নয়াদিল্লি, 5 ফেব্রুয়ারি: সামনেই লোকসভা নির্বাচন ৷ তার আগে লোকসভায় দাঁড়িয়ে সরাসরি কংগ্রেসকে নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ কখনও কংগ্রেসের সমালোচনা করলেন, আবার কখনও কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধীদের মধ্য়ে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করলেন ৷ কটাক্ষ করে বললেন, কংগ্রেসের জন্যই বিরোধীদের আজ এত খারাপ অবস্থা হয়েছে ৷’’
প্রতিবছর বাজেট অধিবেশন শুরু হয় রাষ্ট্রপতির ভাষণ দিয়ে ৷ এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি ৷ গত 31 জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণ দিয়ে শুরু হয় এবারের বাজেট অধিবেশন ৷ পরদিন বাজেট পেশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ৷ তার পর শুরু হয় রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ জ্ঞাপন ৷ সেই প্রস্তাবে সোমবার বিকেলে লোকসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷
শুরু থেকেই বিরোধীদের নিশানা করতে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তাঁর ভাষণের বেশিরভাগটাই জুড়ে ছিল কংগ্রেসের সমালোচনা ও কটাক্ষ ৷ প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ‘‘আজ বিরোধীদের খারাপ অবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশি দোষ কংগ্রেসের ৷’’ তবে তিনি মনে করেন, ‘‘কংগ্রেসের সামনে ভালো বিরোধীরা হওয়ার সুযোগ ছিল ৷ 10 বছর কম সময় নয় ৷ কিন্তু ওরা ব্যর্থ হয়েছে ৷’’
এর পরই প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসের সঙ্গে অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ফাটল তৈরি করার চেষ্টা করেন ৷ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, কংগ্রেস নিজেদের স্বার্থে অন্য বিরোধীদের সরকার বিরোধিতায় সামনে এগিয়ে আসতে দেয়নি ৷ অন্য বিরোধীদের কোনও যুবনেতা সামনে উঠে এলে কংগ্রেসের ক্ষতি হত, তাই তারা এটা করেছে ৷
বিরোধী আসনে থাকার সংকল্প: এ দিনের ভাষণে সরাসরি বিরোধীদের উদ্দেশ্যে কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তিনি দাবি করেন যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বিরোধী আসনে দীর্ঘ সময় থাকার সংকল্প নিয়েছে ৷ তাই শুরুতেই তিনি কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘বিপক্ষ যে সংকল্প নিয়েছে, তার প্রশংসা করছি ৷’’
এর পর তিনি এবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ প্রস্তাবে বিরোধীদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ তোলেন ৷ তার পর বলেন, ‘‘ওদের (বিরোধী) ভাষণের প্রতিটি কথা থেকে বুঝেছি যে ওরা লম্বা সময়ের জন্য ওখানে থাকার সংকল্প নিয়েছে ৷’’ এর পর কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা কয়েক দশক ধরে যেমন এখানে (শাসকপক্ষে) বসেছিলেন, তেমনই ওদিকে (বিরোধী আসনে) বসার সংকল্প নিয়েছেন ৷ জনতা ঈশ্বরের রূপ, তারা আপনাদের নিশ্চয় আশীর্বাদ করবেন ৷ এখন যেখানে আছেন, তার থেকে আরও উপরে থাকবেন ৷ দর্শকদের আসনে চলে যাবেন ৷’’
প্রধানমন্ত্রীর আরও দাবি, ‘‘বিরোধীরা নির্বাচনে লড়ার সাহস হারিয়ে ফেলেছে ৷ আমি শুনেছি অনেকে আগেরবার আসন বদল করেছেন ৷ এবারও আসন বদলাবেন ৷ অনেকে রাজ্যসভায় যেতে চান লোকসভার বদলে ৷’’ তবে দেশে শক্তিশালী বিরোধী থাকা যে প্রয়োজন, সেই মতও ব্যক্ত করেছেন ৷
রাহুল গান্ধিকে কটাক্ষ: এ দিনের ভাষণে বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে রাহুল গান্ধিকে কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ তবে একবারও তিনি রাহুলের নাম উল্লেখ করেননি ৷ কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষ, ‘‘একটাই প্রোডাক্ট (রাহুল গান্ধি) বারবার লঞ্চ করার জন্য কংগ্রেসের দোকানে তালা পড়ার পরিস্থিতি চলেছে ৷’’ এখানে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে দোকান শব্দটি তিনি বলছেন না ৷ কংগ্রেস নিজেই বলছেন ৷ এক্ষেত্রে রাহুলের বলা ‘মহব্বত কি দুকান’-এর প্রসঙ্গ টেনেছেন ৷
দেশের উন্নতি নিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ: দেশের উন্নতি নিয়েও কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেছেন তিনি ৷ তাঁর দাবি, কংগ্রেস এত ধীর গতিতে কাজ করত যে তাঁর সরকার যে কাজ গত 10 বছরে করেছে, তা কংগ্রেস আমলে 100 বছর লেগে যেত শেষ করতে ৷ তাঁর আরও দাবি, কংগ্রেস আমলেই মুদ্রাস্ফীতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে ৷ কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকলেই দুর্নীতি বেশি হয়েছে ৷
অর্থনীতি নিয়ে কংগ্রেসকে এ দিন নিশানা করেন প্রধানমন্ত্রী ৷ মোদির দাবি, কংগ্রেস আমলে অর্থনীতি 11 নম্বরে পৌঁছানোর জন্য, সেটাকে নিয়ে গৌরব করা হত ৷ আর এখন অর্থনীতি 5 নম্বরে পৌঁছানোর পর সমালোচনা করা হয় ৷ তাঁর আরও বক্তব্য, সেই সময় বলা হয়েছিল যে 30 বছর সময় লাগবে ভারতীয় অর্থনীতির সারা বিশ্বে 3 নম্বরে পৌঁছাতে ৷ অর্থাৎ 2014 সাল থেকে 2044 সাল পর্যন্ত এটা সময় লাগার কথা ছিল ৷
যদিও সেটা তাঁর সরকারের তৃতীয় দফাতেই হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, পাশাপাশি কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে তিনি কটাক্ষ করেন, কংগ্রেস স্বপ্ন দেখার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে ৷
আরও পড়ুন: