হাওড়া, 15 অক্টোবর: এটিএম থেকে উধাও লক্ষাধিক টাকা ৷ এই ঘটনা কোনও নির্জন জায়গায় ঘটেনি ৷ বরং এমন জায়গায় ঘটেছে, যেখানে প্রায় 24 ঘণ্টাই ভিড় লেগে থাকে ৷ তাই প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে এই ঘটনা ঘটল ?
ঘটনাস্থল হাওড়া স্টেশন চত্বর ৷ সেখানে ক্যাব রোডের কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এটিএম রয়েছে ৷ সেই এটিএম থেকেই গত 28 সেপ্টেম্বর উধাও হয়ে যায় 9 লক্ষ 15 হাজার টাকা । রেল পুলিশ এই নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ৷ ঘটনার পর কেটে গিয়েছে 17 দিন ৷ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ ৷
রেল পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনাটি 28 সেপ্টেম্বর ঘটলেও বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নজরে আসে দিন দুয়েক পর ৷ সেদিন ব্যাংকের এটিএম ম্যানেজার সেখানে এটিএম পরীক্ষা করতে যান, তখনই তিনি দেখেন যে ভল্ট ভেঙে পড়ে রয়েছে ৷ টাকা নেই ৷
গত 1 অক্টোবর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হাওড়ার গোলাবাড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে । গত 13 অক্টোবর গোলাবাড়ি থানা থেকে মামলাটি হাওড়া জিআরপি থানাতে হস্তান্তর করা হয় । ঘটনার তদন্তে নেমে জিআরপি থানা জানতে পারে, ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এটিএম কাউন্টারে কোনও প্রহরী ছিল না ।
সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে তদন্তকারী আধিকারিকরা দেখতে পান ঘটনার দিন একজন দুষ্কৃতী মাথায় হেলমেট পরে এটিএম কাউন্টারে ঢোকে । এর পরই ওই কাউন্টারে শাটার ফেলে দেওয়া হয় । ওই দুষ্কৃতীর পরনে ছিল নীল গেঞ্জি এবং কালো প্যান্ট । পিঠে কালো ব্যাগ । মাত্র 9 সেকেন্ডের মধ্যে তিনি কাউন্টারের মধ্যে থাকা সিসিটিভি-র ক্যামেরার তার কেটে দিয়ে ডিভিডি হাতিয়ে নেন । এরপর তিনি একটি নকল চাবি দিয়ে এটিএম মেশিন খুলে ভল্টের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সমস্ত টাকা হাতিয়ে নেন ।
জিআরপি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এটিএমের ভিতরের সিসিটিভি থেকে সেরকমভাবে কোনও ছবি না পাওয়া গেলেও স্টেশনের বাইরে সিসিটিভি থেকে দেখা যায় অল্প সময়ের মধ্যে ওই দুষ্কৃতী বাইরে এসে সেখানে দাঁড়িয়ে আরও দুজনের সঙ্গে কথা বলছেন । এরপর পায়ে হেঁটে তাঁকে স্টেশনের বাইরের ভিড়ে হারিয়ে যেতে দেখা যায় । আপাতত সেই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে চাইছে পুলিশ ৷
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, যেভাবে এটিএম থেকে টাকা চুরি করেছেন ওই দুষ্কৃতী, তাতে এই বিষয়ে তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞ । শুধু তাই নয়, ভল্টের পাসওয়ার্ড পর্যন্ত তাঁর জানা ছিল । সেই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে তিনি সমস্ত টাকা হাতিয়ে নেন । পুলিশ আধিকারিকরা মনে করছেন, ওই দুষ্কৃতীর এটিএমে টাকা ভর্তি করার আগের অভিজ্ঞতা থাকতে পারে ।
গত কয়েক বছর ব্যাংকের এটিএম ম্যানেজার পরিবর্তন হলেও এটিএমের পাসওয়ার্ড একই ছিল বলে তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে । এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের সন্দেহ ব্যাংকের কোনও কর্মচারীর যোগাযোগ থাকতে পারে ৷ এই ব্যাপারে তদন্তকারী আধিকারিকরা ব্যাংক কর্মীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন বলে সূত্রের খবর ।
যদিও পাসওয়ার্ড প্রসঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জোনাল অফিসের অনুমতি ছাড়া তারা এটিএম মেশিনের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারে না । এই ব্যাপারে তাঁদের টেকনিক্যাল এক্সপার্টরা দু’দিন বাদে ওই এটিএম পরীক্ষা করবেন ।