মালদা, 24 জুন: তাহলে জঞ্জাল করের কী হবে ? পৌরবোর্ডের সেই সিদ্ধান্ত কি বিশ বাঁও জলে ? সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পর থেকেই ফিসফাস ইংরেজবাজার পৌরসভার অন্দরে ৷ সম্প্রতি ইংরেজবাজার পৌরসভার বোর্ড অফ কাউন্সিলের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, এবার থেকে আবর্জনা সংগ্রহের জন্য বাড়ি বাড়ি কর আদায় করা হবে ৷ বাণিজ্যিক এলাকা আর হোটেল-রেস্টুরেন্ট তো আছেই ৷ তবে কবে থেকে সেই কর আদায় শুরু হবে, তা জানায়নি পৌর কর্তৃপক্ষ ৷ কিন্তু পৌরসভার এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে জেলার বণিকমহল ৷ শহরবাসীর মধ্যেও ক্ষোভ দেখা দেয় ৷
রাজ্যের প্রতিটি পৌরসভার প্রধান ও কর্পোরেশনের মেয়রদের কাজ নিয়ে নবান্নের সভাগৃহে ক্ষোভ উগড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ টেন্ডার দুর্নীতি, নিজেদের ইচ্ছেমতো কর চালু করা, বেআইনি নির্মাণ, সরকারি জায়গায় টাকার বিনিময়ে লোক বসানো, জলাজমি ভরাট-সহ একাধিক প্রসঙ্গে তিনি মেয়র ও পুরপ্রধানদের তিরস্কার করেন ৷
'আপনাদের টাকা খাওয়ার জন্য রাজ্যের নাম খারাপ হচ্ছে', বালি-হাওড়া নিয়ে খড়গহস্ত মমতা
ইংরেজবাজারে জঞ্জাল কর চালু করার বিষয়ে পৌরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী দাবি করেছিলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দিয়েছে জঞ্জাল সংগ্রহের কর আদায় না-করলে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য যে টাকা দেওয়া হয় তা আর দেওয়া হবে না ৷ বিষয়টি নিয়ে আমরা বোর্ড অফ কাউন্সিলের সভায় আলোচনা করেছি ৷ সেই আলোচনা সাপেক্ষে আমরা এই কর লাগু করার চিন্তাভাবনা করছি ৷ কবে থেকে এই কর চালু করা হবে, তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি ৷ এর জন্য প্রথমে মানুষকে জানাতে হবে ৷ তাদের বোঝাতে হবে ৷ যদি আমরা পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা না-পাই তবে কাজ করব কীভাবে ? এখন শহরবাসীর একাংশ যেখানে সেখানে বাড়ির আবর্জনা ফেলে দিচ্ছে ৷ এই কর চালু হলে তারা আর সেটা করবে না ৷ গৃহস্থ বাড়ি, কমার্শিয়াল কিংবা হোটেল-রেস্টুরেন্টের কর আলাদা হবে ৷" তবে সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পর ইটিভি ভারতের তরফে তাঁকে ফোন করা হলে প্রথমে তিনি ফোন ধরেননি ৷ পরে অবশ্য 'এখন ব্যস্ত আছি' বলে ফোন কেটে দেন ৷
ইংরেজবাজার পৌরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু জঞ্জাল কর লাগু করাই নয়, কোন ক্ষেত্রে কত টাকা কর নেওয়া হবে, সেটাও চূড়ান্ত হয়েছিল ৷ গৃহস্থ বাড়ি পিছু দৈনিক এক টাকা কর ধার্য হয়েছিল ৷ বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে তার হার দৈনিক পাঁচ টাকা ৷ হোটেল ও রেস্টুরেন্টের মালিকদের প্রতিদিন গুনতে হবে 25 টাকা ৷ এমনিতেই এই পৌরসভায় নাগরিকদের সম্পত্তি কর বাড়তে চলেছে ৷ পরিশ্রুত পানীয় জল না পেলেও প্রতি মাসে জল কর দিতে হচ্ছে নাগরিকদের ৷ তার মধ্যে জঞ্জাল কর চালুর সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন শহরবাসী ৷
মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক উত্তম বসাক আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, "মাসদুয়েক আগে পৌর কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে বিভিন্ন দোকান থেকে আবর্জনা সংগ্রহের জন্য কর আদায়ের কথা জানায় ৷ আমরা জানিয়েছিলাম, এই কর লাগু করার আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক ৷ পরে শুনি, প্রত্যেকটি দোকানের জন্য দৈনিক পাঁচ টাকা আর হোটেল-রেস্টুরেন্টের জন্য 25 টাকা কর ধার্য করেছে পৌরসভা ৷ ব্যবসায়ীরা দোকান ঘরের ভাড়া, জিএসটি থেকে শুরু করে ট্রেড লাইসেন্স ফি নিয়মিত দিয়ে থাকেন ৷ এখন যদি তাঁদের জঞ্জাল করও দিতে হয় তবে তাঁরা ব্যবসা করবেন কীভাবে ! আমরা এই কর মানছি না ৷ এই কর লাগু করার আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে পৌরসভাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ৷"
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পর পৌর কর্তৃপক্ষ যে জঞ্জাল কর লাগু করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছোতে বাধ্য হবে, তা মানছেন জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতা ৷ পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা শহর তৃণমূলের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বলছেন, "এবারের লোকসভা ভোটে টের পাওয়া গিয়েছে, আমরা পৌর এলাকার মানুষদের থেকে দূরে সরে গিয়েছি ৷ শুধু ইংরেজবাজার নয়, রাজ্যের বেশিরভাগ পৌরসভায় একই ছবি ৷ মুখ্যমন্ত্রীও বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন ৷ তিনি সমস্ত তথ্য নিয়েই আজ বৈঠক করেছেন ৷ আজ তিনি যে যে দুর্নীতির কথা বলেছেন, তার প্রতিটিই ইংরেজবাজার পৌর এলাকায় হয়েছে ৷ পৌরসভা এখন কিছু মানুষের পকেট ভরার কারখানায় পরিণত হয়েছে ৷ তাহলে নির্বাচনে মানুষ আমাদের সঙ্গে থাকবেন কেন ?"
এই বিষয়ে বিজেপির জেলা নেতা অজয় গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর ঘুম ভেঙেছে ৷ এটা ভালো কথা ৷ তবে তাঁকে প্রমাণ করতে হবে, আজ তিনি যা বলেছেন সেটা শুধুই মানুষকে ভাঁওতা দেওয়ার জন্য নয় ৷ তিনি ইংরেজবাজার পৌরসভার বিরুদ্ধে তদন্ত করুন ৷ দেখুন, এখানে কীভাবে তাঁর দলের লোকজন জলাশয় ভরাট করছে, টেন্ডার দুর্নীতি করছে, ধমকে চমকে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে, শহরের সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছে ৷ এসব ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করলে আমরাও তাঁকে নৈতিক সমর্থন করব ৷"
বাতিল করুন NEET, রাজ্যের হাতে দিন ডাক্তারি পরীক্ষার দায়িত্ব, মোদিকে চিঠি মমতার