কলকাতা, 4 জুন: ফের খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে সিপিএমকে । 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে একটিও আসনে জয়লাভ করতে পারলেন না বাম প্রার্থীরা। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসনে পরাজিত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে গণনা পর্ব শুরু হওয়ার পর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে টিভির পর্দায় নজর ছিল বেশ কয়েকজন নেতার । বিশেষ করে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর ৷ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের মুজফফর আহমদ ভবনের চতুর্থ তলায় নিজের ঘরে সংবাদমাধ্যমের পর্দায় চোখ রেখেছিলেন তিনি । সূত্রের দাবি, এক বারের জন্যও তিনি নীচে নামেননি । অন্যদিকে, শমীক লাহিড়ী, রবিন দেব, প্রমুখ নেতারাও টিভি এবং মোবাইলের পর্দায় ভোটের ফলাফলের একভাবে নজর রেখেছিলেন । কিন্তু বেলা বাড়তেই কার্যত স্পষ্ট হয়ে যায় এবারও তাঁদের ঝুলি 'শূন্য' থাকবে ।
বেলা তিনটের পরে শমীক লাহিড়ী, রবিন দেব-রা পার্টির রাজ্য দফতর ছেড়ে নিজেদের কাজে রওনা দেন । মঙ্গলবার দিনভর পার্টি অফিসের পরিস্থিতি ছিল এক প্রকার শুনশান। হাতেগোনা কয়েকজন গাড়িচালক এবং পরিচারক ছাড়া পরিচিত কোনও নেতার আনাগোনা আলিমুদ্দিনে দেখা যায়নি। অথচ ভোট প্রচার পর্ব এবং ভোট গ্রহণ পর্ব চলাকালীন অনেক নেতা অন্তত একটি দু'টি আসনে দলের জয় নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন ৷
গণনা শুরুর প্রথমদিকে মুর্শিদাবাদ লোকসভা আসনে সিপিএম প্রার্থী খানিক পিছিয়ে থাকার পর হঠাৎ করেই প্রথম দু-তিন রাউন্ডে এগিয়ে যান। ফলে আশার আলো দেখতে পান সমর্থকরা ৷ এরপর তাঁর পিছিয়ে পড়ার পর্ব শুরু হয়ে যায় ৷ গণনার শেষ পর্যন্ত ভোটের ব্যবধান আর কমাতে পারেননি সেলিম ৷ একইভাবে দমদম, শ্রীরামপুর, যাদবপুর লোকসভা আসনগুলিতে ধারাবাহিকভাবে সিপিএম প্রার্থীরা কখনও দ্বিতীয় বা কখনও তৃতীয় স্থানে উঠে আসেন। কিন্তু প্রথমস্থান অধরাই রয়ে যায় ৷
উত্তর 24 পরগনার বসিরহাট লোকসভা আসন নিয়ে আইএসএফ, সিপিআই এবং সিপিএমের মধ্যে টানাপোড়েন ছিল প্রথম থেকে । শেষ পর্যন্ত আইএসএফ এবং সিপিআইকে বাদ দিয়ে সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে প্রার্থী করে বামেরা। দিনের শেষে দেখা যায় সেই নিরাপদ সর্দার চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন । প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে এই আসনে তাঁকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন আইএসএফ প্রার্থী আক্তার রহমান বিশ্বাস ৷ এই নির্বাচনে তাঁর প্রাপ্ত ভোট 1 লক্ষ 23 হাজার 432টি ৷ সিপিএমের নিরাপদ সর্দার পেয়েছেন 77 হাজার 611টি ভোট ।
অন্যদিকে, কংগ্রেসের সঙ্গে এবারে বামেদের আসন সমঝোতা হয় এ রাজ্যে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় কংগ্রেস মাত্র একটি আসনে জয়লাভ করেছে । প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের পাঁচবারের সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী, তিনিও তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠানের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে এই রাজ্যে ফের বাম-কংগ্রেসের প্রাসঙ্গিকতা এবং তাদের নির্বাচনী সমঝতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে । সূত্রের খবর, বিধান ভবন এবং আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা ভোটের ফলাফল নিয়ে কাটাছেঁড়া পর্ব শুরু করবেন খুব শীঘ্রই। অবশ্য মহম্মদ সেলিম এবং অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে নিজের দলের কাছে ভোটের এই ফলাফল নিয়ে জবাবদিহি করতে হবে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহল মহলের একাংশ ।