কলকাতা, 19 এপ্রিল: স্কুল সার্ভিসে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায়দান হতে চলেছে আগামী সোমবার। কলকাতা হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে এদিন এই সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে ৷ জানানো হয়েছে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত কিছু মামলার শুনানি গত 20 মার্চ শেষ হয়েছিল ৷ বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শাব্বার রাশিদির ডিভিশন বেঞ্চে তার রায়দান হতে চলেছে আগামী সোমবার। ওইদিন সকাল সাড়ে দশটায় এই মামলার নির্দেশ শোনানো ডিভিশন বেঞ্চের তরফে। প্রায় 10 হাজারের বেশি নিয়োগ হওয়া শিক্ষক, শিক্ষিকার ভবিষ্যত এই মামলার রায়ের উপর নির্ভর করছে।
ডিভিশন বেঞ্চ মামলার শুনানির সময় প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল, নিয়োগ দুর্নীতি প্রমাণিত হলে বাতিল করা হতে পারে সম্পূর্ণ নিয়োগ, বা বাতিল করা যেতে পারে গোটা নিয়োগের অংশবিশেষ। এছাড়াও একাধিক বিষয় উঠে এসেছিল মামলার শুনানিতে। এক-নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঠিক মূল্যায়ন করা বা পূর্নমূল্যায়ন করা। দুই-এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি রয়েছে তাকে মান্যতা দিয়ে মামলার পরবর্তীকালে যে আবেদনগুলি জমা পড়েছে তা বাতিল করা ৷ তিন- সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুনভাবে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফেও সেই প্রস্তাব আদালতে দেওয়া হয়েছিল। তবে সবটাই আদালতের নির্দেশের উপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছিল কমিশন। গতবছর 9 নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্টে গঠিত হয় বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শাব্বার রাশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। এই বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চে এসএসসি মামলার শুনানি শুরু হয় 2023-এর ডিসেম্বর থেকে । ছয় মাসের মধ্যে মামলার প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। মামলাকারি, তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ-সহ সবপক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি দেবাংশু বসাক জানিয়েছিলেন, রায়দানের পর সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার রাস্তাও খোলা থাকবে।
মামলাকারীদের পক্ষ থেকে আদালতে তথ্য দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্যানেল তৈরির একাধিক নথি জমা দেওয়া হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গোটা সিস্টেমটাই দুর্নীতিতে ভরা এমনই দাবি করেন মামলাকারিদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। এমনকী সুপার নিউমুরারি পোস্ট (অতিরিক্ত) পদ তৈরি করে বেআইনিভাবে চাকরিপ্রাপ্তদের স্বার্থ রক্ষা করতে চেয়েছে রাজ্য বলেও আদালতে অভিযোগ জানান মামলাকারীর আইনজীবীরা।
বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "এটা স্পষ্ট যে নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতিতে ভরা। তাহলে আদালতকে এমন শিক্ষা দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এধরনের পদক্ষেপ না-করা হয়। হয় নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি বাতিল করতে হবে না-হলে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দিক আদালত।" অন্যদিকে, পুরো নিয়োগ বাতিল করে নতুন করে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। সিবিআইয়ের দেওয়া ওএমআরশিটের ভিত্তিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন সেটা করতে পারে বলে কমিশনের তরফেই আদালতে জানানো হয়েছিল।
বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, "সুপার নিউমোররি পোস্ট তৈরি করে চালাকি করেছে রাজ্য। বেআইনিভাবে চাকরিপ্রাপ্তদের স্বার্থ বজায় থাকবে আবার যারা বিক্ষুব্ধ তাদেরও সুযোগ দেওয়া যাবে। গোটা সিস্টেমটাই দুর্নীতিতে ভরা।" দু'পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছিল ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী সোমবার হতে চলেছে সেই মামলার রায়।
আরও পড়ুন: