সোদপুর, 6 অক্টোবর: প্রায় দু'মাস হতে চলল ! আরজি করের তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এখনও বিচার মেলেনি ৷ বিচার চেয়ে পুজোর চারদিন ষষ্ঠ, সপ্তমী, অষ্টমী ও দশমীতে ধর্নায় বসবেন নির্যাতিতার বাবা-মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা ৷ এই জন্য বাড়ির সামনেই মঞ্চ বাঁধার কাজ চলছে জোরকদমে ৷
মেয়ে থাকলে বাড়িতেই পুজো হত ৷ এবছর তা হবে না ৷ সব মিলিয়ে পুজোর চারদিন ধর্না মঞ্চে থাকবেন আরজি করের নির্যাতিতার বাবা, মা, আত্মীয়রা ৷ রবিবার সাংবাদিকদের এমনটাই জানিয়েছেন নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা-মা ৷ এদিনই ধর্মতলায় প্রতীকী আমরণ অনশনে বসেছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা ৷ সোমবার থেকে আমরণ অনশন শুরু করবেন তাঁরা ৷ একাধিক দাবি নিয়ে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন নিয়ে রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার কথা বললেন নির্যাতিতার বাবা-মা ৷
মেয়ের দুঃখে অবস্থান মঞ্চ
দুর্গাপুজোয় অবস্থান মঞ্চে কাটানো নিয়ে নির্যাতিতার বাবা-মা বলেন, "পুজোর সময় আমরা আনন্দে থাকতাম ৷ এবছর মনের দুঃখে বাইরে উঠোনে ধর্নায় বসব ৷ এই ধর্নামঞ্চ আমরাই করছি ৷ ষষ্ঠী থেকে চারদিন বসব ৷ কাউকেই আমরা আমন্ত্রণ করছি না ৷ যাঁর ইচ্ছা হবে, তিনি আসবেন ৷ তবে তাঁরা মঞ্চে উঠতে পারবেন না, সামনে বসার জায়গা থাকবে ৷"
জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন
এই বিষয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেন, "বিচার না পাওয়ার বিষয় তো আছেই ! তাছাড়া সরকারকে দাবিদাওয়া মেটানোর জন্য জুনিয়র ডাক্তাররা নির্দিষ্ট টাইমলাইন বেঁধে দিয়েছিলেন ৷ সেসব নিয়ে সরকার তো আলোচনা করেনি ৷ ওদের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে ৷ বায়ো টয়লেটের জন্য মেল পাঠিয়েছিল, কিন্তু সেটা দেওয়া হচ্ছে না ৷ সরকার কেন মানবিক হচ্ছে না এই বিষয়গুলি নিয়ে, সেটাই তো বুঝতে পারছি না ৷" তাঁরা কুলতলিত চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ার খুনের ঘটনার কথা উল্লেখ করেন ৷
আরজি করের ঘটনা নিছক 'দুর্ঘটনা'
আরজি করের ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রী 'দুর্ঘটনা' বলে উল্লেখ করেছেন ৷ এই প্রসঙ্গে নির্যাতিতার বাবা ও মা বলেন, "আমার মেয়ে হাসপাতালে ডিউটিতে ছিল ৷ যেখানে মানুষ সবচেয়ে সুরক্ষিত ৷ সেখানেই আমার মেয়ের সঙ্গে এই নারকীয় ঘটনা ঘটেছে ৷ তারপরও মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে বলেন এটা দুর্ঘটনা ? অনশনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা-মা ৷ মা বলেন, "আমি তো আমার মেয়েকে হারিয়েছি । জুনিয়র ডাক্তাররা যেভাবে আন্দোলন করছেন মা হিসেবে আমিও ওঁদের প্রতি সমব্যথী ৷ ওঁরা না খেয়ে আমরণ অনশন করছেন ৷ এটা দেখে ঘরে আমার কান্না পাচ্ছে ৷"
আলোচনায় সমাধান
সরকারের সঙ্গে চিকিৎসকদের আলোচনায় সমাধান মিলতে পারে বলে আশা করেন নির্যাতিতার বাবা-মা ৷ বাবা বলেন, "আলোচনা করা হলে পৃথিবীতে এমন কোনও সমস্যা নেই যে সমাধান হবে না ৷ গতকাল কুলতলির ঘটনা শোনার পর থেকেই আমাদের মন আরও খারাপ ৷ ভূপতিনগরের ঘটনাটিও অনভিপ্রেত ৷ কুলতলির ঘটনাটি দেখে গত 9 অগস্টের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে আমাদের ৷ দু'টোই তো প্রায় একই ধরনের ঘটনা ৷"
রাজ্যে একের পর এক ধর্ষণ ও নৃশংস খুনের ঘটনার জন্য প্রশাসনকেই দায়ী করেছেন তাঁরা ৷ তাঁরা বলেন, "পুলিশ প্রশাসন ঠিকমতো দেখছে না বলেই তো এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে ৷ দুষ্কৃতীদের উপর প্রশাসনের হাত রয়েছে ৷ তাঁদের হাত না থাকলে দুষ্কৃতীদের এত সাহস হতে পারে না।"