ব্যারাকপুর, 29 অগস্ট: নির্যাতিতা ছাত্রীর দেহের চাদর রহস্য নিয়ে এবার মুখ খুললেন তাঁর বাবা-মা। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে নিশানা করে নির্যাতিতা ছাত্রীর মা বলেন, "উনি সন্তানহারার যন্ত্রণা বুঝবেন কীভাবে ? উনি নিজে তো মা নন ৷ আমার মেয়ে আমার কাছে কী ছিল, সে তো একমাত্র আমিই জানি। আমি যে কী হারিয়েছি, তা আমি ছাড়া কেউ বুঝবে না। কীভাবে ওনার মতো পদে থাকা একজন মহিলা একথা বলছেন জানি না।"
বৃহস্পতিবার সোদপুরের বাড়িতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন নির্যাতিতার মা-বাবা ৷ এমনকী দেহের চাদর নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নির্যাতিতার পরিবার ৷ মৃত পড়ুয়া চিকিৎসকের মা বলেন, "ঘটনার দিন তিনটের সময় একজন নাকি আমার মেয়ের কাছে গিয়ে দেখেছিল সে লাল চাদরে শুয়ে আছে। আরেকজন ছবিতে দেখেছে ওর (মেয়ে) গায়ে নীল চাদর ! আবার আমরা যখন মেয়েকে দেখতে গিয়েছিলাম তখন ওর শরীর পুরোটা ছিল সবুজ চাদর দিয়ে ঢাকা।"
এরপরই চাদর রহস্য নিয়ে রীতিমতো বিস্ফোরক দাবি করেছেন নির্যাতিতার মা। তাঁর কথায়, "নীল চাদর দিয়ে মেয়ে যখন ঢাকা ছিল, তখন ওর পা বেড থেকে অনেকটাই দূরে ছিল। সেই ছবিও আমরা দেখেছি। কিন্তু, পরে আমরা যখন সবুজ চাদর দিয়ে ঢাকা দেখেছি তখন ওর (মেয়ে) পা-গুলো সামনে ছিল। দেখে বোঝাই যাচ্ছিল একদম সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে, আমাদের দেখানোর জন্য। আমরা সবুজ চাদরই দেখেছি।" মেয়ো রোডের তৃণমূল ছাত্র সমাবেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন এদিন তা নিয়েও মমতা বন্দোপাধ্যায়কে পালটা জবাব দিয়েছেন নির্যাতিতা ছাত্রীর মা। তিনি বলেন, "ওরা বলতে মুখ্যমন্ত্রী ছাত্রীর বাবা-মা'কেই বলতে চেয়েছেন। আর যাঁরা আমার মেয়ের সুবিচার চেয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশেও উনি (মুখ্যমন্ত্রী) একথা বোঝাতে চেয়েছেন। বিচার চাওয়া কী অপরাধ ? আমরা কী মেয়ের মৃত্যুর বিচার চাইব না ?"
সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের বিষয়ে এদিন নির্যাতিতার মা বলেন, "উনি হয়তো মনে করছেন, তদন্ত জলে ফেলে দেওয়া হল। আমরা তা মনে করছি না। তাছাড়া, আমরা তো সিবিআই কিংবা অন্য কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করাতে চাইনি। আমরা শুধু চেয়েছি মেয়ের মৃত্যুর সুবিচার। ন্যায্য বিচার। আমার মেয়েকে যে ভাবে কর্মস্থলে পৈশাচিক এবং নির্মমভাবে মারা হয়েছে তার সঠিক তদন্ত চেয়েছি। এর সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁদের শাস্তির দাবি জানিয়েছি। আমাদের মতো এটাই তো সকল ছাত্ররাও চাইছে ।"
কার্যত, একই সুর শোনা গিয়েছে নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবার গলাতেও। তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে আমরা মর্মাহত। ওনার কথা কষ্ট দিয়েছে আমাদের। যাঁর সন্তান গিয়েছে তাঁরাই কেবলমাত্র এর মর্ম বুঝবে।" অন্যদিকে, নিজের বাড়িতে সিসিটিভি লাগানো নিয়ে এদিন নির্যাতিতার বাবা বলেন, "আমাকে তো কোনও না কোনও সময় বাড়ির বাইরে যেতেই হবে। তখন আমার স্ত্রী একাই থাকবে বাড়িতে। সেকথা ভেবেই এই পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। এর মধ্যে অন্য কোনও বিষয় নেই ।"