মালদা, 26 মে: ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল ৷ যদিও এখনও ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফল হয়নি ৷ কিন্তু, তার আগেই আতঙ্কে কাঁপুনি ধরেছে মানুষের মধ্যে ৷ ফণি, আমফানের আতঙ্কের স্মৃতিতে ভীত চাষিরা রেমালের রোষ থেকে বাঁচতে চাইছেন ৷ বঙ্গোপসাগরের উপকূল থেকে সেই আতঙ্ক বিস্তৃত গঙ্গাপাড়ের জেলাতেও ৷ ঝড়ের প্রকোপ থেকে বাঁচতে তাই ঠিক মতো পুষ্ট না হতেই গাছের কাঁচা আম পেড়ে নিচ্ছেন চাষিরা ৷ সেই ছবিই ধরা পড়েছে পুরাতন মালদার মৌলপুর এলাকায় ৷
আবহাওয়া দফতর জানিয়ে দিয়েছে, রেমালের প্রভাবে মালদায় ঝড়ের কোনও সম্ভাবনা নেই ৷ শুধু 30-40 কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে পারে ৷ তবে বৃষ্টি হবে ভরপুর ৷ সোম থেকে বুধ, এই তিনদিনে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা 200 মিলিমিটার বা তারও বেশি ৷ কিন্তু হাওয়া অফিসের কথায় ভরসা করতে পারছেন না আমচাষিরা ৷ এবার এমনিতেই আমের ফলন তলানিতে ৷ তার উপর এই ঘূর্ণিঝড় এবং তার জেরে নিম্নচাপ থেকে মুক্তি পেতে তাই তড়িঘড়ি করে আগেভাগেই গাছের কাঁচা আমই পেড়ে নিচ্ছেন মালদার চাষিরা ৷
আরও পড়ুন: লাভের গুড় উড়ে যাবে ঝড়ে, শঙ্কায় হুগলির লিচু চাষিরা
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মালদায় আম পাকার মরশুম শুরু হয় দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় খানিকটা দেরিতে ৷ এই জেলায় সবার আগে পাকে গোপালভোগ প্রজাতির আম ৷ সেটা পরিপক্ক হতেও অন্তত 10 থেকে 15 দিন দেরি ৷ এ দিকে জেলা প্রশাসনের তরফে আগেই ঘোষণা করা হয়েছে, অপরিপক্ক আম কার্বাইড কিংবা অ্যাসিটিলিন দিয়ে অকালপক্ক করে বাজারে বিক্রি করা যাবে না ৷ ধরা পড়লে সেই আম বাজেয়াপ্ত করা হবে ৷ তাই আমচাষিদের অনেকে বলছেন, গোপালভোগ প্রজাতির আম পেকে গিয়েছে ৷ এখন গাছ থেকে পাড়া যেতেই পারে ৷ আবার অনেকে স্বীকার করেছেন, ঝড়ের জন্য ঠিকমতো না পাকলেও তাঁরা আম পাড়তে বাধ্য হচ্ছেন ৷
পুরাতন মালদার আমচাষি রঞ্জন দাস বলছেন, "ঝড়ের খবর শুনেই আমাদের মতো আমচাষিদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ৷ এ বছর এমনিতেই আমের উৎপাদন নেই ৷ তার উপর 40-50 কিলোমিটার বেগে ঝড় হলে একটা আমও গাছে থাকবে না ৷ আমরা এমনিতেই এবার মরতে বসেছি, ঝড়ে আম পড়ে গেলে আরও শেষ হয়ে যাব ৷ তাই এবার একটু আগাম আম ভাঙছি ৷ এটা ঠিক, গোপালভোগ হলেও আরও কয়েকদিন পর আম পাড়তে হতো ৷ কিন্তু ঝড়ের ভয়ে আগাম পেড়ে নিচ্ছি ৷ প্রশাসন আমাদের ঝড় নিয়ে সতর্ক করেনি ৷ সংবাদমাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, এই জেলায় 40-50 কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে ৷"
আরেক আমচাষি প্রেমলাল মণ্ডলের কথায়, "আগামিকাল নাকি ভালো ঝড় হবে ৷ ঝড় হলে সব আম পড়ে যাবে ৷ এসব বড় গাছ ৷ ঝড়ে বড় গাছের আম কিছুতেই টিকবে না ৷ আম পড়ে গেলে আমরা শেষ হয়ে যাব ৷ মোটা টাকা দিয়ে এবার বেশ কয়েকটি বাগান কিনেছি ৷ আম ঝরে গেলে বাঁচব না ৷ বড় গাছের গোপালভোগ আম পেকে গিয়েছে ৷ এই প্রজাতি ছাড়া অন্য কোনও আম এখন গাছ থেকে পাড়া যাবে না ৷ নইলে সে সবও পেড়ে নিতাম ৷"
আরও পড়ুন: নিম্নচাপের বৃষ্টিতে দফারফা আম চাষ, বড়সড় আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় চাষিরা