বর্ধমান, 29 ফেব্রুয়ারি: লোকসভা নির্বাচন দোড়গোড়ায় ৷ সব রাজনৈতিক দলই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ৷ সাংগঠনিক কাজের পাশাপাশি দেওয়াল লিখনের মাধ্যমে প্রচার শুরু হয়েছে ৷ ব্যতিক্রম নয় পূর্ব বর্ধমানও ৷ কিন্তু এই দেওয়াল লিখন ঘিরেই ভোটের মুখে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা ৷ বিজেপির অভিযোগ, সিপিএমকে দেওয়াল লিখনে সাহায্য করছে তৃণমূল ৷ সিপিএম পালটা বিজেপি ও তৃণমূল আঁতাতের অভিযোগ তুলেছে ৷ তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য বিরোধীদের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে ৷
উল্লেখ্য, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি যে একা লড়াই করবে, সেটা স্পষ্ট ৷ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর দলও এই রাজ্যে একাই ভোটে লড়বে ৷ তার পর কংগ্রেস-তৃণমূলের জোটের আশা সামান্য হলেও জিইয়ে আছে ৷ কংগ্রেসের জাতীয়স্তর থেকে এখনও জোটের আশা ছাড়া হয়নি ৷ ফলে বাংলায় বাম-কংগ্রেসের আসন সমঝোতার বিষয়টি ঝুলে রয়েছে ৷
এই পরিস্থিতিতে বর্ধমান শহরে কংগ্রেসকে ছাড়াই দেওয়াল লিখন শুরু করে দিয়েছে সিপিএম ৷ এই প্রসঙ্গে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন বলেন, ‘‘জোট প্রসঙ্গে যদি কিছু থাকে, তাহলে রাজ্য নেতৃত্ব সেটা জানিয়ে দেবে । ইতিমধ্যেই সিপিএমের দেওয়াল লিখন শুরু হয়েছে ।’’ শুধু সিপিএমই নয়, তৃণমূল কংগ্রেসেরও দেওয়াল লিখন চোখে পড়ছে বর্ধমান শহরে ৷
আর এই বিষয়টিকেই সামনে রেখে সরব হয়েছে বিজেপি ৷ বিজেপির জেলা যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক দেবজ্যোতি সিংহ রায় বলেন, ‘‘বিভিন্ন বিধানসভা এলাকায় আমাদের দেওয়াল লিখন আরম্ভ হয়েছে । তৃণমূল কংগ্রেস সেই দেওয়াল লিখনে বাধা দিচ্ছে । শুধুমাত্র বিজেপিকে আটকানোর জন্য তারা সিপিএমকে এগিয়ে দিচ্ছে । দেওয়াল লিখনের ক্ষেত্রে একই ব্যাপার । যে দেওয়াল এতদিন আমাদের দখলে ছিল, সেই দেওয়াল সিপিএমকে দিয়ে লেখানো হচ্ছে । বর্ধমানের নীলপুর এলাকায় আমাদের দেওয়াল লিখন হয়েছিল । রাতের অন্ধকারে সেই দেওয়াল লিখন মুছে দেন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা ।’’
ওই বিজেপি নেতার আরও দাবি, ‘‘আগে যাঁরা সিপিএমের প্রথম সারির নেতা ছিলেন, আজ তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা । যাঁরা বাম আমলে সন্ত্রাস করেছিলেন, তাঁরাই আজ তৃণমূল নেতা । আর যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেস করতেন, তাঁরা আজ নেই । বিজেপি কিছু করতে গেলে পুলিশ, আদালতের অনুমতি নিতে হচ্ছে । তারা জানে সিপিএমের কোনও সংগঠন নেই । তাদের কাছে বিপদ হচ্ছে বিজেপি । তাই বিজেপিকে আটকাতে সিপিএমকে অক্সিজেন দিচ্ছে তৃণমূল ।’’
সিপিএম অবশ্য পালটা তৃণমূল ও বিজেপির মধ্য়ে আঁতাতের অভিযোগ তুলছে ৷ সৈয়দ হোসেন বলেন, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে যে একটা সেটিং আছে, সেটা আজ সবাই বুঝে গিয়েছে । এই সেটিং যত স্পষ্ট হচ্ছে, ততই তারা সিপিএমের নামে বলছে । বিজেপি জানে পূর্ব বর্ধমান জেলায় আজ তাদের অবস্থা কেমন । আসলে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে যে বোঝাপড়া, সেটা তৃণমূল কিংবা বিজেপির সমর্থকেরাও জানে । কেন্দ্রে যতদিন বিজেপি আছে, ততদিন রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে যাবে । আর রাজ্যের মাটিতে বিজেপির যত বাড়বাড়ন্ত হবে, তৃণমূল কংগ্রেসের জমি ততই মজবুত হবে । সেই কারণেই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজত্বে আরএসএসের ক্যাম্প বাড়ছে ।’’
আর বিজেপি ও সিপিএমের নেতাদের এই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস কাউকে দেওয়াল লিখতে বাধাও দেয় না, আর কাউকে উসকানিও দেয় না । তৃণমূল কংগ্রেস নিজের মতো কাজ করে । আমরা অনেক আগেই থেকেই নির্বাচনের জন্য তৈরি । শুধু নির্বাচন নয়, সারাবছর আমরা মানুষের পাশে থাকি ।’’
তাঁর পালটা দাবি, ‘‘বিজেপিকে অক্সিজেন সিপিএম দিয়েছে আর সিপিএমকে অক্সিজেন বিজেপি দিয়েছে । এটা রাজ্য রাজনীতিতে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে । 2019 সালেও দেখা গেছে বামের ভোট রামে গিয়েছে । আবার বিজেপির বর্তমান নেতৃত্ব সিপিএম থেকে আসা ৷ সুতরাং তাদের মধ্যে একটা গোপন আঁতাত আছে । তৃণমূল নিজের মতো করে নির্বাচনে লড়বে । আর দেওয়াল লিখনের ক্ষেত্রে আমরা কাউকে বাধা দিই না । যারা বলছে তারা মিথ্যে কথা বলছে ।’’
আরও পড়ুন: