ETV Bharat / state

ই-বর্জ্য কিনতে নাগরিকদের দুয়ারে দুয়ারে যাবে কলকাতা কর্পোরেশন - E Waste Collection - E WASTE COLLECTION

KMC to Buy E-Waste: জনজীবনে বাড়ছে ই-বর্জ্যের পরিমাণ, যা দিন দিন পরিবেশ দূষণে বড় ভূমিক নিচ্ছে ৷ সেই কারণে এবার বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে কলকাতা পৌরনিগম ৷

E Waste
ই-বর্জ্যের বিভিন্ন অংশ আলাদা করার মুহূর্ত (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : May 15, 2024, 11:01 PM IST

কলকাতা, 15 মে: প্রতিদিন উৎপাদিত জঞ্জাল পৃথকীকরণ থেকে প্রক্রিয়াকরণ করে উঠতেই কালঘাম ঝড়ছে কর্পোরেশনের । তার মধ্যেই রীতিমত চোখ রাঙাচ্ছে বৈদ্যুতিন বর্জ্যের দূষণ । সেই দূষণে লাগাম লাগাতে এবার কলকাতা কর্পোরেশন নিল বড় সিদ্ধান্ত । বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকদের থেকে ই-বর্জ্য কিনবে পৌরনিগম । ভোট মিটলেই পাইলট প্রকল্প শুরু হবে মহানগরে বেশ কয়েকটি এলাকায় । সাফল্য পেলে বরো ও ওয়ার্ড ভিত্তিক হবে সংগ্রহ শিবির ।

ধাপার বিশাল জঞ্জাল পাহাড়ের দূষণ মহানগরের বাসিন্দাদের জনজীবনে নেতিবাচক ছাপ ফেলছে । তাই দূষণ ঠেকাতে পরিবেশ আদালতের নির্দেশে সেই জঞ্জাল স্তূপ থেকে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য পৃথক করা ও দুটোই বিভিন্ন প্রক্রিয়াকরণ করা থেকে পুনর্ব্যবহার যোগ্য করে তোলার কাজ করছে কলকাতা কর্পোরেশন । যদিও সেই কাজের গতি অত্যন্ত শ্লথ । প্রতি ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি সবুজ ও নীল বালতি দিয়ে উৎস থেকেই জঞ্জাল পৃথকীকরণ প্রকল্পের সূচনা করলেও সেই কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে । আর এই পরিস্থিতিতে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কলকাতার ই-বর্জ্য ।

বৈদ্যুতিন বর্জ্য থেকে মূলত মাটি, জল ও বায়ু দূষিত হয় । ফলে উৎস থেকে লাগাম না দেওয়া গেলে সেটা ভয়ঙ্কর আকার নেবে । বাড়ির খারাপ টিভি, রেডিয়ো, কম্পিউটার, প্রিন্টার, ছোট যন্ত্রাংশ, ঘড়ি, ক্যালকুলেটর এই ধরনের বৈদ্যুতিন যন্ত্রাংশ ই-বর্জ্যের মধ্যে পড়ছে ।

সেগুলি বিভিন্ন সময় সাধারণ জঞ্জালের সঙ্গেই মানুষজন মিশিয়ে ফেলে দিচ্ছে । উৎস থেকে বর্জ্য পৃথকীকরণ সঠিকভাবে না হওয়াতে কেউ নজরদারিও করছে না । তবে কম্প্যাক্টর স্টেশন বা ধাপায় সেগুলি পড়তেই সমস্যা বাড়ছে । এই সমস্যা সমাধানে কলকাতা কর্পোরেশন ই-বর্জ্য নীতি তৈরি করে । কীভাবে এগুলি সংগ্রহ করা হবে, নিয়ে যাওয়া হবে, কোথায় ফেলা হবে, কীভাবে প্রক্রিয়াকরণ করা হবে ইত্যাদি । এই ছবিটার একটি নকশা প্রস্তুত করেছে কলকাতা কর্পোরেশন । এবার সেটাই বাস্তবায়নের পালা ।

কীভাবে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হচ্ছে ?

এই প্রশ্নের উত্তরে কলকাতা কর্পোরেশনের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, কলকাতার নাগরিকদের থেকে ই-বর্জ্য কিনে নেবে কলকাতা কর্পোরেশন । এই সম্পর্কে প্রতিটা এলাকায় লাগাতার প্রচার শুরু হবে । বাড়ি বাড়ি লিফলেট বিলি করা হবে, মাইকিং হবে । এরপর পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে কলকাতার বেশ কিছু এলাকায় শিবির করা হবে । সেখানে বিশেষ প্রচার চালানো হবে । যাতে নাগরিকরা তাদের কাছে থাকা ই-বর্জ্য দিয়ে যায় । শূন্য হাতে ফিরতে হবে না । বৈদ্যুতিন জঞ্জালের বিনিময় পাবেন টাকা ।

এই শিবিরগুলোয় কেমন সাড়া মিলছে দেখে ধীরে ধীরে বড় ভিত্তিক বা ওয়ার্ড ভিত্তিক সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যাওয়া হবে । কলকাতা কর্পোরেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ই-বর্জ্য সম্পর্কিত নথি অনুমোদন হয়েছে । এই কর্মকাণ্ড সাহায্য করবে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ । কর্পোরেশন যে বর্জ্য সংগ্রহ করবে, সেই গোটাটাই রাজ্য কিনবে । বিদেশে অনেক জায়গায় নির্দিষ্ট ক্যাম্প হয় । বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের উৎপাদক সংস্থা আছে, যারা এই বর্জ্য 10-15 শতাংশ পুনর্ব্যবহার যোগ্য করে ব্যবহার করে । তাদের কাছে রাজ্য এই ই-বর্জ্য বিক্রি করে দেবে ।

এই পদক্ষেপ নিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, "বিশ্বব্যাপী, প্রতি বছর ই-বর্জ্য উৎপাদনের বর্ধিত হার প্রায় 2 মেট্রিক টন । এটি অনুমান করা হয় যে 2030 সালে প্রায় 74 মেগা টন ই-বর্জ্য উৎপাদিত হবে । তাই, ই-বর্জ্য পরিবেশের জন্য একটি বড় বিপদ হতে পারে । বিষাক্ত ধাতুগুলি যেমন, সীসা, পারদ, নিকেল এবং ক্যাডমিয়াম ই-বর্জ্য থেকে পরিবেশে নির্গত হয় । অবশেষে মাটি, পলি, ভূগর্ভস্থ জল এবং পৃষ্ঠের জলে প্রবেশ করে । পরিবেশে বিষাক্ত ধাতু নিঃসরণ মানব স্বাস্থ্য, জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে । উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ইলেকট্রনিক বর্জ্যের নিয়মনীতিহীন ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াকরণ থেকে মানবস্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ৷ তাই এটা লাগাম দেওয়া প্রয়োজন ।

আরও পড়ুন :

  1. পরিবেশ রক্ষায় বৈদ্যুতিন জঞ্জাল সংগ্রহে লায়ন্স ক্লাব, পরিবর্তে বিলি গাছ
  2. বৈদ্যুতিন জঞ্জাল নিয়ে নয়া পদক্ষেপ কর্পোরেশনের, প্রতি বরোতে হচ্ছে কালেকশন সেন্টার

কলকাতা, 15 মে: প্রতিদিন উৎপাদিত জঞ্জাল পৃথকীকরণ থেকে প্রক্রিয়াকরণ করে উঠতেই কালঘাম ঝড়ছে কর্পোরেশনের । তার মধ্যেই রীতিমত চোখ রাঙাচ্ছে বৈদ্যুতিন বর্জ্যের দূষণ । সেই দূষণে লাগাম লাগাতে এবার কলকাতা কর্পোরেশন নিল বড় সিদ্ধান্ত । বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকদের থেকে ই-বর্জ্য কিনবে পৌরনিগম । ভোট মিটলেই পাইলট প্রকল্প শুরু হবে মহানগরে বেশ কয়েকটি এলাকায় । সাফল্য পেলে বরো ও ওয়ার্ড ভিত্তিক হবে সংগ্রহ শিবির ।

ধাপার বিশাল জঞ্জাল পাহাড়ের দূষণ মহানগরের বাসিন্দাদের জনজীবনে নেতিবাচক ছাপ ফেলছে । তাই দূষণ ঠেকাতে পরিবেশ আদালতের নির্দেশে সেই জঞ্জাল স্তূপ থেকে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য পৃথক করা ও দুটোই বিভিন্ন প্রক্রিয়াকরণ করা থেকে পুনর্ব্যবহার যোগ্য করে তোলার কাজ করছে কলকাতা কর্পোরেশন । যদিও সেই কাজের গতি অত্যন্ত শ্লথ । প্রতি ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি সবুজ ও নীল বালতি দিয়ে উৎস থেকেই জঞ্জাল পৃথকীকরণ প্রকল্পের সূচনা করলেও সেই কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে । আর এই পরিস্থিতিতে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কলকাতার ই-বর্জ্য ।

বৈদ্যুতিন বর্জ্য থেকে মূলত মাটি, জল ও বায়ু দূষিত হয় । ফলে উৎস থেকে লাগাম না দেওয়া গেলে সেটা ভয়ঙ্কর আকার নেবে । বাড়ির খারাপ টিভি, রেডিয়ো, কম্পিউটার, প্রিন্টার, ছোট যন্ত্রাংশ, ঘড়ি, ক্যালকুলেটর এই ধরনের বৈদ্যুতিন যন্ত্রাংশ ই-বর্জ্যের মধ্যে পড়ছে ।

সেগুলি বিভিন্ন সময় সাধারণ জঞ্জালের সঙ্গেই মানুষজন মিশিয়ে ফেলে দিচ্ছে । উৎস থেকে বর্জ্য পৃথকীকরণ সঠিকভাবে না হওয়াতে কেউ নজরদারিও করছে না । তবে কম্প্যাক্টর স্টেশন বা ধাপায় সেগুলি পড়তেই সমস্যা বাড়ছে । এই সমস্যা সমাধানে কলকাতা কর্পোরেশন ই-বর্জ্য নীতি তৈরি করে । কীভাবে এগুলি সংগ্রহ করা হবে, নিয়ে যাওয়া হবে, কোথায় ফেলা হবে, কীভাবে প্রক্রিয়াকরণ করা হবে ইত্যাদি । এই ছবিটার একটি নকশা প্রস্তুত করেছে কলকাতা কর্পোরেশন । এবার সেটাই বাস্তবায়নের পালা ।

কীভাবে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হচ্ছে ?

এই প্রশ্নের উত্তরে কলকাতা কর্পোরেশনের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, কলকাতার নাগরিকদের থেকে ই-বর্জ্য কিনে নেবে কলকাতা কর্পোরেশন । এই সম্পর্কে প্রতিটা এলাকায় লাগাতার প্রচার শুরু হবে । বাড়ি বাড়ি লিফলেট বিলি করা হবে, মাইকিং হবে । এরপর পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে কলকাতার বেশ কিছু এলাকায় শিবির করা হবে । সেখানে বিশেষ প্রচার চালানো হবে । যাতে নাগরিকরা তাদের কাছে থাকা ই-বর্জ্য দিয়ে যায় । শূন্য হাতে ফিরতে হবে না । বৈদ্যুতিন জঞ্জালের বিনিময় পাবেন টাকা ।

এই শিবিরগুলোয় কেমন সাড়া মিলছে দেখে ধীরে ধীরে বড় ভিত্তিক বা ওয়ার্ড ভিত্তিক সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যাওয়া হবে । কলকাতা কর্পোরেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ই-বর্জ্য সম্পর্কিত নথি অনুমোদন হয়েছে । এই কর্মকাণ্ড সাহায্য করবে রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ । কর্পোরেশন যে বর্জ্য সংগ্রহ করবে, সেই গোটাটাই রাজ্য কিনবে । বিদেশে অনেক জায়গায় নির্দিষ্ট ক্যাম্প হয় । বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের উৎপাদক সংস্থা আছে, যারা এই বর্জ্য 10-15 শতাংশ পুনর্ব্যবহার যোগ্য করে ব্যবহার করে । তাদের কাছে রাজ্য এই ই-বর্জ্য বিক্রি করে দেবে ।

এই পদক্ষেপ নিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, "বিশ্বব্যাপী, প্রতি বছর ই-বর্জ্য উৎপাদনের বর্ধিত হার প্রায় 2 মেট্রিক টন । এটি অনুমান করা হয় যে 2030 সালে প্রায় 74 মেগা টন ই-বর্জ্য উৎপাদিত হবে । তাই, ই-বর্জ্য পরিবেশের জন্য একটি বড় বিপদ হতে পারে । বিষাক্ত ধাতুগুলি যেমন, সীসা, পারদ, নিকেল এবং ক্যাডমিয়াম ই-বর্জ্য থেকে পরিবেশে নির্গত হয় । অবশেষে মাটি, পলি, ভূগর্ভস্থ জল এবং পৃষ্ঠের জলে প্রবেশ করে । পরিবেশে বিষাক্ত ধাতু নিঃসরণ মানব স্বাস্থ্য, জলজ প্রাণী এবং উদ্ভিদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে । উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ইলেকট্রনিক বর্জ্যের নিয়মনীতিহীন ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াকরণ থেকে মানবস্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ৷ তাই এটা লাগাম দেওয়া প্রয়োজন ।

আরও পড়ুন :

  1. পরিবেশ রক্ষায় বৈদ্যুতিন জঞ্জাল সংগ্রহে লায়ন্স ক্লাব, পরিবর্তে বিলি গাছ
  2. বৈদ্যুতিন জঞ্জাল নিয়ে নয়া পদক্ষেপ কর্পোরেশনের, প্রতি বরোতে হচ্ছে কালেকশন সেন্টার
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.