বালুরঘাট, 31 অক্টোবর: কালীপুজোতে এখনও প্রথা মেনে পাঁঠা বলি ও বোয়াল মাছ ভোগ দেওয়া হয় । জনশ্রুতি রয়েছে, এক সময় নাটোরের রানি ভবানী এই মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন । বজরায় করে এসে তিনি আত্রেয়ী নদী থেকে জল নিয়ে এসে মায়ের পুজো দিয়ে আবার ফিরে যেতেন নাটোরে ।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার শতাব্দী প্রাচীন কালীপুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম এই বালুরঘাট তহবাজার এলাকার বুড়া কালী মাতার মন্দিরের পুজো । প্রতিবছরের মতো এ বছরও কালীপুজো উপলক্ষে সেখানে প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে । এবার দীপান্বিতা অমাবস্যার কালীপুজো উপলক্ষে বুড়া কালী মাতার মন্দিরে আসার রাস্তা আলোকসজ্জায় ভরিয়ে তোলা হয়েছে । সেই পুরোনো রীতি রেওয়াজ মেনেই এ বছরও বালুরঘাট বুড়া কালী মাতার পুজো হবে । তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে পুজোর নিয়ম রীতি কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে ।
শোনা যায়, কয়েকশো বছর আগে বর্তমান বালুরঘাট বুড়া কালী মাতার মন্দিরের পাশ দিয়ে আত্রেয়ী নদী বইতো । মন্দির-সহ পুরো এলাকাটা ঘন জঙ্গল ছিল । শতাব্দীর প্রাচীন এই পুজোর সঠিক বয়স কত কেউ তা বলতে পারে না । এক তান্ত্রিক সেই সময় একটি প্রস্তর খণ্ডকে বিগ্রহ রূপে পুজো শুরু করেন । পরবর্তীতে বুড়া কালী মাতার নিত্যপুজো শুরু হয় । শতাব্দী প্রাচীন বিগ্রহের কারণেই বুড়া কালী মাতা নামে পরিচিত হন দেবী ।
বর্তমানে বুড়া কালী মাতা মন্দির থেকে অনেকটা পশ্চিমে সরে গিয়েছে আত্রেয়ী নদী । প্রথম দিকে টিনের ঘেরা দেওয়া মন্দিরে বুড়া কালী মাতার পুজো শুরু হয় । এখন বিশাল আকার মন্দিরের পূজিত হন বুড়া কালী মাতা । বুড়া কালী মাতার মন্দিরের পাশাপাশি শীতলা মাতা ও শিব ঠাকুরের মন্দির আছে ।
তবে শতাব্দী প্রাচীন বুড়া কালী মাতার পুজোকে কেন্দ্র করে দিনের পর দিন ভক্তদের ভিড় আরও বাড়ছে । প্রতিবছরই দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপুজোর দিন সকাল থেকেই বুড়া কালী মাতার মন্দিরে ভক্তদের ঢল নামে এবং সন্ধ্যার পর থেকেই বুড়া কালী মাতার মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য ভক্তদের ভিড় আরও বাড়তে থাকে । প্রতিবছরই কালীপুজোতে জেলা পুলিশ প্রশাসন বুড়া কালী মাতার পুজোতে যথেষ্ট সহযোগিতা করে থাকে । কালী পুজোর দিন মন্দিরে প্রচুর অন্ন ভোগের হাঁড়ি পড়ে ।
গত বছর বুড়া কালী মাতা পুজো সমিতির উদ্যোগে দেড় কিলো স্বর্ণালংকারে বালুরঘাটের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বুড়া কালী মাতাকে নতুন রূপে সুসজ্জিত করা হয়েছিল । এবছরও বুড়া কালী মাতাকে নতুন রূপে ও স্বর্ণালংকারে সুসজ্জিত করা হচ্ছে । সারা বছর রুপোর অলঙ্কারে সজ্জিত থাকলেও, কালীপুজো উপলক্ষে বুড়া কালী মাতাকে স্বর্ণালংকারে সাজানো থাকে দু'দিন । দীপান্বিতা কালীপুজো ছাড়াও, সারাবছর বুড়া কালী মাতা পুজো সমিতি নিত্যপুজো পরিচালনা করে ।