বারাসত, 15 মে: চতুর্মুখী লড়াইয়ে জমজমাট বারাসত কেন্দ্র । এবারও এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিগত তিনবারের সাংসদ চিকিৎসক কাকলি ঘোষ দস্তিদার । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের মহিলা সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি কাকলি 2009 সাল থেকে টানা 15 বছর ধরে বারাসতের সাংসদ । প্রতিবারই তাঁর জয়ের মার্জিন বেড়েছে । স্বাভাবিকভাবেই চতুর্থবার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী তৃণমূলের এই দাপুটে নেত্রী ।
কাকলির কেন্দ্র বারাসতে ভোট হবে 1 জুন । তাঁর বিপক্ষের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এবারে লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন বাম প্রার্থী তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় এবং পদ্ম প্রার্থী স্বপন মজুমদার । যিনি আবার বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক । রয়েছেন আইএসএফ প্রার্থী তাপস বন্দোপাধ্যায়ও ।
আধুনিক বারাসত শহরের শুরুটা কাকলি হাত ধরেই । প্রায় 720 কোটি টাকার নিকাশি প্রকল্প দিয়ে ডাক্তার দিদিমণির হাতেখড়ি সাংসদ হিসেবে । যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, মেডিক্যাল কলেজ, গ্যাসের পাইপলাইন, গঙ্গার পানীয় জল প্রকল্প । এর ফলে নগরায়নে সমৃদ্ধ হয়েছে বারাসত । স্বভাবতই উন্নয়নকে পাখির চোখ করেই এবারে নির্বাচনে লড়াইয়ে নেমেছেন তৃণমূলের চিকিৎসক প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার । উন্নয়নই যে হবে তাঁর নির্বাচনী হাতিয়ার তা অকপটে স্বীকারও করে নিয়েছেন এই শাসক প্রার্থী । অন্যদিকে, তাঁর বিরুদ্ধে অনুন্নয়নের অভিযোগ তুলে তাঁকে কুপোকাত করতে কোনও কসুর বাকি রাখছেন না বিরোধী শিবিরের প্রার্থীরা ।
সম্প্রতি বারাসত কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার । মনোনয়ন দাখিলের সময় তিনি তাঁর সম্পত্তির খতিয়ান পেশ করেছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে । ঠিক কী কী রয়েছে তাঁর বিষয়-আশয়, আসুন তা দেখে নেওয়া যাক ।
গত 5 বছরে কাকলি ঘোষ দস্তিদারের বার্ষিক আয়:
- 2018-19 অর্থবর্ষে বার্ষিক আয় ছিল 20, 76, 500 টাকা ৷
- 2019-20 অর্থবর্ষে বার্ষিক আয় কমে হয় 19,00,360 টাকা ৷
- 2020-21 অর্থবর্ষে বার্ষিক আয় আবারও বেড়ে হয় 21, 74, 210 টাকা ৷
- 2021-22 অর্থবর্ষে ফের কাকলির আয় কমে হয় 15, 35, 580 টাকা ৷
- 2022-23 অর্থবর্ষে সেই আয় কমে হয়েছে 12, 99, 730 টাকা ৷
হলফনামায় কাকলি ঘোষ দস্তিদার তাঁর চিকিৎসক স্বামী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারেরও শেষ পাঁচ বছরের বার্ষিক আয় জমা দিয়েছেন ।
কাকলির স্বামী সুদর্শনের গত 5 বছরের বার্ষিক আয়:
- 2018-19 অর্থবর্ষে আয় ছিল 31, 47, 900 টাকা ৷
- 2019-20 অর্থবর্ষে সুদর্শনের আয় কমে হয় 28, 40, 550 টাকা ৷
- 2020-21 অর্থবর্ষে আয় আরও কমে হয় 12, 85, 060 টাকা ৷
- 2021-22 অর্থবর্ষে আবারও আয় বেড়ে হয় 19, 86, 360 টাকা ৷
- 2022-23 অর্থবর্ষে সেই আয় ফের বেড়ে হয় 43, 32, 960 টাকা ৷
কাকলি ঘোষ দস্তিদারের অস্থাবর সম্পত্তি:
- এই মুহূর্তে কাকলির হাতে নগদ রয়েছে 1, 26, 054 টাকা । আর তাঁর স্বামী সুদর্শনের হাতে নগদ রয়েছে 1, 29, 365 টাকা ৷
- বিভিন্ন ব্যাংকে সাংসদের মোট জমা রয়েছে 48, 65, 409 টাকা ৷
- কর্পোরেট বন্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ 8 লাখ টাকা ৷
- নিজের ফার্টিলিটি সেন্টারে বিনিয়োগ 85 হাজার টাকা ৷
- ওয়েলথ বিল্ডিং প্ল্যানে বিনিয়োগ 5 লাখ টাকা ৷ 2025 সালে সেই বিনিয়োগ থেকে মিলবে 10 লাখ টাকা ৷
- জীবনবিমা আছে 20 লাখ টাকার ৷
- বাৎসরিক 39, 136 টাকার প্রিমিয়ামে চিকিৎসা বিমা রয়েছে 6, 25,000 হাজার টাকার ৷
- পাওনা বাবদ অর্থের পরিমাণ 1, 43, 943 টাকা ৷
- আসবাবের মূল্য 75 হাজার টাকা ৷
- কাকলি ঘোষ দস্তিদারের হন্ডা সিটি, মাহিন্দ্রা জিপ এবং টয়োটা ইনোভা মিলিয়ে মোট তিনটি গাড়ি রয়েছে । সেই তিনটি গাড়ির মোট মূল্য 9, 42, 975 টাকা ৷
- হিরের নেকলেস, হিরের পেনডেন্ট-সহ সাংসদের মোট সোনা ও হিরের অলঙ্কার রয়েছে 53, 55, 000 টাকার ৷
কাকলি ঘোষ দস্তিদারের স্বামীর অস্থাবর সম্পত্তি:
- কাকলির স্বামীর বিভিন্ন ব্যাংকে মোট গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ 80, 43, 982 টাকা
- কাকলির ফার্টিলিটি সেন্টারে স্বামীর বিনিয়োগের পরিমাণ 1, 07, 000 টাকা
- 69 হাজার টাকার প্রিমিয়ামে স্বামীর চিকিৎসাবিমার পরিমাণ 11, 25, 000টাকা
- সুদর্শনের মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ 2, 20, 000 টাকার
- মার্জিন মানি হিসেবে ব্যাংক থেকে পাওনা 20 লাখ টাকা
- ফ্ল্যাটের অগ্রিম হিসেবে প্রদেয় অর্থ বাবদ পাওনা 10 লাখ টাকা
- স্বামীর নামে স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে মোট 6, 30, 000 টাকার
- কাকলির স্বামীর ঋণের পরিমাণ প্রায় 26 লাখ টাকা
- কাকলির নামে প্রায় 10 লাখ টাকার ঋণ রয়েছে
কাকলি ও তাঁর স্বামী সুদর্শনের স্থাবর সম্পত্তি: - কাকলির নিজের নামে কোনও আবাদী জমি নেই ৷
- দিগবেড়িয়াতে 1 বিঘা 13 কাঠা 6 ছটাক আবাদী জমি রয়েছে কাকলির স্বামী সুদর্শনের নামে । যার বর্তমান বাজার মূল্য 53 লাখ টাকা ৷
- ছেলের সঙ্গে যৌথভাবে কাকলির রাজারহাটে 5 কাঠা 7 ছটাক অনাবাদী জমি রয়েছে ৷ যার বর্তমান বাজার মূল্য 28 লাখ টাকা ।
- কাকলির স্বামীরও অনাবাদী জমি রয়েছে 21 কাঠা 13 ছটাক, যার বাজার মূল্য 70 লাখ টাকা ।
- স্বামী সুদর্শনের সঙ্গে কাকলির যৌথ মালিকানায় কলকাতায় 2,396 বর্গ ফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে । যার বর্তমান বাজার মূল্য 55, 75, 000 টাকা ।
- স্বামী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারের দিগবেড়িয়ায় নিজস্ব একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে । যার বর্তমান বাজারমূল্য 40 লাখ টাকা ।
- কলকাতায় সুদর্শন এবং কাকলির যৌথ মালিকানায় একটি ফ্ল্যাটের হিসেব দেখানো হয়েছে । যার বাজার মূল্য 2 কোটি 19 লাখ 23 হাজার 708 টাকা।
কাকলির বিরুদ্ধে মামলা বলতে একটিই রয়েছে । যেটি সিবিআইয়ের ।
আরও পড়ুন: