কলকাতা, 9 জুলাই: আগামী 10 দিনের মধ্যে বাজারগুলিকে শাক-সবজির দাম নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মঙ্গলবার বিকেলে তিনি বাজারগুলিতে সবজির লাগামছাড়া দাম নিয়ে বৈঠক করেন ৷ সেখানে মুখ্যমন্ত্রী নাসিক থেকে পেঁয়াজ আনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ৷ অন্যদিকে হিমঘরগুলি থেকে আলু বের করে বাজারে সরবরাহ করার কথা জানান ৷ এছাড়া তিনি মনে করিয়ে দেন, সরকার কৃষকদের ক্ষতির জন্য বিমা করে দিয়েছে ৷ এরপরেও সবজির এই দাম ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে কীভাবে ?
এদিন মুখ্যমন্ত্রী সবজির দাম বৃদ্ধির জন্য গত তিন মাস ধরে লোকসভা নির্বাচনকেই দায়ী করেন ৷ তিনি বলেন, "এই তিন মাসে এত দাম বাড়ল কেন ? পাইকারি মালের জোগান কমে গিয়েছে কেন ? আলু, পেঁয়াজ, রসুন, বেগুন, কাঁচা লঙ্কা, টমেটো, পটলের দামও আকাশছোঁয়া ৷" পাশাপাশি কিছু কিছু জিনিসের দাম আগের বছরের তুলনায় কমেছে বলেও জানান মমতা ৷
এদিন বৈঠকে তিনি নিজেই বলেন, "আলুর দাম এই সময় ছিল 22 টাকা ৷ এবছর তা হয়েছে 35 টাকা ৷ কেন ? পেঁয়াজ ছিল 35 টাকা, এবার তার দাম 50 টাকা হয়েছে ৷" এক্ষেত্রে তিনি প্রশ্ন করেন, নাসিক থেকে পেঁয়াজ কেন আনা হচ্ছে ? বাংলায় পেঁয়াজের জন্য কোল্ড স্টোরেজ করা হয়েছে ৷ পাশাপাশি তিনি জানান, রাজ্যজুড়ে সরকারের সুফল আউটলেটগুলিতে সবজির দাম 10-15 শতাংশ কমে পাওয়া যাচ্ছে ৷ নাসিকের পেঁয়াজের উপর ভরসা না করে বাঁকুড়া-সহ মুর্শিদাবাদের উৎপন্ন সুখসাগর পেঁয়াজ বাজারে কীভাবে আনা যায়, তার উপর জোর দিতে বলেন ৷
এদিনের এই সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার বৈঠকে তাঁর সঙ্গে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব ভিপি গোপালিকা এবং অন্যরা ৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন বাজারগুলিতে গিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখার নির্দেশও দেন ৷ সবজির দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে কৃত্রিম চাহিদা তৈরির চক্রান্তও থাকতে পারে বলে প্রশ্ন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
আলু দাম 45-50 টাকা হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "বড় ব্যবসায়ীরা আলু কোল্ড স্টোরেজে রেখে দেয় ৷ এখন 45 লক্ষ মেট্রিক টন আলু কোল্ড স্টোরেজে পড়ে আছে ৷ 60 লক্ষ মেট্রিক টন আলু কোল্ড স্টোরেজে ছিল ৷" বাজারে আলু সরবরাহ বাড়াতে তাঁর নির্দেশ, "জানুয়ারি পর্যন্ত 25 শতাংশ আলু রেখে দিয়ে বাকি আলু কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু বের করুন ৷ প্রতি মাসে 5 লক্ষ টন করে 6 মাস ধরে বাজারে আলু সরবরাহ করুন ৷"
আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার অন্যতম কারণ রাজ্যের বাইরে আলু বিক্রি হচ্ছে না তো, বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি আন্তঃরাজ্য সীমানায় তল্লাশির নির্দেশও দিয়েছেন ৷ এছাড়া কারা আলু, পটল ও নিত্যপ্রয়োজনী সবজিগুলি বেশি করে নিজেদের কাছে মজুত করে রাখছে, তা দেখার নির্দেশ দেন ৷ এই বিষয়ে এসটিএফ, সিআইডি, ইনফরমেশন ব্রাঞ্চকে নজরদারি চালাতে বলেছেন ৷ পাশাপাশি কেউ যেন কারও কাছ থেকে কোনও টাকা না-নেয় তার জন্য ডিএম, এসপিকে কড়া বার্তা দিয়েছেন ৷
মজুতদারি ও ফড়েদের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে টাস্কফোর্সের কথাও উল্লেখ করেন মমতা ৷ তিনি বলেন, "এই টাস্ক ফোর্সে এগ্রি মার্কেটিং, পুলিশ, এগ্রিকালচার, পশুপালন ও মৎস্য প্রতিপালন, হর্টিকালচার, ফুড অ্যান্ড কালচার থেকে প্রতিনিধিরাও আছেন ৷ বাজার সমিতির প্রতিনিধিরাও আছেন ৷ টাস্ক ফোর্সের কাজ ছিল বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা ৷ এরা কি মিটিং করছে ? সাতদিন পরপর এই মিটিং অবশ্যই করতে হবে ৷ এই টাস্ক ফোর্সে মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও অর্থসচিবকে যুক্ত করলাম ৷ পুলিশের ডিজি থাকবে, আইন ও শঙ্খলাও থাকবে, পুলিশের কমিশনাররাও থাকবেন ৷ এসপিরাও থাকবেন ৷ তাঁদের কাছ থেকে রিপোর্ট নেবেন ৷" তিনি এই রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ৷