রায়গঞ্জ, 30 মার্চ: এ এক আজব আসন ৷ যেখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থীর গায়েই ‘দলবদলু’ তকমা ৷ তৃণমূলের প্রার্থী আসলে বিজেপির বিধায়ক ৷ আবার বিজেপির প্রার্থী কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল হয়ে গেরুয়া শিবিরে আসেন ৷ আর কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক ছিলেন ৷ ফলে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের ভোটাররা এবার নিজেদের পছন্দের প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে বারবার হোঁচট খাচ্ছেন ৷
এবার এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী ৷ এলাকার মানুষ কৃষ্ণকে ‘ধনকুবের’ হিসাবেই চেনে ৷ গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন ৷ গেরুয়া শিবির তাঁকে রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করে ৷ ভোটে জেতেন এবং তারপরেই পালটি খান কৃষ্ণ ৷ যোগ দেন তৃণমূলে ৷ তাঁর এমন আনুগত্যকে সম্মান জানিয়েছিল ঘাসফুল শিবিরও৷ পুরস্কৃত করা হয়েছিল তাঁকে ৷
এবার এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কার্তিকচন্দ্র পাল ৷ ছাত্র পরিষদের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ ৷ ধীরে ধীরে জেলা কংগ্রেসের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন ৷ কংগ্রেস পরিচালিত তৎকালীন কালিয়াগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রয়াত অরুণ দে সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত ছিলেন ৷ অরুণবাবু জীবিত থাকাকালীনই 2016 সালে তৃণমূলে যোগ দেন ৷ চার বছরের ‘মধুচন্দ্রিমা’ শেষে 2020 সালের শেষদিকে বিজেপির ঝাণ্ডা হাতে তুলে নেন তিনি ৷
এক সময় রায়গঞ্জকে প্রিয়র-গড় বলা হতো ৷ সেই প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এখন আর বেঁচে নেই ৷ 2009 সালের পর এই কেন্দ্রে জিততেও পারেনি কংগ্রেস ৷ এবার এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে আলি ইমরান রমজকে ৷ বামদের সমর্থনও রয়েছে এলাকায় ভিক্টর নামেই পরিচিত এই নেতার পিছনে ৷ কিন্তু তিনি আবার টানা তিনবার ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক ছিলেন ৷ দলে প্রতিবাদী হিসাবে পরিচিত ছিলেন তিনি ৷ 2022 সালে ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে যোগ দেন কংগ্রেসে ৷
এক দলবদলুকে মানুষ কেন বিশ্বাস করবে ৷ প্রশ্ন শুনেই তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী সাফ জানিয়ে দেন, ইটিভি ভারতের ক্যামেরায় তিনি কোনও কথা বলবেন না ৷ অবশ্য তাঁর হয়ে ব্যাট ধরেছেন জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সন্দীপ বিশ্বাস ৷ তিনি বলেন, “দলবদলু বলে কোনও কথা হয় না ৷ নীতি ও আদর্শের উপর দাঁড়িয়ে মানুষ দল করে ৷ এই প্রশ্ন সাধারণ মানুষের হতে পারে না ৷ তাহলে ভিক্টর কোথায় থেকে এল ? ও বামফ্রন্ট থেকে কংগ্রেসে গিয়েছে ৷ কার্তিক পাল কংগ্রেস থেকে তৃণমূল হয়ে বিজেপিতে গিয়েছে ৷ আজ বিরোধী দলনেতা কোথায় থেকে এসেছেন ? তাই এসব বলে কিছু হবে না ৷’’
তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে, তাঁর কাজের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ভূমিপুত্র কৃষ্ণ কল্যাণী আমাদের প্রার্থী হিসাবে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৷ ভোটাররা অবশ্যই আমাদের বিশ্বাস করবেন ৷ কারণ, মানুষের বিশ্বাস অর্জন করাই আমাদের রাজনীতি ৷ এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ ৷”
বিজেপি প্রার্থী কার্তিকচন্দ্র পাল বলছেন, “আমি যখন কালিয়াগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলাম, তখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিই ৷ বিজেপি তখনও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় ছিল না, আজও নেই ৷ তাই মানুষ আমাকে কখনও অবিশ্বাস করবে না ৷ আর আগামিদিনে মানুষের একটাই ভরসা, মোদিজি ৷”
অন্যদিকে ভিক্টরের বক্তব্য, “আমি ক্ষমতার লোভে কখনও দল পরিবর্তন করিনি ৷ আমি মানুষের জন্য লড়াই করি ৷ লড়াই করার জন্যই বামফ্রন্ট থেকে কংগ্রেসে এসেছি ৷ কংগ্রেসের হয়েই রায়গঞ্জ লোকসভা আসনে প্রার্থী হয়েছি ৷ ক্ষমতার লোভ থাকলে আমি তৃণমূলেও যেতে পারতাম ৷ আমি সেটা করিনি৷ মানুষ আমার প্রতি আস্থা রেখেছে ৷ তাই মানুষকে আশ্বস্ত করার প্রয়োজন আমার নেই ৷ মানুষ জানে, ভিক্টর তাদের হয়ে লড়াই করার জন্য তৈরি রয়েছে ৷”
আরও পড়ুন: