ETV Bharat / state

কেন এ হিংসা দ্বেষ ! হানাহানির অবসানে সোনার বাংলার খোঁজে বাংলাদেশিরা - Bangladeshis Want Peace

Bangladeshis Want Peace: আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করেছে সরকার ৷ দেশছাড়া হয়েছেন শেখ হাসিনা ৷ তবে তারপর থেকেই রাজধানী ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে হানাহানি ৷ এ সব কিছুর অবসান চাইছেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ৷ তাঁদের মনের কথা শুনলেন প্রকৃতি বসু ৷

ETV BHARAT
হানাহানির অবসানে সোনার বাংলার খোঁজে বাংলাদেশিরা (ছবি: এপি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 6, 2024, 6:34 PM IST

কলকাতা, 6 অগস্ট: প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ, আমার মরণ বাংলাদেশ...৷ ওপার বাংলার প্রতিটি মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুরণিত হয় মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা এই গান ৷ সেই সোনার বাংলাই আজ রক্তাক্ত, অগ্নিগর্ভ ৷ গণ অভ্যুত্থানে ভূপতিত টানা 15 বছরের শেখ হাসিনার সরকার ৷ ছাত্র আন্দোলনে পড়েছে রাজনৈতিক আঁচ ৷ পুরনো রাগ সুদে-আসলে মিটিয়ে নিতে আর আখের গোছাতে সক্রিয় আরও অনেক শক্তি ৷ ক্ষমতায় যারাই আসুক, এই বাংলাদেশের সাক্ষী হতে চাননি অতি বড় বাংলাদেশিও ৷ গত কয়েক ঘণ্টার হিংসা ও লুটতরাজে আতঙ্ক দানা বেঁধেছে স্থানীয়দের মধ্যে ৷

চাকরিতে সংরক্ষণ নিয়ে গত কয়েকদিনের ছাত্র আন্দোলনে আগুন জ্বলছে প্রতিবেশী দেশে ৷ সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্বিচারে গুলিচালনার অভিযোগ ৷ রবিবার পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে 300 জনের মৃত্যুমিছিলের সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ ৷ আর কোটা আন্দোলনের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ গোটা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে সোমবার ৷ দেশ ছাড়তে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনের দখল নেন আন্দোলনকারীরা ৷ তবে তারপর থেকেই একের পর এক হিংসার ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়েছে ৷ চলছে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ৷ নিশানা করা হচ্ছে আওয়ামি লিগের নেতাদের ৷ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ত্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দারা ৷ ইটিভি ভারতের কাছে তাঁরা জানালেন নিজেদের উদ্বেগের কথা ৷

ওপার বাংলার গৃহবধূ লিপি দে বললেন, "খুব চিন্তায় দিন কাটাচ্ছি ৷ আমার দেশে এসব কী হচ্ছে ৷ চারিদিকে আতঙ্কের পরিবেশ ৷ বাচ্চারা স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে ৷ স্কুলগুলি আজ খোলা রাখা হলেও কোনও অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাননি ৷ কবে আবার নিশ্চিন্তে রাস্তায় বেরোতে পারব ?"

ময়মনসিংহের বাসিন্দা উত্তম দে পেশায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী ৷ তিনি জানালেন, "যখন তখন এদিকে সেদিকে হামলা চলছে ৷ নেতাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ জয়নাল আবেদিন, মুজিবর রহমান-সহ বিভিন্ন বিশিষ্ট মানুষের মূর্তি ভাঙা হচ্ছে ৷ ভেঙে ফেলা হচ্ছে অন্যান্য স্থাপনা ও ভাস্কর্য ৷ তার উপর আমরা এখানে সংখ্যালঘু ৷ বেশ ভয় লাগছে ৷ দোকান বন্ধ রেখেছি ৷ অন্যান্য দোকানপাটও বন্ধ ৷ জানি না সবকিছু কবে স্বাভাবিক হবে ৷"

প্রশাসনের বিরুদ্ধে কেন এত ক্ষোভ ? এই প্রশ্নের জবাবে উত্তম বললেন, "সরকারের কিছু খামতি তো ছিলই ৷ আমাদের দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য খুব বেশি ৷ ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, অথচ গরিবদের কোনও উন্নতি হয়নি ৷ তবে কিছু ভালো কাজও রয়েছে হাসিনার সরকারের ৷ সে জন্যই বাংলাদেশ আজ অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে ৷"

ওপার বাংলার প্রখ্যাত নাট্যকার সাহাদাত হোসেন হিলুর গলায় আবার বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি ক্ষোভের সুর ধরা পড়েছে ৷ তাঁর কথায়, "ওরা মুখে বলেছে গণতন্ত্র ৷ কিন্তু কখনও বিরোধীদের কোনও স্পেস দিচ্ছো না ৷ চারিদিকে লুটপাট চলেছে, কোনও ব্যবস্থা নাওনি ৷ কারওকে ন্যায্য অধিকারটুকু দাওনি ৷ জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে ৷ এই ক্ষোভটা তো খুব স্বাভাবিক ৷ সেজন্যই তো আজ এত মানুষ রাস্তায় নেমেছে ৷"

তবে বর্তমানে তাঁর দেশে যে অস্থির পরিস্থিতি তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের নাট্যকার ৷ তিনি বলেন, "সন্ধে হলেই কিছু স্বার্থান্বেষী লোক নানা অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে ৷ সরকারি ভবনে হামলা চালাচ্ছে ৷ রাজনৈতিক নেতাদের আক্রমণ করছে ৷ হিংসা ছড়াচ্ছে ৷ এগুলো ঢাকাতেই বেশি ৷ তবে দেশের অন্যান্য প্রান্তেও এই হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে ৷ গোটা দেশ অশান্ত হয়ে রয়েছে ৷ পুলিশ তো ভয়ে ব্যারাক থেকে বেরোচ্ছেই না ৷ তাই উদ্বেগে আছি ৷ তবে কয়েকটা দিন গেলেই আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে ৷"

যে পক্ষ যেদিকেই থাক, এই অশান্ত পরিবেশ কোনও বাংলাদেশির কাছেই কাঙ্ক্ষিত নয় ৷ অনেকে আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের মূর্তি ভাঙার তীব্র বিরোধিতা করেছেন ৷ ছাত্র আন্দোলনের নামে অন্য কোনও বিদেশি শক্তি যাতে ফায়দা তুলতে না-পারে, সেবিষয়ে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী মানুষেরা ৷ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সবারই মনে বাজছে একটাই সুর, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...৷

কলকাতা, 6 অগস্ট: প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ, আমার মরণ বাংলাদেশ...৷ ওপার বাংলার প্রতিটি মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুরণিত হয় মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা এই গান ৷ সেই সোনার বাংলাই আজ রক্তাক্ত, অগ্নিগর্ভ ৷ গণ অভ্যুত্থানে ভূপতিত টানা 15 বছরের শেখ হাসিনার সরকার ৷ ছাত্র আন্দোলনে পড়েছে রাজনৈতিক আঁচ ৷ পুরনো রাগ সুদে-আসলে মিটিয়ে নিতে আর আখের গোছাতে সক্রিয় আরও অনেক শক্তি ৷ ক্ষমতায় যারাই আসুক, এই বাংলাদেশের সাক্ষী হতে চাননি অতি বড় বাংলাদেশিও ৷ গত কয়েক ঘণ্টার হিংসা ও লুটতরাজে আতঙ্ক দানা বেঁধেছে স্থানীয়দের মধ্যে ৷

চাকরিতে সংরক্ষণ নিয়ে গত কয়েকদিনের ছাত্র আন্দোলনে আগুন জ্বলছে প্রতিবেশী দেশে ৷ সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্বিচারে গুলিচালনার অভিযোগ ৷ রবিবার পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে 300 জনের মৃত্যুমিছিলের সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ ৷ আর কোটা আন্দোলনের সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ গোটা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে সোমবার ৷ দেশ ছাড়তে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনের দখল নেন আন্দোলনকারীরা ৷ তবে তারপর থেকেই একের পর এক হিংসার ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়েছে ৷ চলছে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ৷ নিশানা করা হচ্ছে আওয়ামি লিগের নেতাদের ৷ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ত্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দারা ৷ ইটিভি ভারতের কাছে তাঁরা জানালেন নিজেদের উদ্বেগের কথা ৷

ওপার বাংলার গৃহবধূ লিপি দে বললেন, "খুব চিন্তায় দিন কাটাচ্ছি ৷ আমার দেশে এসব কী হচ্ছে ৷ চারিদিকে আতঙ্কের পরিবেশ ৷ বাচ্চারা স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে ৷ স্কুলগুলি আজ খোলা রাখা হলেও কোনও অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাননি ৷ কবে আবার নিশ্চিন্তে রাস্তায় বেরোতে পারব ?"

ময়মনসিংহের বাসিন্দা উত্তম দে পেশায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী ৷ তিনি জানালেন, "যখন তখন এদিকে সেদিকে হামলা চলছে ৷ নেতাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ জয়নাল আবেদিন, মুজিবর রহমান-সহ বিভিন্ন বিশিষ্ট মানুষের মূর্তি ভাঙা হচ্ছে ৷ ভেঙে ফেলা হচ্ছে অন্যান্য স্থাপনা ও ভাস্কর্য ৷ তার উপর আমরা এখানে সংখ্যালঘু ৷ বেশ ভয় লাগছে ৷ দোকান বন্ধ রেখেছি ৷ অন্যান্য দোকানপাটও বন্ধ ৷ জানি না সবকিছু কবে স্বাভাবিক হবে ৷"

প্রশাসনের বিরুদ্ধে কেন এত ক্ষোভ ? এই প্রশ্নের জবাবে উত্তম বললেন, "সরকারের কিছু খামতি তো ছিলই ৷ আমাদের দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য খুব বেশি ৷ ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, অথচ গরিবদের কোনও উন্নতি হয়নি ৷ তবে কিছু ভালো কাজও রয়েছে হাসিনার সরকারের ৷ সে জন্যই বাংলাদেশ আজ অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে ৷"

ওপার বাংলার প্রখ্যাত নাট্যকার সাহাদাত হোসেন হিলুর গলায় আবার বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি ক্ষোভের সুর ধরা পড়েছে ৷ তাঁর কথায়, "ওরা মুখে বলেছে গণতন্ত্র ৷ কিন্তু কখনও বিরোধীদের কোনও স্পেস দিচ্ছো না ৷ চারিদিকে লুটপাট চলেছে, কোনও ব্যবস্থা নাওনি ৷ কারওকে ন্যায্য অধিকারটুকু দাওনি ৷ জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে ৷ এই ক্ষোভটা তো খুব স্বাভাবিক ৷ সেজন্যই তো আজ এত মানুষ রাস্তায় নেমেছে ৷"

তবে বর্তমানে তাঁর দেশে যে অস্থির পরিস্থিতি তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের নাট্যকার ৷ তিনি বলেন, "সন্ধে হলেই কিছু স্বার্থান্বেষী লোক নানা অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে ৷ সরকারি ভবনে হামলা চালাচ্ছে ৷ রাজনৈতিক নেতাদের আক্রমণ করছে ৷ হিংসা ছড়াচ্ছে ৷ এগুলো ঢাকাতেই বেশি ৷ তবে দেশের অন্যান্য প্রান্তেও এই হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে ৷ গোটা দেশ অশান্ত হয়ে রয়েছে ৷ পুলিশ তো ভয়ে ব্যারাক থেকে বেরোচ্ছেই না ৷ তাই উদ্বেগে আছি ৷ তবে কয়েকটা দিন গেলেই আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে ৷"

যে পক্ষ যেদিকেই থাক, এই অশান্ত পরিবেশ কোনও বাংলাদেশির কাছেই কাঙ্ক্ষিত নয় ৷ অনেকে আবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের মূর্তি ভাঙার তীব্র বিরোধিতা করেছেন ৷ ছাত্র আন্দোলনের নামে অন্য কোনও বিদেশি শক্তি যাতে ফায়দা তুলতে না-পারে, সেবিষয়ে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী মানুষেরা ৷ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সবারই মনে বাজছে একটাই সুর, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.