মালদা, 30 জানুয়ারি: চব্বিশের নির্বাচনে কেন্দ্রের ক্ষমতা থেকে বিজেপিকে উৎখাত করতে তৈরি হয়েছিল ‘ইন্ডিয়া’ জোট ৷ বিজেপি বিরোধী প্রতিটি রাজনৈতিক দলকেই সেই জোটে সামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল ৷ কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই জোটে জট শুরু হয় ৷ জোট ছেড়ে ইতিমধ্যেই বিজেপির হাত ধরেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ৷ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন মন্তব্যে কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দলের দূরত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছেন ৷
এই পরিস্থিতিতেই আগামিকাল বুধবার মালদায় ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়ে প্রবেশ করছেন রাহুল গান্ধি ৷ একই দিনে মালদায় কর্মসূচি রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও ৷ দু’জনের মধ্যে দেখা বা কথা হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই ৷ তবে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হওয়ার সুযোগটা আসন্ন নির্বাচনের মুখে লুফে নিয়েছে সিপিআইএম ৷ এই মুহূর্তে দুই দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ছে ৷ তাই আগামিকাল মালদায় রাহুল গান্ধির কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকছেন শতরূপ ঘোষ ও সোমনাথ ভট্টাচার্য ৷ বৃহস্পতিবার রাহুলের ন্যায় যাত্রায় যোগ দেবেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও সুজন চক্রবর্তী ৷ সিপিআইএম নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মালদা জেলা কংগ্রেস ৷
উল্লেখ্য, 2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনে মালদা জেলাতেই প্রথম কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের জোট গঠিত হয়েছিল ৷ তার ফলও মিলেছিল ৷ সেবারের ভোটে এই জেলায় কোনও আসন দখল করতে পারেনি ঘাসফুল ৷ পরবর্তীতে অবশ্য শাসকদল এই জেলায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে ৷ গত বিধানসভা নির্বাচনে জেলার 12টি আসনের মধ্যে আটটিই দখল করেছে তারা ৷ কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনে জেলার দু’টি আসনই তাদের হাতছাড়া হয়েছে ৷ এই অবস্থায় এবারের লোকসভা নির্বাচন ঘাসফুল শিবিরের কাছেও অ্যাসিড টেস্ট ৷
প্রথমে শোনা গিয়েছিল, বুধবার রাহুলের ন্যায় যাত্রায় অংশ নেবেন সুজন চক্রবর্তীও ৷ কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক উপলক্ষ্যে এই মুহূর্তে সেলিম-সুজনরা কেরালায় রয়েছেন ৷ তাঁদের অনুপস্থিতিতে আগামিকাল রাহুল গান্ধিকে সঙ্গে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শতরূপ-সোমনাথকে ৷
আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই কি এই সিদ্ধান্ত ? কেরালা থেকে ফোনে সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ইটিভি ভারতকে বলেন, “আমাদের যুবরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইনসাফ যাত্রা করেছিল ৷ এখন যারা সাধারণ মানুষের দাবি আদায়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, পথে নামছে, আমরা তাদের সঙ্গ দেব ৷ কারণ, একদিকে রয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অন্যায় অত্যাচার, অন্যদিকে এরাজ্যে তৃণমূলের অবাধ চুরি, দুর্নীতি ৷ খেয়াল করলেই দেখা যাবে, যারা এই চুরি, দুর্নীতি করছে, তারা কিন্তু এই ন্যায় যাত্রায় নেই৷ তারা একদিকে সরে যাচ্ছে ৷”
জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ভূপেন্দ্রনাথ হালদার সিপিআইএম নেতৃত্বের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বিজেপি বিরোধী প্রতিটি রাজনৈতিক দলকেই একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন ৷ কেন্দ্রের স্বৈরাচারী বিজেপি সরকারকে উৎখাত করতেই তিনি সেই ডাক দেন ৷ অনেক দলই তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে ইন্ডিয়া জোটে সামিল হয়েছে ৷ কিন্তু যারা স্বার্থাণ্বেষী, তারা জোটের দায়বদ্ধতা মানতে রাজি নয় ৷ সিপিআইএম নেতৃত্ব রাহুলজির ন্যায় যাত্রায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ তাদের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি ৷”
আরও পড়ুন: