মালদা, 4 মে: মানচিত্র বলছে, এই চর বাংলার ৷ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিধি চলে এখানে ৷ বাস্তবে চরের দখল ঝাড়খণ্ডের দুষ্কৃতীদের ৷ যারা স্থানীয় ভাষায় 'ঠিয়াপার্টি' (জলদস্যু) নামে পরিচিত ৷ আটের দশকে এই গদাই চরে ঠিয়াপার্টির গণধর্ষণের শিকার হন 13 জন মহিলা ৷ সেই ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য ৷ তারপর সবার চোখের আড়ালে চলে গিয়েছে দুর্গম এই চর গদাই ৷ মালদা শহর থেকে প্রথমে মানিকচক, তারপর সেখান থেকে 23 কিলোমিটার দূরে গঙ্গার শুকসেনা ঘাট ৷ নৌকায় আরও ঘণ্টা তিনেক ৷ গদাইয়ের মাটিতে নেমে দেড় কিলোমিটার হাঁটলে দেখা মিলবে গ্রামের ৷ এত ঝক্কি সামলে প্রশাসনের লোকজনেরও চরে তেমন পা পড়ে না ৷ পা দেন না জনপ্রতিনিধিরাও ৷ চরবাসী সরকারি উন্নয়ন দেখেন শুধু নথিতে ৷ তবু আগামী 7 মে চরের দু'টি বুথে ভোট দেবেন 1400 মানুষ ৷
গদাই চর বাংলার অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও এই ভূখণ্ডকে বারবার নিজেদের বলে দাবি করে এসেছে পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড ৷ চরের বেশ কিছুটা অংশ প্রতিবেশী রাজ্যের দখলে ৷ তবে এখানে থাকা দু'টি বুথ এখনও বাংলার মধ্যে রয়েছে ৷ সমস্যা মেটাতে বেশ কয়েকবার দুই রাজ্যের প্রশাসনিক বৈঠকও হয়েছে ৷ কিন্তু বৈঠকের সিদ্ধান্ত এখনও প্রকাশ্যে আনেনি কোনও সরকার ৷ এই চর খাতায় কলমে মানিকচক ব্লকের হীরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ৷
গদাই চরে দুই রাজ্যের বাসিন্দাই বসবাস করেন ৷ রাস্তাঘাট নেই ৷ সূর্য অস্ত গেলে এখনও গ্রামে ঘুটঘুটে অন্ধকার ৷ বিদ্যুৎ নেই ৷ একটি প্রাথমিক স্কুল থাকলেও শিক্ষকদের দেখা পাওয়া দুষ্কর ৷ হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা কারও প্রসব যন্ত্রণা উঠলে হাসপাতালে আনতে সময় লাগে অন্তত ছ’ঘণ্টা ৷ হাইস্কুলে পড়তে গেলে সেই সময় বেড়ে দ্বিগুন ৷ চরবাসীর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা ৷ এই ডিজিটাল যুগেও সেখানে ভালো মতো মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না ৷ ইন্টারনেট তো অনেক দূরের বিষয় ৷
চরের বাসিন্দা বিদ্যুৎ ঘোষ বলেন, "গদাইয়ের প্রায় সবাই গো-পালক ৷ এই গ্রামে 40 বছরেরও বেশি সময় ধরে বাস করছি ৷ এখনও পর্যন্ত সরকারি উন্নয়নের ছিটেফোঁটা দেখিনি ৷ গ্রামে কিছুই নেই ৷ একটা প্রাইমারি স্কুল আছে বটে, দু'জন শিক্ষকও আছেন ৷ কিন্তু তাঁরা স্কুলে আসে না ৷ আসবেই বা কীভাবে!" সেইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "এত ঝক্কি সামলে প্রতিদিন গ্রামে যাওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয় ৷ যোগাযোগ ভালো না-থাকায় গ্রামের ছেলেমেয়েরা হাইস্কুলে যেতে পারে না ৷ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে কতজন যে মারা গিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই ৷ প্রশাসনের কেউ গ্রামে আসে না ৷ জনপ্রতিনিধিদেরও দেখা পাওয়া যায় না ৷ তবু আমরা ভোট দিই ৷ গণতান্ত্রিক অধিকার বলে কথা !"
ভোটের মুখে গদাই রাজনৈতিক চাপানউতরের অন্যতম মঞ্চ ৷ দক্ষিণ মালদার বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর অভিযোগ, "সিপিএম আর তৃণমূলের জন্যই গদাই চরের এই দশা ৷" যদিও সিপিএমের জেলা নেতা দেবজ্যোতি সিনহার দাবি, "গদাই চরের যেটুকু উন্নয়ন হয়েছে, তা বাম আমলেই ৷ প্রাথমিক স্কুলটাও সেই আমলে তৈরি করা হয়েছিল ৷" মানিকচক ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মহাফিজুর রহমানের দাবি, "ভৌগলিক অবস্থানের জন্য এখনও গদাইয়ে বিদ্যুৎ পৌঁছনো যায়নি, সেটা ঠিক ৷ কিন্তু চরবাসীরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার-সহ সমস্ত সরকারি সহায়ক প্রকল্পের পরিষেবা পান ৷"
আরও পড়ুন: