ব্যারাকপুর, 1 মার্চ: প্রবীণ-নবীন দ্বন্দ্ব নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই জোর চর্চা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে । এই আবহেই এবার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন শাসক দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় । প্রথমে, লোকসভা ভোটে টিকিট পাওয়া নিয়ে সংশয়ের সুর শোনা গেল তাঁর গলায় । পাশাপাশি দল টিকিট দিলেও তিনি জিততে পারবেন কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা প্রকাশ করলেন দমদমের তৃণমূল সাংসদ ।
তাহলে কি কোথাও তাঁর মধ্যে আশঙ্কা কাজ করছে যে 2024-র লোকসভা ভোটে দল ফের তাঁকে প্রার্থী নাও করতে পারে ? নাকি প্রবীণ-নবীন দ্বন্দ্বের মধ্যে লোকসভা ভোটের টিকিট সুনিশ্চিত করতে কৌশলে দলকে বার্তা দিলেন তৃণমূলের এই বর্ষীয়ান সাংসদ ? এমনই সব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে । তবে, যাই হোক না কেন, সাংসদ সৌগত রায়ের এই মন্তব্য ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে শাসকের অভ্যন্তরেই । এই নিয়ে বিরোধীরাও কটাক্ষ করতে শুরু করেছে ।
দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক ! প্রথমে কংগ্রেস দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি । ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও সামলেছেন । সবেতেই নিজের ছাপ রেখে গিয়েছেন সৌগত রায় । 1977 সালে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতে সংসদীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন । এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতিতে অন্যতম বর্ষীয়ান মুখ তিনি । পেট্রোলিয়াম ও কেমিক্যাল প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলেছেন ।
পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের হয়ে রাজনৈতিক জীবনের নতুন লড়াই শুরু হয় । এরপর 2009, 2014 ও 2019 সালে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন সৌগত । দীর্ঘ সংসদীয় রাজনীতিতে বিভিন্ন সময়ে রাজ্যের হয়ে দাবি জানিয়েছেন দমদমের এই তৃণমূল সাংসদ । এছাড়াও একাধিক দায়িত্ব ও পদ সামলেছেন তিনি ।
সাম্প্রতিক সময়ে সৌগত রায়ের গলায় শোনা গিয়েছে অন্য সুর । বিশেষ করে দলের আদি-নব্য নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি । সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা 2009-র আগে ছিলেন, তাঁদের গুরুত্ব দিয়ে দলের সংগঠন করতে হবে । সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনে যাঁরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদেরই প্রথম সারিতে থাকা উচিত ।’’
সেই সৌগত রায়ের গলাতেই এবার টিকিট না পাওয়া নিয়ে সংশয়ের সুর । বৃহস্পতিবার নিজের সংসদীয় এলাকা বরানগর পৌরসভার এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন সাংসদ সৌগত রায় । প্রকাশ্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, "আমার সাংসদ পদে 15 বছর পূর্ণ হতে চলল । এরপর কী হবে আমি জানি না । দল কাকে মনোনয়ন দেবে, যদি আমায় দেয় আমি জিততে পারব কি না, এগুলো সবই অনিশ্চয়তা । কিন্তু, আমি সবসময় মনে করি আমরা যা করি, তা যেন মানুষ মনে রাখে ।"
তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিরোধী শিবির । তাদের বক্তব্য, দমদমে প্রার্থী হলে হেরে যাবেন, সেই হতাশা থেকেই এই ধরনের মন্তব্য করেছেন সাংসদ সৌগত রায় ৷ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "উনি নানা ধন্দে রয়েছেন। ওঁর কাজকর্ম এখন দলের কেউ পছন্দ করছে না। মানছেও না কেউ। ওঁকে মানুষ একসময় অধ্যাপক হিসেবে পছন্দ করত। কিন্তু,যেদিন থেকে সৌগত রায়ের মতো মানুষকে হাত পেতে টাকা নিতে দেখেছে সেদিন থেকে ওর প্রতি ঘৃণা জন্মিয়েছে বাংলার মানুষের। তৃণমূল নেতাদের ঘৃণা করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। তাই এখন বিলাপ করে লাভ নেই। বরং হাঁটু গেড়ে বলা উচিত তৃণমূল দল করে অন্যায় করেছি। ভবিষ্যতে আর তৃণমূল করব না।"
আরও পড়ুন: