত বাঙালির এই উৎসব। বিগ বাজেটের আলোকোজ্জ্বল থিমে পুজোর ভিড় ৷ আবার অন্যদিকে গ্রাম বাংলায় শতাব্দী প্রাচীন বনেদি বাড়ির দুর্গা দেউলে আড়ম্বরপূর্ণ উৎসবের মহা আয়োজনে এ যেন এক অন্য দুর্গাপুজো। একেবারে আটপৌড়ে দুর্গোৎসব দুর্গাপুর মহকুমার জঙ্গল-ঘেরা কাঁকসার হরিকির দুর্গোৎসবের ইতিকথা তুলে ধরতে পৌঁছে গেল ইটিভি ভারতের ক্যামেরা।
অষ্টমীর রাতে দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে নিজের হাতে গড়েছিলেন মূর্তি। নিজের মন্ত্রেই পুজো শুরু করেছিলেন আদিবাসী যুবক। আজও মূর্তি গড়ার দিন থেকেই ভক্তি, নিষ্ঠা আর শ্রদ্ধার সঙ্গে দেবীর গান, হরিনাম, সংকীর্তন আর নিজেদের মন্ত্র উচ্চারণ করা হয়। তাই কাঁকসার হরিকির আদিবাসী ঘরের দুর্গাপুজো একেবারেই ব্যতিক্রমী।
পাঁচ বছর আগে খেলার ছলে মূর্তি গড়েছিল কাঁকসার মলানদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের হরিকির ছোট্ট আদিবাসী গ্রামে রবীন্দ্রনাথ হাঁসদা নামের আদিবাসী যুবক। পুজোও শুরু করেছিলেন। অষ্টমীর রাতে ওই আদিবাসী যুবক দেবীর স্বপ্নাদেশ পান জাঁকজমকভাবে পুজো শুরু করার। আদিবাসী পরিবারের দাবি, তারপর পুরোহিত পুজো করতে বসলে তাঁর উপর ভর করেন দেবী ! ভয় পেয়ে চলে যান পুরোহিত। এরপরই নিজের মন্ত্রে পুজো শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ হাঁসদা। তাতে দেবীও সন্তুষ্ট হন। একসময় পরিবারের কর্তা বলাই হাঁসদাকে সিংহ রূপে দেখা দিয়েছিলেন মা। আবার একবার পরিবারের মহিলার উপর যখন অশুভ শক্তিও ভর করেছিল, তখন ভবতারিণী রূপে দেখা দিয়ে তার বিনাশ করেছিলেন দেবী। এই পুজোকে ঘিরে এমনই নানা অলৌকিক কথা শোনা গেল এই পরিবারের সদস্যদের থেকে ৷
রবীন্দ্রনাথ হাঁসদা বলেন, "আমরা মায়ের মূর্তি গড়ার আগে পুজো করি। হরিনাম আর মায়ের গান গাই। মা যেদিন থেকে বাড়িতে এসেছে, সেদিন থেকে দুঃখ-কষ্ট সব দূর হয়েছে। চারদিন ধরে পুজো করি আমি, আমার দাদা, দিদি আর বাবা। বহু মানুষ আসেন পুজো দেখতে। সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরেছে পরিবার।"
বলাই হাঁসদা বলেন, "মা কখনও সরষে জমিতে সিংহ রূপে, কখনও হাওয়ার মধ্যে ভেসে এসে ভবতারিণী রূপে দেখা দেন ৷ কোনও বৈদিক মন্ত্র নেই, মায়ের নির্দেশে আমরা নিজেরাই পুজো করি। অগাধ আস্থা আর ভক্তি ভরে পুজো দেওয়া হলে মা মনের ইচ্ছাপূরণ করেন।"