কলকাতা, 26 মার্চ: রাজ্যে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি যা করতে পারেনি সেটাই করে দেখাল সিপিএম । পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে বামেরা কম্পিউটারের বিরোধিতা করেছিল, লোকসভা নির্বাচনের আগে তাদেরই হাতিয়ার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অর্থাৎ এআই । সোমবার থেকেই সিপিএমের ফেসবুক ও অন্যান্য সোশাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে এআই অ্যাঙ্কর সমতাকে ৷ 'ফোকাস অন বেঙ্গল' নামাঙ্কিত সম্প্রচারে দেখা যাবে বামেদের নয়া সঞ্চালিকাকে ৷
মূলত ভোট প্রচারের ক্ষেত্রে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে । এক্ষেত্রে এআই অ্যাঙ্কার সমতা রয়েছে উপস্থাপিকার ভূমিকায় । গতকাল বঙ্গ সিপিএমের সোশাল সাইটে এই নতুন মুখের পরিচয় ঘটানো হয়েছে । 27 সেকেন্ডের প্রথম আলাপেই রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে সমতা ৷ চমকে দিয়েছে বামেরাও ।
সিপিএমের এআই অ্যাঙ্কার নিজের মুখেই জানিয়েছে, সিপিএমের ফেসবুক এবং ইউটিউবে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে তাকে দেখতে পাওয়া যাবে । সিপিএম সূত্রে খবর, গত ছ’মাস-এক বছর ধরেই এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যাঙ্কার সমতাকে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছিল দলের ডিজিটাল উইং । সাধারণত ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে এর বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন তারা ৷ বিশেষ করে দেখা যাচ্ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এআই অ্যাঙ্কার ইংরাজি ভাষায় যতটা সাবলীল বাংলার ক্ষেত্রে ততটা নয় । মূলত সেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্যই কিছু টেকনিক্যাল রূপান্তর ঘটানো হয়েছে ৷ তারপর সোমবার প্রকাশ্যে আনা হয়েছে সমতাকে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কারিগরি দলের সদস্য ইটিভি ভারতকে বলেন, "সিপিএমের তরফ থেকে সাপ্তাহিক দু’টি খবর করা হত । তবে সেটা বাংলাতে । কিন্তু বাংলার বাইরে বিশাল সংখ্যক মানুষ এ রাজ্যের কথা জানতে চান, আর সে কারণেই হিন্দি বা ইংরেজিতে 'ফোকাস অন বেঙ্গল' বলে একটি খবর নিয়ে আসা হচ্ছে । আগামিদিনে এই 'ফোকাস অন বেঙ্গল' নামাঙ্কিত সম্প্রচারে আমরা এআই অ্যাঙ্কার ব্যবহার করতে চাইছি ।"
তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন এআই ব্যবহারের প্রশ্ন উঠলেই সাধারণ মানুষের অনেকের মনে কর্মী সংকোচনের একটা ভয় থাকে । এক্ষেত্রে কোনও কর্মী সংকোচনের সুযোগ নেই । প্রথম অবস্থায় ভোটের সময় 'ফোকাস অন বেঙ্গল' শো’য়ে এই এআই অ্যাঙ্কার ব্যবহার করা হলেও পরবর্তীতে বাংলার ক্ষেত্রেও তা ব্যবহারের চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি ।
এই এআই অ্যাঙ্কার নিয়ে ইটিভি ভারত কথা বলেছে সিপিএমের অন্যতম সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য শমীক লাহিড়ীর সঙ্গে । এই ডিজিটাল টিমে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের পাশাপাশি তিনিও এই প্রজেক্টের দায়িত্বে রয়েছেন । তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল বাস্তবতার সঙ্গে থাকা । ভুয়ো খবর ছড়ানো নয় । আমরা অতীতে জাতীয় ক্ষেত্রে বিজেপিকে দেখেছি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে তথ্য বিকৃতির জন্য । আমাদের লক্ষ্য তথ্য বিকৃতি নয় । আমরা এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছি কাজের সুবিধার জন্য । আর সে কারণেই এবারের ভোটে আমরা এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি নির্বাচনের মত সামাজিক উৎসবে ।"
তিনি এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের সাফল্য নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী একসঙ্গে সতর্কও । এদিন এর ব্যবহার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "ব্লেড দিয়ে যেমন দাড়িও কাটা যায়, একই সঙ্গে মানুষের গলাও কাটা যায় । এক্ষেত্রে আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করব সভ্যতার অগ্রগতির স্বার্থে । তাই আমাদের মূল লক্ষ্য ।"
তবে বামেরা আশার বাণী শোনালেও এআইকে নিয়ে তাদের কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন ৷ তিনি ইটিভি ভারতকে বলেন, "সিপিএমের মুখে এই ধরণের কথা মানায় না ৷ যারা কম্পিউটারকে বন্ধ করে দিয়েছিল, যারা ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি পড়া বন্ধ করে দিয়েছিল, যারা নিজেদের সর্বহারা দল বলে একটা বিড়ি নিভিয়ে তিনবার খেত, তাদের মুখে এই ধরণের কথা শুনে বাচ্চারাও হাসছে ৷ সিপিএম বাংলাকে 34 বছরে যে জায়গায় পিছিয়ে দিয়েছে সেই জন্যই তারা আজ শূন্য হয়েছে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বলে পিছিয়ে পড়া বাংলাকে সোনার বাংলা করা সম্ভব হয়েছে ৷ নইলে সেটাও সম্ভব হত না ৷"
বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, "এআই দিয়ে কোন লাভ হবে না ৷ কেউ ওদের ওয়েবসাইট আগেও দেখত না, এরপরও দেখবে না ৷ তবে প্রযুক্তির বিরোধীতা করে সিপিএম পশ্চিমবঙ্গকে পিছিয়ে দিয়েছে ৷ এর জন্য আগে ওদের নাকখত দিয়ে বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া দরকার ৷ তারপর অন্যকিছু নিয়ে ভাববে ৷"
আরও পড়ুন: