রানিগঞ্জ, 9 অগস্ট: বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণ, রাজ্য-রাজনীতিতে একটি যুগের অবসান ! বিতর্ক, শ্রদ্ধা আর রাজ্যে শিল্পবিকাশে দেখা স্বপ্ন নিয়েই প্রয়াত হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন প্রশাসনিক প্রধান ৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্য়ু রাজ্যের রাজনীতিতে মহীরূহ পতন ! স্মৃতিচারণায় তাঁরই মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য বংশগোপাল চৌধুরী ৷
রাজ্যে বাম জামানায় অন্যতম মন্ত্রী ছিলেন বংশগোপাল চৌধুরী ৷ জ্যোতি বসুর থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি ৷ 1991 সালে রাজ্যে প্রথম কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দফতর হয় ৷ আর সেই দফতরের প্রথম মন্ত্রী হয়েছিলেন বংশগোপাল চৌধুরী ৷ পরে তিনি রাজ্যের শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলেছেন ৷ মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেখানো পথে হেঁটেছিলেন বংশগোপাল চৌধুরী ৷
বুদ্ধদেববাবুর প্রয়াণে সেই স্মৃতি ভাগে করে নিলেন তিনি ৷ বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, "25-26 বছর বয়স থেকেই আমি ওঁনাকে চিনতাম ৷ উনিই আমার পথপ্রদর্শক ছিলেন ৷ 26 বছর বয়সে আমি প্রথমবার বিধানসভায় যাই ৷ 1991 সালে আমি প্রথমবার মন্ত্রী হই ৷ নতুন দফতর হয় কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ৷ পলিটেকনিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার উন্নতির জন্য দফতরটি খোলা হয় ৷ সেই দফতরের মন্ত্রী হওয়ার পর জ্যোতি বসু আমাকে বলেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আমাকে গাইড করবেন ৷ সেই সময় বিশ্বব্যাংকের সাহায্য নিয়ে একের পর এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে, পলিটেকনিক হয় রাজ্যে ৷ কলকাতায় প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান, টেকনিক্যাল স্কুল জ্যোতিবাবু উদ্বোধন করেছিলেন ৷"
জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৷ দুই মুখ্যমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানেই গুরুত্বপূর্ণ দফতর সামলেছেন বংশগোপাল চৌধুরী ৷ তিনি বলেন, "বিদ্যুৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আমাকে শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের দায়িত্ব দেন ৷ সেই সময় জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে বৈঠকে ঠিক হয়, দুর্গাপুরে শিল্প বাণিজ্য সম্মেলন হবে ৷ সম্মেলন থেকেই দুর্গাপুর-আসানসোলে শিল্প আসে ৷ এছাড়াও রাজ্য অনেক শিল্প হয় ৷ হুগলি জেলায় একটি বড় কারখানা স্থাপিত হয় ৷ হলদিয়ায় পেট্রোকেমিক্যাল, মিতসুবিসি কারখানা ওনার চেষ্টাতেই হয় ৷ কলকাতায় চর্মনগরীর উন্নতি শুরু হয়েছিসসেই সময়েই ৷ বুদ্ধদেববাবুই গাইড করেছিলেন ৷ আমাকে চেয়ারম্যান করা হয়েছিল ৷ সেই লেদার শিল্প পশ্চিমবঙ্গে নতুন দিশা এনে ছিল ।"
খনি এলাকার ধস পুনর্বাসন প্রকল্প নিয়েও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন বংশগোপাল চৌধুরী ৷ তিনি বলেন, "খনি এলাকার ধস, গ্যাসের সমস্যা নিয়ে প্রাক্তন সাংসদ হারাধন রায়ের করা মামলাতেই সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল রাষ্ট্রয়ত্ত কয়লা সংস্থাকে পুনর্বাসন দিতে হবে ৷ সেইমত এই পুনর্বাসন নিয়ে প্রথম বৈঠক ওনার বাড়িতেই হয়েছিল ৷"
আসানসোলে শিল্প নিয়ে বলতে গিয়ে বংশগোপাল চৌধুরী জানান, ইস্কো কারখানা সম্প্রসারণের জন্য জমি নিয়ে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা হয়েছিল ৷ কিন্তু ওঁনার উপদেশ মতো আমি ব্যক্তিগতভাবে সেই সমস্যা মিটিয়েছিলাম । উনি সামনের থেকে, কখনও পিছন থেকে সবসময় আমাদের গাইড করে গিয়েছেন ৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য না থাকলে, রানিগঞ্জে বেঙ্গল পেপার মিল খুলতই না ৷