বোলপুর, 8 অগস্ট: 2004 সালে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পদক খোওয়া যাওয়ার পর ব্যকুল হয়ে শান্তিনিকেতনে ছুটে এসেছিলেন তৎকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই সময় বিশ্বভারতীর উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক সুজিত বসু ৷ তিনি আবার প্রেসিডেন্সি কলেজে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সহপাঠীও ছিলেন ৷ বৃহস্পতিবার ইটিভি ভারতকে সুজিতবাবু জানান, সেদিন প্রায় এক ঘন্টা শান্তিনিকেতনে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রবীন্দ্রভবন ঘুরে দেখে নোবেল চুরির যথাযথ তদন্তের আশ্বাসও দিয়েছিলেন ৷ এমনকী, উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ না করারও পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁকে ৷ এদিন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর প্রয়াণে সেদিনের কথা স্মৃতিচারণ করেন অধ্যাপক সুজিত বসু ৷
এদিন সকালেই প্রয়াত হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দুইবার মুখ্যমন্ত্রিত্বে বহু কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন তিনি ৷ তারমধ্যে অন্যতম হল গুরুদেবের নোবেল পদক চুরি নিয়ে তাঁর তৎপরতা। প্রসঙ্গত, 2004 সালে 24 মার্চ বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালা থেকে চুরি যায় গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পদক। 25 মার্চ চুরির কথা জানাজানি হয় ৷ নিজের হাতে নোবেল কমিটির কাছ থেকে সেই নোবেল পদক পেয়েছিলেন বিশ্বকবি ৷ পৃথিবী ইতিহাসে একমাত্র নোবেল চুরির ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছিল ৷
এছাড়া, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অত্যন্ত প্রিয় কবি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাই নোবেল চুরিতে ব্যকুল হয়েছিলেন তিনি ৷ চুরি যাওয়ার দু'দিন পর শান্তিনিকেতনে ছুটে এসেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তখন। সেই সময় বিশ্বভারতীর উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক সুজিত বসু ৷ কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে এক সঙ্গে পড়াশোনা করেছিলেন ৷ এদিন, ইটিভি ভারতকে বিশ্বভারতীর তৎকালীন উপাচার্য সুজিত বসু বলেন, "প্রায় এক ঘন্টা শান্তিনিকেতনে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রথমেই রবীন্দ্রভবনে গিয়েছিলেন ৷ নোবেল পদক যেখানে রাখা ছিল সেই জায়গা-সহ সব জায়গা ঘুরে দেখেছিলেন বুদ্ধবাবু ৷ পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপাচার্যের দফতরে এসেছিলেন ৷ কাদের সন্দেহ হয়, ইত্যাদি জানতেও চেয়েছিলেন ৷ সেই সময় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শোরগোল হচ্ছিল ৷ বিক্ষোভকারী কর্মীদের থামিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, 'কেন পদত্যাগ করবে, আমি আছি তো। দেখছি সমগ্র বিষয়টি ।"
অধ্যাপক সুজিত বসু সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, "আজ আমি অত্যন্ত মর্মাহত। আমি তাঁর সহপাঠী ছিলাম। নোবেল চুরির পর শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন ৷ আমার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল ৷ বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যা করছে করুক। আমি আমার তরফ থেকে যতটা করতে পারি করব ৷ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে উনি বিষয়টি শুনছিলেন ও পদক্ষেপ নেবেন বলেছিলেন। এগুলোই মনে পরে।"
উল্লেখ্য, যদিও পরবর্তীতে নোবেল চুরির তদন্তভার গ্রহণ করে সিবিআই। দীর্ঘ সময় তদন্তের পর হাল ছেড়ে দেয় সিবিআই। পরে রাজ্যে পালা বদলের পর নোবেল চুরির তদন্তের জন্য সিট গঠন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘ দিন তদন্তের পর তারাও হাল ছেড়ে দেন ৷ আজও গুরুদেবের আসল নোবেল পদকের হদিস পাওয়া যায়নি ৷ তবে, নোবেল কমিটির তরফে নোবেল পদকের একটি রেপ্লিকা দেওয়া হয়েছে। সেটাই রাখা আছে রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালায় ৷