কলকাতা, 4 মার্চ: অচেনা কোনও মহিলাকে যদি ডার্লিং বলে সম্বোধন করেন, তাহলে কিন্তু ঘোর বিপদ ৷ সোজাসুজি পড়ে যেতে পারেন আইনি প্যাঁচে ৷ কারণ অজানা অচেনা কোনও মহিলার উদ্দেশে 'ডার্লিং' শব্দটি ব্যবহার করা একটি ফৌজদারি অপরাধ ৷ তা যৌন হেনস্থার শামিল ৷ এমনই পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের ৷
আদালত জানিয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির 354এ ধারা (একজন মহিলার সম্ভ্রম নষ্ট) এবং 509 ধারার অধীনে একে একটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে ৷ কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত হাইকোর্টের পোর্ট ব্লেয়ার বেঞ্চের শুনানিতে এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন । তিনি অভিযুক্ত জনক রামের সাজা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় এই পর্যবেক্ষণ দেন । রাম মদ্যপ অবস্থায় একজন মহিলা পুলিশ কনস্টেবলকে 'ডার্লিং' বলে সম্বোধন করেছিলেন । বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বলেন যে, 354এ ধারা একজন মহিলার সম্ভ্রম নষ্টকারী যৌন মন্তব্যের অপরাধে শাস্তির বিধান দেয় ।
বেঞ্চ উল্লেখ করেছে যে, একজন অজানা মহিলাকে মদ্যপ অথবা স্বাভাবিক অবস্থায় কোনও পুরুষ 'ডার্লিং' বলে সম্বোধন করলে তা স্পষ্টতই আপত্তিকর । বেঞ্চ বলেছে, "পুলিশ কনস্টেবল হোন বা না হোন, রাস্তায় একজন পুরুষ, তিনি মদ্যপ হোন বা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকুন, একজন অচেনা মহিলাকে 'ডার্লিং' বলে সম্বোধন করলে তা আপত্তিকর এবং ব্যবহৃত শব্দটি মূলত একটি যৌন উত্তেজক মন্তব্য ৷"
বিচারপতি সেনগুপ্তের মতে, বর্তমানে ভারতীয় সমাজের মানদণ্ড এমন নয় যে একজন পুরুষকে 'অপরিচিত মহিলাদের' এই শব্দের ব্যবহারে সম্বোধন করতে 'সানন্দে অনুমতি দেওয়া' যায় । অজানা অচেনা মহিলাকে 'ডার্লিং' বলে সম্বোধন করাটা ফৌজদারি অপরাধ ৷ সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় এই শব্দটি ব্যবহার করার অপরাধ আরও বেশি ৷
উল্লেখ্য, 2015 সালের 21 অক্টোবর আন্দামানের মায়াবন্দর এলাকায় পুলিশ হানা দিলে অভিযুক্ত জনক রাম মহিলা হেড কনস্টেবলকে অত্যন্ত অশালীন ভঙ্গিতে প্রশ্ন করেছিলেন যে, "কেয়া ডার্লিং, চালান করনে অ্যায়ি হ্যায় কেয়া ?" এই ঘটনায় 2023 সালের এপ্রিল মাসে এক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ওই বছরই নভেম্বর মাসে এক অতিরিক্ত জেলা জজ জনক রামকে দোষী সাব্যস্ত করে ৷ সেই রায়ের বিরুদ্ধেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিযুক্ত ৷ তবে কলকাতা হাইকোর্ট তাঁর আগের এক মাসের সাজা তো বহাল রেখেইছে, বরং সেই সাজা বাড়িয়ে 3 মাসের হাজতবাস করে দিয়েছে আদালত ৷
আরও পড়ুন: