কলকাতা, 1 অগস্ট: লেক গার্ডেন্সের গেস্ট হাউসে তরুণীকে খুন ও যুবকের আত্মহত্যার ঘটনায় বিহার-যোগ খুঁজে পেল লালবাজার ৷ এই ঘটনায় দেহ দুটির সামনে থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল ৷ লালবাজারের গোয়েন্দাদের অনুমান, খুব সম্ভবত সেই আগ্নেয়াস্ত্রটি বিহারের মুঙ্গেরের কারখানায় তৈরি হয়েছিল এবং সেখান থেকে এ রাজ্যে পাচার হয়েছিল ৷ এর থেকেই একপ্রকার বিহার ও বাংলার অস্ত্র পাচারের যোগ স্পষ্ট ।
এই বিষয় নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের এসটিএফের একজন অতিরিক্ত নগরপাল পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিক বলেন, "এই বিষয়টি অত্যন্ত জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ । এই ঘটনায় মাস্টারমাইন্ডের নাম হল অনিল কুমার যাদব । তবে আমরা তাকে গ্রেফতার করতে পারিনি । তার তথ্য এবং ছবি আমরা বিহার পুলিশের এসটিএফের কাছে পাঠিয়েছি । এছাড়াও, এই বিষয়ে প্রতিনিয়ত বিহার পুলিশের একটি বিশেষ দলের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখে চলেছি ।"
গত 3 জুলাই, লেক থানা এলাকায় একটি গেস্ট হাউস থেকে এক তরুণী ও যুবকের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয় । তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই তরুণীকে প্রথমে 'হত্যা' করে নিজেও গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হন ওই যুবক । সেই ঘটনায় উদ্ধার হয়েছিল একটি আগ্নেয়াস্ত্র । ওই আগ্নেয়াস্ত্র কোথা থেকে এল তার খোঁজ করতেই তদন্তে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷
লালবাজারের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রটি তৈরি হয়েছিল বিহারের মুঙ্গেরের মাধারবা থানার অন্তর্গত রূপরহিমপুর গ্রামের কারখানায় । লেক গার্ডেন্সের ঘটনার পরেই গত 30 জুলাই বিহারে গোপন অভিযান চালান কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দারা ৷ বিহারে তৈরি হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র ৷ তারপর তা পাচার হয়ে আসছে পশ্চিমবঙ্গে ৷ এই আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির অভিযোগে মহম্মদ চাঁদ ওরফে দুমু, মহম্মদ ইরফান, মহম্মদ শাহিদ আলম, অখিলেশ কৌশল ও মহম্মদ পারওয়ান আলমকে গ্রেফতার করা হয় । পাশাপাশি, তাদের কাছে থেকে উদ্ধার হয় একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম ৷
ধৃতদের জেরা করে লেক থানা এলাকার সেই ঘটনায় সঙ্গে বিহারে অস্ত্র তৈরির যোগ খুঁজে পেয়েছেন কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিকরা । লালবাজার সূত্রের খবর, এই রাজ্যের একাধিক যুবক বিহারের মুঙ্গের থেকে আগ্নেয়াস্ত্র এনে এখানে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে । এর পাশাপাশি, বাংলায় নতুন করে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানা তৈরি হচ্ছে । পাশাপাশি, সেখান থেকে প্রশিক্ষিত লোকেদের এনে কলকাতায় একাধিক যুবকদের হাতে কলমে আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে ।
এক নজরে বাংলায় কবে কোথায় অস্ত্র উদ্ধার
- 25 মার্চ মুর্শিদাবাদে লালগোলা থেকে উদ্ধার হয় একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ৷
- 28 এপ্রিল উত্তর 24 পরগনার সন্দেশখালিতে গোপন অভিযান চালিয়ে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের জাওয়ানরা একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেন ।
- 24 মে কলকাতা থেকে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র । সেই ঘটনায় দু'জনকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দারা ।
- 6 জুলাই চোপড়ার নেতা তাজেমুল হক ওরফে জেসিবির কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি আগ্নেয়াস্ত্র ।
- 25 জুলাই দক্ষিণ 24 পরগনার কুলতলিতে সাদ্দাম লস্করের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বেশ কিছু পরিমাণে আগ্নেয়াস্ত্র ।
- 29 জুলাই সিউড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে ।
- 31 জুলাই খয়রাশোল থেকে উদ্ধার হয় আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে একজন গ্রেফতার হয় ।