কলকাতা, 17 ফেব্রুয়ারি: 2010 সালে জাল পাশপোর্টে ভারতে আসার অভিযোগ এক বাংলাদেশি দম্পতির বিরুদ্ধে। তাদের জামিনের আবেদন খারিজ করল কলকাতা হাইকোর্ট। বর্তমানে বর্ধমানের বাসিন্দা দুলাল শীল ও স্বপ্না শীল 2010 সালে এদেশে আসেন।
বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন, জাল পাশপোর্ট কীভাবে হয়েছে তা কি প্রমাণিত? দম্পতির আধার কার্ড, ভোটার কার্ড থাকলেই কি ভারতীয়? কেউ কেউ এদেশের নাগরিক দেখাতে আয়কর-সহ অন্যান্য করও প্রদান করে। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলার শুনানি চলাকালীন বাংলাদেশীদের ভুয়ো পাসপোর্ট নিয়ে এমনটাই পর্যবেক্ষণ বিচারপতি দেবাংশু বসাকের।
পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা দুলাল শীল ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না শীলকে জাল পাসপোর্ট বানিয়ে ভারতে আসার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত 13 মাস ধরে পুলিশি হেফাজতেই রয়েছেন দু'জনে। তাঁদের আইনজীবীর দাবি, 2010 সালে ওই দম্পতি বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে পূর্ব বর্ধমানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁদের ভারত সরকার প্রদত্ত আসল আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও রেশন কার্ড রয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাতে তাঁরা বাড়িও পেয়েছেন। তারপরও পুলিশ বিনা কারণে তাঁদের গত এক বছর এক মাস ধরে নকল পাসপোর্ট থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করে রেখেছে বলে অভিযোগ।
জামিনের আবেদন করে দুলাল শীল এবং স্বপ্না শীল কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। সোমবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। সেখানেই বিচারপতি দেবাংশু বসাক মামলাকারীর আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, "এদেশে আসা সব বাংলাদেশির কাছেই ভারতীয় আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড আছে। আপনি ইনকাম ট্যাক্স দেন কি না জানি না, কিন্তু ওই সমস্ত বাংলাদেশিরা সকলেই ইনকাম ট্যাক্সও দেয়। জাল পাসপোর্ট বানিয়ে ভারতে আসা বাংলাদেশিদের অনেকের কাছেই এই রকম আধার কার্ড, ভোটার কার্ড রয়েছে। দেখছেন না, আমেরিকাও তো অবৈধভাবে থাকার অভিযোগে আমাদের দেশের কতজনকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে ! তাই, তাতে কিছু প্রমাণ হয় না। তাঁরা যে ভারতের প্রকৃত নাগরিক, সেই প্রমাণপত্র বা সরকারি নথি নিয়ে আসুন, আমি জামিন দিয়ে দেব।"
যদিও মামলাকারী দুলাল শীল ও স্বপ্না শীলের আইনজীবীদের দাবি, সেই সরকারি নথি তাঁদের দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর মক্কেলরা বৈধভাবেই ভারতে রয়েছেন এবং ভারতের নাগরিক। তাঁরা কোনও জাল পাসপোর্ট তৈরি করেননি। তাঁদের মক্কেলরা কোনও ফরেন সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের আওতায় পড়েন না।
2019 সালে ভারত সরকারের জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ফরেন সিটিজেনশিপ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের সেকশন-2 অনুযায়ী 31 ডিসেম্বর 2014 সালের আগে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা কেউ ফরেন সিটিজেনশিপ অ্যাক্টের আওতায় পড়বেন না। যদিও বিচারপতি দেবাংশু বসাক তাঁদের কোনও যুক্তি শুনতে রাজি হননি।