কলকাতা, 12 জুন: রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা আরও দু’দিন বাড়ানোর নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট । বিচারপতি হরিশ ট্যাণ্ডন ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার এই নির্দেশ দিয়েছে ৷ রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা আরও দু’দিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকোর্ট । ইতিমধ্যে পুলিশ একইভাবে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে । 18 জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানিতে রাজ্য তাদের রিপোর্ট পেশ করবে । সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর আরও প্রয়োজন কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত ।
উল্লেখ্য, রাজ্যে লোকসভা নির্বাচন মিটে যেতেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, এই দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং আইনজীবী ও বিজেপি নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল । প্রধান বিচারপতি টিএস শিবাজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি গ্রহণ করে । কিন্তু গত দু’দিন প্রধান বিচারপতি আদালতে উপস্থিত না থাকায় এ দিন বিচারপতি হরিশ ট্যাণ্ডন ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্য জরুরি ভিত্তিতে মামলাটি শোনেন ।
এ দিন মামলার শুনানিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগেই হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ডিজির কাছে ই-মেলের মাধ্যমে বেশ কিছু অভিযোগ ইতিমধ্যেই দায়ের হয়েছে ।’’ সেই ব্যাপারে আদালতকে জানাতে আগামিকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় চান তিনি ।
অন্যদিকে বিরোধী দলনেতার তরফে আইনজীবী সৌম্য মজুমদার বলেন, "কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা প্রয়োজন রাজ্যে । যাতে সাধারণ মানুষের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যায় । আইন অনুযায়ী পরিস্থিতির প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা রাখা যেতে পারে ।"
পালটা রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, "মামলাকারী শুভেন্দু অধিকারী ও প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল দু’জনই বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য । দু’জনই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব । অন্য কোনও সাধারণ মানুষ, যাঁরা আক্রান্ত, তাঁরা কেউ আদালতে আসেননি ।"
তিনি আরও বলেন, "যে সমস্ত অভিযোগ পিটিশন কপিতে মামলায় করা হয়েছে, তাদের কারও সাহস নেই থানায় গিয়ে নিজেদের সেই সব কথা বলার । কিন্তু বিরোধী দলনেতা যিনি একজন বিধায়ক, তাঁরও সাহস নেই থানায় গিয়ে অভিযোগ জানানোর ! আসলে এই ধরনের মামলা সম্পূর্ণ প্রচারভিত্তিক । প্রচার পাওয়ার কৌশল হিসাবেই এইসব মামলা করা হয়েছে ৷’’
অন্যদিকে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী বলেন, "ভোট পরবর্তী হিংসার কথা মাথায় রেখে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা 19 জুন পর্যন্ত করা হয়েছে । হাইকোর্ট নির্দেশ দিলে আরও বেশিদিন কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখতে অসুবিধা নেই ।"
আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল বলেন, "আমি সন্দেশখালি গিয়েছি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নির্দেশ মতো । সেখানে সিবিআই ক্যাম্প থাকা সত্ত্বেও এক মহিলাকে রাতে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে । রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলতে চাইছেন কোনও ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা ঘটেনি । কিন্তু পুলিশ বেশ কিছু এফআইআর দায়ের করেছে বলে জানা যাচ্ছে । তার মানেই হিংসার ঘটনা ঘটেছে ।"
সবপক্ষের বক্তব্য শোনার পর ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশে জানায়, ভোট পরবর্তী হিংসার কথা মাথায় রেখেই আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন । আদালত বাস্তব পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে সেটাকে আপাতত আরও দুদিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে । পরে রিপোর্টের ভিত্তিতে ফের আদালত সিদ্ধান্ত নেবে ।