বর্ধমান, 20 অক্টোবর: একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত হওয়ার পরেও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হচ্ছে । এসএসকেএমের ফিজিওথেরাপির ছাত্রছাত্রীরা স্টাইপেন্ড পাচ্ছেন, অথচ সেই স্টাইপেন্ড পাচ্ছেন না বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা । এই অভিযোগে সরব হয়েছেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ফিজিওথেরাপির বিপিটির পড়ুয়ারা ।
ঘটনাটা কী?
রাজ্যের মধ্যে শুধুমাত্র দুটি কলেজে ফিজিওথেরাপির বিপিটি ও এমপিটির কোর্স করানো হয় । কলকাতার এসএসকেএম ও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ । দুটি কলেজই ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ ইউনিভার্সিটির অধীনে আছে । ফলে দুটি কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে নিয়ম একই । ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে কলেজে ভর্তি হতে হয় । অথচ দেখা যাচ্ছে, এসএসকেএমের ছাত্রছাত্রীদের মাসে 10 হাজার টাকা করে স্টাইপেন্ড দেওয়া হচ্ছে । কিন্তু বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এই স্টাইপেন্ড পাচ্ছেন না । 2022 সাল থেকে এই স্টাইপেন্ড দেওয়া শুরু হয়েছে । কেন তাঁরা স্টাইপেন্ড পাবেন না, সেই দাবি তুলে এ দিন ক্ষোভে ফেটে পড়েন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ফিজিওথেরাপির ছাত্রছাত্রীরা ।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের তরফে জানা গিয়েছে, এই বিষয়টি জানার পরে ফিজিওথেরাপি বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা প্রিন্সিপালের কাছে অভিযোগ জমা দেন । বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় । স্বাস্থ্যভবনের তরফে ই-ফাইলিং করতে বলা হয় । এরপর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের পক্ষ থেকে ই-ফাইলিং করা হলেও ছাত্রছাত্রীদের স্টাইপেন্ড মেলেনি । কেন তাঁদের সঙ্গে এই বিমাতৃসুলভ আচরণ, সেই প্রশ্নই তুলেছেন ছাত্রছাত্রীরা ।
ফিজিওথেরাপি ইন্টার্ন শুভদীপ মোদক বলেন, "2022 সালে এসএসকেএমে ইন্টার্নশিপ ছয় মাস থেকে এক বছরের জন্য বাড়ানো হয় এবং ওই ছাত্রদের মাসে 10 হাজার টাকা করে স্টাইপেন্ড দেওয়া হয় । আমরা সেই কাগজপত্র নিয়ে স্বাস্থ্যভবনে আবেদন করি । তারা জানায়, ই-ফাইলিং করা হয়ে গেলে এই স্টাইপেন্ড আমাদেরও দেওয়া হবে । এখান থেকে প্রিন্সিপাল ই-ফাইলিং করে দেওয়ার পরেও কোনও কাজ হয়নি । তাঁরা শুধু আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন ।"
তাঁর কথায়, "জুলাই মাস থেকে পিজিতে এমপিটির স্টাইপেন্ডের টাকা দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে । কিন্তু বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের বিপিটি-র স্টাইপেন্ড দেওয়া শুরু হয়নি । এর পেছনে কী কারণ আছে । আমরা ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ ইউনিভার্সিটির অধীনে এই কোর্স করছি । এনট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে আমরা ভর্তি হয়েছি ৷ তাহলে কেন বিপিটির ইন্টার্নরা স্টাইপেন্ডের টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । সেখানে একটা কলেজে 6 মাস থেকে এক বছর বাড়ানো হল, অথচ আমাদের কিছুই হল না । গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজের অধীনে এই কোর্স করানো হচ্ছে, তাহলে আমাদের ক্ষেত্রে নিয়ম আলাদা কেন ।"
বিপিটির ফাইনাল বিভাগের ছাত্র কৌশিক আহমেদ বলেন, "রাজ্যে দুটো কলেজে ফিজিওথেরাপি কোর্স করানো হয় । এসএসকেএমে যাঁরা পড়াশোনা করছেন তাঁরা স্টাইপেন্ড পাচ্ছেন । কিন্তু আমাদের কোনও স্টাইপেন্ড দেওয়া হচ্ছে না । আমরা প্রিন্সিপালের মাধ্যমে স্বাস্থ্যভবনে আবেদন করেছি । কিন্তু কী কারণে আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে, সেটা জানা নেই । আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে । এছাড়া আমাদের জন্য কোনও হস্টেল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি ।"
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজেরই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক জানান, "ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরে বিষয়টি স্বাস্থ্যভবনকে জানানো হয়েছে । স্বাস্থ্যভবন সবুজ সংকেত দিলে পড়ুয়াদের স্টাইপেন্ড দেওয়া শুরু হবে ।"