মালদা, 24 ফেব্রুয়ারি: ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত জেলার আমবাগানগুলিতে সেভাবে মুকুলের দেখা নেই৷ আর কয়েকদিনের মধ্যে মুকুল না বেরোলে এবারের মরশুমে আমচাষিদের প্রভূত ক্ষতির সম্ভাবনা ৷ যা নিয়ে ইতিমধ্যেই চাষিদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে ৷ যদিও এখনই তাঁদের হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই বলে দাবি করছে জেলা উদ্যানপালন দফতরের আধিরকারিকদের ৷ দফতরের তরফে চাষিদের গাছ পরিচর্যায় মনোনিবেশ করতে বলা হচ্ছে ৷ একই বক্তব্য মালদা ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনেরও ৷
মালদা জেলার প্রধান অর্থকরি ফসল আম ৷ এই জেলার প্রায় 32হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয় ৷ গত বছর আমের বাম্পার ফলন হয়েছিল৷ লাভের মুখ দেখেছিলেন আমচাষিরাও ৷ কিন্তু এবার আবহাওয়া বিরূপ ৷ দীর্ঘস্থায়ী শীতের প্রভাবে এখনও পর্যন্ত বাগানগুলিতে সেভাবে মুকুলের দেখা মেলেনি ৷ মুকুল বেরোনোর জন্য 23-27 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন ৷ কিন্তু বর্তমানে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও রাতে বেশ ঠান্ডা ৷ তাপমাত্রা 16-17 ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যাচ্ছে ৷ যা মকুলে প্রভাবিত করে ৷ আমচাষিরা জানাচ্ছেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে মুকুল না বেরোলে আমের ফলন হবে না ৷
স্থানীয় এক আমচাষি সুমন ঘোষ বলেন, "অতিরিক্ত ঠান্ডার জন্য কি না জানি না, তবে এবার আমের মুকুল খুব কম হয়েছে ৷ শুধুমাত্র লক্ষ্মণভোগ ছাড়া অন্যান্য প্রজাতির আমের মুকুল সেভাবে গাছে আসেনি ৷ মুকুল বেরোলেও তার বৃদ্ধি খুব কম ৷ আবহাওয়ার যা পরিস্থিতি, তাতে আর মুকুল বেরোনোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে ৷ শেষের দিকে যে মুকুল বেরোয় তাকে পাতা মুকুল বলা হয় ৷ তবে সেই সম্ভাবনা অনেকটাই কম ৷" তিনি আরও জানান, আমচাষের খরচ বেড়ে চলেছে ৷ পাশাপাশি কীটনাশক ও স্প্রে করার খরচও বাড়ছে ৷ আগে পা মেশিনেই কাজ চলত ৷ এখন ট্যাংকারের সাহায্যে স্প্রে করা হয় ৷ এতে খরচও বেড়ে যাচ্ছে ৷ শুধু তাই নয়, বাগান লিজ নেওয়ার খরচও বাড়ছে ৷ এই ভাবে চলতে থাকলে আমের ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে বলেও জানিয়েছেন ওই চাষি ৷
তবে চাষিদের আশ্বস্ত করেছেন জেলা উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সামন্ত লায়েক ৷ তিনি বলেন, " ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই আমের মুকুল চলে আসে ৷ এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া আম চাষের অনুকূলে রয়েছে ৷ চাষিদের এখন গাছকে ভালো করে ধুয়ে সাফ করতে হবে ৷ যাতে পাতায় লেগে থাকা ধুলো কিংবা মাকড় ধুয়ে যায় ৷ গাছের গোড়া খুঁড়ে মাটি নরম করে জৈব সার আর জলসেচ দিতে হবে ৷ এতে গাছ সালোক সংশ্লেষ প্রক্রিয়া ভালোভাবে চালাতে পারবে ৷ আর ক’দিন পর মুকুল বেরোলে ম্যাঙ্গো হপারের উপদ্রব হতে পারে ৷ তাই কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে ৷"
একই বক্তব্য মালদার ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উজ্জ্বল সাহারও ৷ তিনিও জানান, উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিকরা সবসময় চাষিদের পরামর্শ দিয়ে চলেছেন ৷ আমচাষিদের যদি সেই সমস্ত পরামর্শ মেনে চলেন তবে ফলন ভালো হবে ৷ চাষিরাও খুব একটা আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হবেন না ৷
আর পড়ুন: