ব্যারাকপুর, 11 মার্চ: একই দলে থেকেও তাঁরা পরস্পরের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ৷ একজন হলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং ৷ অপরজন জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম ৷ তাই তৃণমূলে থেকেও সবসময় সোমনাথ চেয়ে এসেছেন অর্জুনকে যেন ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে লোকসভায় প্রার্থী না-করা হয় । যেমন চাওয়া, তেমন পাওয়া! শেষমেশ সাংসদ অর্জুন সিংকে লোকসভা নির্বাচনে টিকিট দেয়নি তৃণমূল । এ নিয়ে অর্জুনের গোঁসা হলেও তাঁর টিকিট না-মেলায় ইটিভি ভারতের মুখোমুখি সোমনাথ শ্যাম ৷
প্রশ্ন: আপনাদের দাবি মেনেই কি অর্জুন সিংকে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী করলেন না তৃণমূল সুপ্রিমো ?
উত্তর: উনি(মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)সবটাই জানেন এবং বুঝতে পেরেছেন ব্যারাকপুরের মানুষ ঠিক কী চাইছেন। তাই নিশ্চয় বিচার-বিশ্লেষণ করেই এটা করা হয়েছে । উনি মানুষের কথা শুনেছেন । মানুষের কথা রেখেছেন । এ জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।
প্রশ্ন: আপনি তো বারবার অর্জুন সিংয়ের প্রার্থী পদ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন ৷ যেটা চাইলেন সেটাই তো হল , আপনার প্রতিক্রিয়া?
উত্তর: ব্যারাকপুরের মানুষ শান্তিপ্রিয় । তাঁরা চান শান্তির আবহ ও পরিবেশ বজায় থাকুক । এখানে আমার লড়াই ব্যক্তিগত কিংবা নিজের নয়, তৃণমূল কর্মীদের হয়ে লড়াই । তাঁদের ওপর যখনই কোনও অন্যায়-অত্যাচার হয়েছে তখনই আমি লড়াইয়ের জন্য এগিয়ে এসেছি । তাছাড়া দল যেটা সিদ্ধান্ত নেবে সেটা তো সকলকেই মাথা পেতে নিতে হবে । যাকেই প্রার্থী করুক যেখানেই সেটা মেনে নিতে হবে ।
প্রশ্ন: অর্জুন সিংয়ের পরিবর্তে ব্যারাকপুর থেকে প্রার্থী মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক ৷ আপনি খুশি ?
উত্তর: 1992 সাল থেকে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছেন পার্থ ভৌমিক। এর আগে দলের বিভিন্ন দায়িত্বও সামলেছেন তিনি । উনি দিদির খুব কাছের ৷ ওঁনাকে দিদি খুব পছন্দ ও স্নেহ করেন । এমন একজন লোক যাঁর সঙ্গে কারোর কোনও বিরোধ নেই । বিতর্কও নেই । উনি সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্য । উনি যেখানেই যান, সেখানেই ওঁনাকে সাদরে গ্রহণ করে নেয় সকলে । ওঁনাকে ঘিরে কখনও বিতর্কিত আলোচনাও হয় না । তাই এরকম একজন নিষ্ঠাবান লোক প্রার্থী হলে সবারই ভালো হবে ।
প্রশ্ন: আপনারা তো বারবার বলে এসেছেন অর্জুন সিং একদিকে তৃণমূলে, অন্যদিকে বিজেপির । টিকিট না মেলার পর ওঁনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি সেদিকেই মোড় নিতে পারে?
উত্তর: এটা নিয়ে আমি কিছু বলব না । সেটা ওঁনার ব্যক্তিগত বিষয় । উনি কী করবেন, না করবেন । যেহেতু উনি এখনও আমাদের দলে আছেন । সেহেতু আশা করব, উনি আমাদের দলে থেকেই একসঙ্গে কাজ করবেন ।
প্রশ্ন: একটা কথা শোনা যাচ্ছিল, অর্জুন সিংকে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের পরিবর্তে অন্য কোনও কেন্দ্র থেকে লড়াই করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল দলের পক্ষ থেকে । কিন্তু সাংসদ সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন বলেই খবর । কী বলবেন?
উত্তর: এরকম কোনও প্রস্তাবের কথা আমার জানা নেই । উনি অন্য কোনও কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হতে চাননি অথবা ওঁনাকে অন্য কোনও কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হতে বলা হয়েছিল । তাই যেটা জানা নেই, সেটা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না ।
এরপরই তাঁর সংযোজন,"মা-মাটি-মানুষের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি জন্ম থেকে মৃত্যু। সবসময় মানুষের পাশে থাকেন । মানুষের কথা বুঝতে পারেন । মানুষের আওয়াজ ওঁনার কানে সবসময় পৌঁছয় । তাই তো উনি মানুষের এত সেবা করতে পারেন । উনি যেটা ভালো বুঝেছেন, সেটাই করেছেন ।"
প্রশ্ন: তাহলে কি অর্জুন সিং প্রার্থী না হওয়ায় আপনারা খুশি ?
উত্তর: এখানে খুশি-অখুশির কোনও ব্যাপার নেই । রাজনীতিকে সম্পূর্ণ খেলার আঙ্গিকে দেখতে হবে । এখানে সকলেই প্রথম হতে চায় । কিন্তু সেই খেলাতে যিনি দৌড়ে এগিয়ে যাবেন, তিনিই প্রথম হবেন । এটাই ধ্রুব সত্য । তবে এটুকু বলতে পারি, পার্থ ভৌমিকের মতো লোক প্রার্থী হওয়ায় আমরা ভীষণ খুশি । ব্যারাকপুর-সহ নৈহাটির মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওঁনাকে প্রার্থী হিসাবে মেনে নিয়েছে । মানুষ এবার শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন । উপকৃত হবেন ব্যারাকপুরের মানুষ ।"
অর্থাৎ একটা বিষয় স্পষ্ট ৷ প্রশ্নোত্তর পর্বে অর্জুনের নাম মুখে না নিলেও তাঁকে কিন্তু ছত্রেছত্রে বিদ্ধ করেছেন জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম । এরপর অর্জুন সিংয়ের পরের পদক্ষেপ কী হয় সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিকমহল ৷
আরও পড়ুন: